শেষ মুহুর্তে কেনাকাটার ধুম; ভাড়ায় নৈরাজ্য সিএনজি চালকদের
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৪৩ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রোববার
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর নতুন শহর প্রকল্পের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮ তম আসর। ১০ ফেব্রুয়ারী ছুটির দিন শনিবার লোকারণ্য ছিলো কানায় কানায়। রেকর্ড সংখ্যক উপস্থিতি দেখা গেছে আজ। এ মেলা ঘিরে সব রকম পন্যের স্টলে ভির আর বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে । ফলে মেলার আশপাশ এমনকি পুরো পূর্বাচলে দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
তবে ঢাকা বাইপাস সড়কে যানজটের অযুহাতে সিএনজি চালকরা দিগুন, তিনগুন ভাড়া আদায় করছে। ২০ তম দিন শনিবার বিকালে মেলা ঘুরে দেখা যায়, নিত্য পন্য ছাড়াও ইলেক্ট্রনিক পন্যের পাশাপাশি নামীদামী প্রতিষ্ঠানের ফার্নিচারের সমাহার। এসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ছাড় দেয়ায় ক্রেতার সংখ্যদ বেড়েছে বহুগুণ । দর্শনার্থীদের মাঝে অনেকে ক্রয় করছেন আবার চাহিদামতো ডিজাইন ধরনের দিক বিবেচনায় অর্ডার করছেন কেউ কেউ।
মেলার প্রবেশদ্বার ঠিকাদার ছালাউদ্দিন ভুইয়া বলেন, সব সময় মেলার শেষের দিকে জমে ওঠে বেশি। লোকজনের উপস্থিতি ভালো হয়। শুধুমাত্র এমন জমজমাটের আশায় আমরা ঠিকাদাররা অপেক্ষায় থাকি। নয়তো লোকসানের আশঙ্কা থাকে।
মায়ারবাড়ি এলাকার সিএনজি চালক অনিক বলেন, শুক্র ও শনিবার মেলার কারনে যানজট লেগে থাকে। তাছাড়া ঢাকা বাইপাস সড়কে ৮ লেনের কাজ চলমান। ফলে এ সড়কের গোলাকান্দাইল মোড় থেকে বাণিজ্য মেলা পর্যন্ত প্রায়ই যানজট থাকে। আমাদের এখানকার নিয়মিত ভাড়া হলো ৩০ টাকা। কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকতে হয় বিধায় ১ শ করে ভাড়া নেই।
এদিকে মেলায় যমুনা পণ্যের স্টলে নতুন মডেলের বাইক এসেছে। যাতে ১২ ভাগ ছাড় দেয়ার কথা জানিয়েছেন স্টল সংশ্লিষ্টরা। তারা জানায়, ছাড় দেয়ার উদ্দেশ্য হলো পন্যের প্রচার বাড়ানো।
মেলায় ঘুরতে আসা পাঁচাইখার বাসিন্দা ব্যবসায়ী রহুল আমীন বলেন,মেলায় আমরা যারা ঢাকা বাইপাস সড়ক হয়ে যাতায়াত করি তারা ধুলোবালির ভোগান্তিতে পড়ি। তাছাড়া যানজট থাকে। এসব কারনে মেলায় যাতায়াত পরিবেশ ভালো নয়। তবে রাজধানী থেকে যারা আসে তারা শেখ হাসিনা সরণি দিয়ে ভালোমতো আসতে পারছে। তবে মেলার এক প্রাচীরে শত শত বাহারী পন্যের স্টল থাকায় মনমতো পণ্য বেছে নিতে পারছি। এবারের মেলা আগের তুলনায় জমজমাট।
মেলার ব্যবসায়ীদের দাবী, দর্শনার্থীদের উপস্থিত বাড়ায় বিক্রি বেড়েছে। তবে বিক্রিই উদ্দেশ্য নয়। পন্যগুলো বিক্রির চেয়ে প্রদর্শনীতেই প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে বিক্রি ভালো হচ্ছে। তারা আশাবাদী বেশি বিক্রির রেকর্ড করার।
কথা হয় দেশীয় পন্যের স্লোগান দেয়া প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের সহকারী প্রধান (কর্পোরেট এন্ড সেল) আনোয়ার কবীর কাননের সঙ্গে। তিনি বলেন, লোকজন আমাদের কাছ থেকে এবার ফ্যান ও এসিই বেশি ক্রয় করছেন। তাছাড়া আমরা ছাড় দেয়া শুরু করেছি। ফলে ভালো সারা পাচ্ছি।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, একইভাবে নিত্য পন্যের স্টলগুলোতেও কোথাও ২৫ ভাগ, কোথাও ১৫ ভাগ ছাড়ের হাকডাক করতে দেখা গেছে। তবে এসব স্টলের পন্যের ছাড় নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ ছিলো ভয়ঙ্কর।
মেলায় ঘুরতে আসা লক্ষীপুর জেলার রামগতির বাসিন্দা সোহেল পাঠান বলেন, মেলায় পন্যের মূল্য ছাড়ের আশায় আসলাম। তবে ভিরের কারনে দামাদামি করার সুযোগ হয়নি। তবে ভির না ঠেলে সরকারী ছুটির দিন ছাড়া আবার আসবো।
এ সময় তিনি আরও বলেন, মেলায় ছাড় দেয়ার নামে প্রতারণা চলছে। এসব পণ্যের গায়ের দামের চেয়ে বেশি দেখিয়ে ছাড় বলে চালাচ্ছে। সরকারি ছুটির দিন শনিবার হওয়ায় দুপুর থেকেই দর্শনার্থীদের ভীড় দেখা গেছে মেলায়। তবে মেলার বাইরে পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে করা হয়েছে অস্থায়ী খাবার হোটেলসহ নানা পন্যের পসরা। মেলার ভেতরে থাকা খাবার হোটেল থেকে কমদামে বিক্রি করছে।
আর তাই দর্শনার্থীদের একটা অংশ খাবার খাচ্ছেন মেলার বাইরে থেকে। মেলায় প্রবেশের দক্ষিণ, পশ্চিম পাশে করা হয়েছে শতাধিক খাবার হোটেল। পাশাপাশি খোলা খাবার বিক্রির জন্য রয়েছে ভাসমান হকার।
সূত্র জানায়, এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারনে ১লা জানুয়ারির পরিবর্তে ২১ জানুয়ারি শুরু হওয়ায় প্রথম দিকে কিছুটা দর্শনার্থী কম ছিলো। তবে মেলার ২য় সপ্তাহ থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতা ও দর্শনার্থী। এতোদিন ব্যবসায়ীরা বিক্রি কমের কথা জানালেও আজ তারা বলেছেন বিক্রি বাড়ার কথা। উল্লেখ্য যে, গত ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন পূর্বাচলের স্থায়ী ভ্যানুতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।
ব্যবসায়ীরা আশায় রয়েছেন সরকারি ছুটির দিনের। সূত্রমতে, এবারের মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩০টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন অংশ নিয়েছে । যার মধ্যে রয়েছে ১৩টি বিদেশি স্টল । এ ছাড়া স্থানীয় উদ্যোক্তারাও তাঁদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির স্টল সাজাচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে এ মেলায় এবার ৫শ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাবেন জানিয়েছেন ইপিবি। এন. হুসেইন রনী /জেসি