হকার ইস্যুতে আবারও গরম হচ্ছে না.গঞ্জ
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:১৮ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বুধবার
# তিন ভাই-বোনের বৈঠকে আশান্বিত হয়েছে জনগণ, চায় বাস্তবায়ন
# স্বস্তি নাকি আশঙ্কা বুঝতে পারছে না নারায়ণগঞ্জবাসী
# হকারদের মধ্যে যারা না’গঞ্জের নাগরিক, তাদের পুনর্বাসন নিয়ে ভাবছেন ডিসি
# আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যা লাগে তাই করবো : আসাদ
ফুটপাতে হকার বসানো এবং না বসানো নিয়ে নারায়ণগঞ্জে সর্বোচ্চ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারিতে। এ সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর সরাসরি হামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ছিল। তারপর থেকে হকার, পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে আর কোন সমঝোতা বা কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। একদিকে নিজেদের ইচ্ছে মতো ফুটপাত দখলে ব্যস্ত ছিল হকারগণ।
অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনও তাদের মনমতো করে মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতেন। অর্থাৎ এই দুই পক্ষের এই দুই কর্ম ছিল অনেকটা রুটিন কর্মের মতো। এ সময় এখানকার জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন অনেকটা নীরব ভূমিকায়। আর এই তিনপক্ষের বাইরের লোক অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জবাসী ছিলেন একদিকে দর্শকের ভূমিকায় অন্যদিকে ঘটনার শিকার। তাদের এই ভোগান্তির নিস্তারে কোন এক অলৌকিক ঘটনার অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
নারায়ণগঞ্জবাসীর মতে, সেই অলৌকিক ঘটনা হলো নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী দুই এমপির (নারায়ণগঞ্জ-৪ এর শামীম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ এর সেলিম ওসমান) সাথে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর এই বিষয়টি নিয়ে এক টেবিলে বসা। শেষ পর্যন্ত সেটাও হলো। প্রশাসনকে সাথে নিয়ে এক টেবিলে বসলেন নারায়ণগঞ্জের এই প্রভাবশালী তিন ব্যক্তি। এর আগে নারায়ণগঞ্জবাসী ও সচেতন মহলের একটি বড় অংশই মনে করতেন এই তিন প্রভাবশালী সমঝোতার মাধ্যমে একমত হয়ে একটি ঘোষণা দিতে পারলে সেটা বাস্তবায়ন সহজ হয়ে যাবে। শেষে সেই ঘোষণাও এলো।
আশান্বিত হলো নারায়ণগঞ্জবাসী, ফল পেতে শুরু করলেন পরের দিন থেকেই। তবে হকাররাও কেন কোন যুদ্ধ ছাড়াই মাঠ ছেড়ে দিবেন! ঘোষণা দিলেন তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যা লাগে তা-ই করবে তারা। আবারও শুরু হতে যাচ্ছে আন্দোলনের পরিবেশ। এমপি, মেয়র ও প্রশাসন বিচক্ষণতা ও দৃঢ়তার সাথে কোন সিদ্ধান্তে আসতে না পারলে আবারও একটি ১৬ জানুয়ারি পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
শহরের বাবুরাইল এলাকার গৃহিণী ছামসুন্নাহার বলেন, হকারদেরও পরিবার আছে সেটা সবাই বুঝে। সে জন্য তাদের প্রতি আমাদেরও সহানুভূতি আছে। কিন্তু তারা যেভাবে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করে তা খুবই ভয়াবহ। কারও কোন ইমার্জেন্সী কারণে দ্রুত হেটে একশত ফুট জায়গা পার হওয়ারও উপক্রম নেই। তারা পুরো ফুটপাত নিজেদের দখলে নিয়ে ব্যবসা করে। কেউ তাদের একটু সরে দাঁড়াতে বললে তাদের সাথে অশোভন আচরণ করে।
এমন একটা ব্যবহার করে যে, এই ফুটপাতে যেন তাদের ক্রেতা ছাড়া অন্যকোন সাধারণ মানুষের চলাচলের কোন অধিকারই নেই। তাছাড়া দশ বছর আগে এখানে হকারের সংখ্যা যা ছিল এখন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এখন তাদের পূণর্বাসন করার পর ভবিষ্যতে এখানে আবার নতুন কোন হকার এসে বসবে না এর গ্যারান্টি কে দিবে? আসলে এই পদ্ধতিতে ব্যবসা করাটাকে তারা একটি সহজ উপায় বলে মনে করে। তাই যতই তাদের জায়গা করে দেন না কেন কোন লাভ হবে না। যতদিন প্রশাসনের চাপ থাকবে ততদিন হয়তো ঠিক থাকবে, চাপ শেষ তো তাদের নিয়ম নীতিও শেষ।
