ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:২৪ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার
উত্তর রূপগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার তুমুলিয়া ও নাগরী ইউনিয়নের ২২৭০ হেক্টর কৃষি জমির পানি সেচ সুবিধা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণকল্পে একটি স্লুইসগেট স্থাপন করা হয় ১৯৮৬ সালে। এ স্লুইসগেটটি কালীগঞ্জ-উত্তর রূপগঞ্জ সেচ প্রকল্প হিসেবে পরিচিত।
প্রকল্পটিতে স্থানীয় কৃষকেরা উক্ত জমিতে ধানসহ বিভিন্ন সব্জির চাষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে সুফল পাচ্ছে। তবে সম্প্রতি প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুদের ছঁত্রছায়ায় একটি মাটি চোর সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে।
তারা দিনে দুপুরে পাউবোর খাল ও এর পাড়ের জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে স্থানীয় ইটভাটায়। প্রকাশ্যে বেকু দিয়ে মাটি কাটলেও রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের নিরব ভূমিকায় জনমনে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দাউদপুরের কামালকাটি মৌজায় একটি কিশোর গ্যাং মাটি চুরির মতো অপকর্মে লিপ্ত। এ বাহীনির নেতৃত্বে রয়েছে খাস দাউদপুরের ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে আরিফ ও তার সহোদর ভাইসহ ১০ থেকে ১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যরা হলো সাজিদ,আবু হামজা,ইয়াসিন, আকরাম।
তাদের প্রত্যেকের বাড়ি খাস দাউদপুর। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দুটি বেকু। এসব বেকু দিয়ে দিনে দুপুরে মাটি কেটে বিক্রি করে করে স্থানীয় প্রায় ৩০ টি ইট ভাটায়। এসব ভাটা মালিকরা কমদামে এসব মাটি ক্রয় করে। পরে ওইসব মাটি দিয়ে ইট তৈরী করেন। অভিযুক্তদের মাঝে ইয়াসিন বলেন, আমরা টাকা দিয়ে মাটি ক্রয় করি। সরকারী কিনা জানিনা। চুরি আবার কি?
স্থানীয় জমি মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ফসল ফলানোর মতো মাটি নাই। জমিতে চাষাবাদ করতে দেয় না ভাটা মালিকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা চোর সিন্ডিকেটের সদস্যর্যা। ফলে টপ সয়েল কেটে নেয় তারা। ব্যক্তিগত মালিকানার জমিতে নামেমাত্র দাম দিলেও সরকারি জমির মাটি কাটায় কাউকে টাকা দেয় না তারা।
তবে মাঝে মাঝে ওই চোর সিন্ডিকেটের সাথে দেখা করে ভোলাবো তদন্ত কেন্দ্রের কতিপয় পুলিশ সদস্য। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে কিংবা ভূমি অফিসের কাউকে মাটি রক্ষায় মাঠে দেখা যায়না।
পাউবোর জমি থেকে মাটি কাটায় খালগুলো যত্রতত্র খানাখন্দের ও ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা ব্যক্তিগতভাগে স্যালুমেশিনের সাহায্যে পুকুর থেকে পানি তুলে সেচকাজ করেন। এভাবে বাধ্য হয়ে স্থানীয় কৃষকরা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
এদিকে পাউবোর জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে কৃষকের সোনা ফলা দুফসলি জমিতে। সময়মত পানি না পেলেই কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে।
কৃষকদের অভিযোগ পানি সরবরাহকারী কমিটি ও অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পাউবোর খাল ও এর আশপাশ সরকারী জমির মাটি কাটার ধুম পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা একে একে জনবহুল এলাকায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে দখল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রথমে প্রভাবশালীর অর্থ ব্যয়ে পাউবোর খালের উপর পাকা স্থাপনা গড়ে এগুলো স্থানীয় নিরীহ ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। এসব ভাড়ার বড় একটি অংশ প্রভাবশালীদের পকেটে রেখে বাকি টাকা দিচ্ছে পাউবো কর্মকর্তা ও কতিপয় কর্মচারীদের। এসব অর্থের ভাগবাটোয়ারা কাজে রয়েছে পানি সরবরাহকারী কমিটির সভাপতি ও তাদের নিয়ন্ত্রিত একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী।
অভিযোগ রয়েছে কর্তারা অফিস না করে নরসিংদী সেচপ্রকল্পে বসেই পরিচালনা করেন রূপগঞ্জ-কালীগঞ্জ সেচপ্রকল্প। অন্যদিকে পাউবোর অধীনে খালগুলোর উপর যত্রতত্র স্থাপন করা হয়েছে কালভার্ট।
যার বেশিরভাগেরই অনুমোদন নেই পাউবো কর্তৃপক্ষের। একই খালের একোয়ার করা জমিতেই পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে দখল নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এসব বিষয়ে অভিযুক্ত পানি সরবরাহকারী কমিটির সভাপতি মোবারক হোসেন বলেন, স্থানীয় কৃষকের জমিতে নিয়মিক সেচ দেয়া হচ্ছে।
আবার খালগুলোর উপর যত্রতত্র স্থাপন করা হয়েছে কালভার্ট। যার বেশিরভাগেরই অনুমোদন নেই পাউবো কর্তৃপক্ষের। একই খালের একোয়ার করা জমিতেই পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
বেলদী বাজার এলাকা থেকে শুরু করে খৈসাইর, দাউদপুর, কামালকাটি, কলিঙ্গা, দড়িসোমসহ প্রায় ১০টি অনুমোদনহীন বাজারে পাউবোর খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে এসব এলাকার ফসলি জমিতে পানি সেচ কাজের বিঘ্ন ঘটছে। তাই সময়মত ভাল ফলন পাচ্ছেন না কৃষক।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, অবৈধ দখলদার, মাটি চুরিসহ নানা অপকর্মের বিষয়ে একটি তালিকা করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ ও রূপগঞ্জ থানায় পৃথক পৃথক মামলা করা হয়েছে জেনেছি। অনেককে নোটিশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ । অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এন. হুসেইন রনী /জেসি