চাষাঢ়ার শহীদ মিনারে হকারদের অবস্থান কর্মসূচীর সময় শহীদ মিনারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আনোয়ারুল আলম বলেন, ৩ তারিখের মেয়র এমপি এবং প্রশাসনের গোলটেবিল বৈঠকের পর আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী অনেকটাই আশান্বিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম অনেক দিন পর নারায়ণগঞ্জবাসীর একটি স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আমাদের কাছে হকার উৎখাত কোন বিষয় না, তাদের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। কিন্তু আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী চাই শহরের অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কটি দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে। এটা আমাদের অধিকার। হকাররা তাদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জবাসীকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে, সেটা হতে পারে না।
এরই মধ্যে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে উচ্ছেদের প্রতিবাদে ও পুনর্বাসনের দাবিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করেন হকাররা। এই সময় তারা জেলা প্রশাসকের নিকট একটি স্মারকলিপিও পেশ করেন। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি চাষাঢ়া শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হকারদের এক অবস্থান কর্মসূচীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা হকার্স সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আসাদুল ইসলাম আসাদ বলেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি যখন প্রেস ক্লাবের গোল টেবিল বসানো হয়েছিল। আমরা অনেক আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম।
আমরা ভেবেছিলাম নগরবাসীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। আমাদেরও বুঝি ভাগ্য নির্ধারণ হবে। মেয়র আইভী ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের কথায় আমরা হতাশ হলাম। সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বক্তব্য দেওয়ার আগে আমরা ভেবেছিলাম, ওনি হয়তো আমাদের জন্য কিছু করবেন। কারণ উনি এতদিন গরীবের পক্ষে কথা বলেছেন।
কিন্তু উনার কথা শুনে আরও হতাশ হয়ে গেলাম। আমি জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অনুরোধ করে বলতে চাই, আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট সময় বসতে দিন। যদি পুনবার্সন করতে না ডাকেন, আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যা লাগে তাই করবো। যে পর্যন্ত আমাদের দাবি পুরণ না হয় আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে একসাথে বসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। সেই বৈঠকে তারা তিনজনই শহরের প্রধান দুই সমস্যা হিসেবে যানজট ও ফুটপাতে হকার বসার বিষয়ে সমাধান করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দেন। এরপরের দিন শহরের চেহারাই বদলে যায়। যেন আচমকাই গায়েব হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জবাসীর এই চরম ভোগান্তির সমস্যা। তবে এরপর থেকে হকারদের আবারও ফুটপাত দখলের চেষ্টায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তারা তাদের অধিকার আদায়ে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে অন্যথায় বিকল্প উপায়ের ঘোষণা দেয়।
সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ এর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক হকারদের আগামী রবিবারের মধ্যে আইডি কার্ড ও মোবাইল নম্বরসহ তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, যারা নারায়ণগঞ্জের হকার, নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা তাদের তালিকা চেয়েছি। আমরা যাচাই-বাছাই করে কতজন নারায়ণগঞ্জের নাগরিক রয়েছে, তাদেরকে কিভাবে পুনর্বাসন করা যায় তা নিয়ে ভাবছি। এস.এ/জেসি