মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১   ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রোগী মেরে উধাও হাসপাতালের কর্মকর্তারা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০১:০৯ এএম, ১২ মার্চ ২০২৪ মঙ্গলবার

নগরীর খানপুর হাসপাতালের পাশেই আল-হেরা নামক একটি হাসপাতালে টনসেলের ভূল চিকিৎসায় মোস্তাকিম (৮) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রবিবার (১০ মার্চ) খানপুর কাজীপাড়া বটতলা আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।

 

নিহত শিশু মোস্তাকিম (৮) সদর উপজেলার ফতুল্লা থানধীন বক্তাবলী মধ্যনগর এলাকার রমজান আলীর ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। এদিকে অপারেশন শেষে বাচ্চার জ্ঞান আর ফিরেনি বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে অপারেশন থিয়েটারে মরদেহ ফেলেই ডাক্তার, নার্সসহ ক্লিনিকের বাকি কর্মকর্তারা সবাই পালিয়ে যায়।

 

যাকে ঘিরে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসা ও অবহেলায় শিশু মোস্তাকিমের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের মালিকপক্ষের একজন বার বারই বলতে থাকে ছোট বাচ্চাকে ময়না তদন্ত করলে কেমন দেখায় স্বজনদের নানা ভয় দেখিয়ে প্রশাসনিক অভিযোগ ছাড়াই কিছু অর্থের বিনিময়ে রফাদফা হয়ে যায় নিহত মোস্তাকিমের মরদেহ।

 

ঘটনাস্থল থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ টিনসিল সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন মোস্তাকিম পরর্তীতে তাদের বক্তাবলীর আত্মীয় আল-হেরা হাসপাতালের মালিক পক্ষেরই একজন কবিরের পরামর্শে আরেক পার্টনার বাবুলের সাথে যোগাযোগ করেন নিহতের বাবা রমজান মিয়া পরে গত শনিবার সকালে খানপুর এলাকার আল-হেরা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মোস্তাকিমকে।

 

পরবর্তীতে বিকাল (৫ টায়) আল-হেরার পাশেই গ্যাস্ট্রোলিভ ডায়াগনস্টিক হাসপাতালের চেম্বারকৃত ভারাটে ডাক্তার ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধায়নে টনসিলের আপারেশন হয় বলে জানা গেছে।

 

এ ছাড়া নানা আলোচনার প্রেক্ষিতে আরো শোনা গেছে, নিহত মোস্তাকিমকে যখন প্রথম অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয় তখন কোন প্রকারের পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করেই ওটি করতে ডুকালে তার স্বজনরা নানাভাবে চিল্লাফাল্লা শুরু করেন। এতে করে ডাক্তার দ্রতু এক্সরে ও একটি রক্ত পরীক্ষা লিখে দেন পরবর্তীতে সেগুলো করে তাকে আবারো ওটিতে ডুকানো হয়।

 

এরপর আর মোস্তাকিমের সারা শব্দ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করছেন রোগীর অনেক স্বজনরা। পরদিন সকালে রোগীর স্বজনরা অপারেশন থিয়েটারে নিহত মোস্তাকিমের দেহ পরে থাকতে দেখে কিন্তু উনি যে মারা গেছেন নাকি জিন্দা আছেন এমনটা জানা নেই কাউর।

 

এমনকি রোগীর ডাক্তারের যত কাগজপত্র রয়েছে সেগুলো একটি ও হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সকালে নানা মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে অনেকেই হাসপাতালে গেলে নিহতের লাশ সেই অপারেশন থিয়াটারেই পাওয়া যায়।

 

মরদেহ ফেলেই ডাক্তার, নার্সসহ ক্লিনিকের বাকি কর্মকর্তাদের আর দেখা যায়নি। সর্বনিম্ন প্রায় ৬/৭ ঘন্টা খালি অবস্থায় পরে থাকে। যা নিয়ে বাকি ভর্তিকৃত রোগীরা বিব্রত অবস্থায় পরেন।

 

এদিকে আশে-পাশের স্থানীয়রা জানান, এই আল-হেরা হাসপাতলটি একটি ফ্যামিলি বাসায় স্থাপিত হয়েছে। যাকে ঘিরে যখন এটা স্থাপিত হয় তখন লাইসেন্সের বিষয়ে সিভিল সার্জন, সিটি কর্পোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছিলো নানা অনীহা কিন্তু নানা লবিংয়ের মাধ্যমে আল-হেরা সিভিল সার্জনে গ্রহণযোগ্যতা পায়।

 

কিন্তু এ নিয়ে আশের পাশেরসহ এলাকার অনেকের ছিলো নানা প্রশ্ন অনেকেই বলছিলেন কিভাবে একটি ফ্যামিলি ফ্লাটে একটি বাণিজ্যক কিভাবে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া যায়।

 

এদিকে আরো জানা যায়, হাসপাতালের মালিকপক্ষ রয়েছে মোট-১১ জন, যার মধ্যে হাজী বাবুল, আনিস, বাবুল, কবির, শফিকসহ আরো অনেকেই তারা কেউ হাসপাতালের আশেপাশেই ছিলেন না সব পালিয়ে গিয়েছিলেন।

 

নিহতের বাবা রমজান আলীর অভিযোগ করে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধানে টনসিলের অপারেশনের জন্য ভর্তি করানো হয় মোস্তাকিমকে। অপারেশন শেষে বাচ্চাকে যা যা খাওয়াতে বলা হয়েছে তাই খাওয়ানো হয়েছে। আজকে ভোরে ফযরের ওয়াক্তে প্রসাব করিয়েছি।

 

তারপর ১১টায় একটা ইনজেকশন দিয়েছিলো আর ১২টায় একটা ডোজ দিয়েছিলো, তারপর আর জ্ঞান ফেরেনি। সকালে অপারেশন থিয়েটারে মরদেহ রেখে ডাক্তার, নার্স সহ ক্লিনিকের সবাই পালিয়ে যায়। চিকিৎসকের অবহেলায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারে দাবি পরিবারের।

 

নিহত মোস্তাকিমের ফুফু বলেন, আমার কলিজার টুকরোটারে টনসিলের চিকিৎসার নামে কি চিকিৎসা করলো ডাক্তার যে উনি মইরা গেলো। এদিকে আবার প্রথমে তারা অপারেশনের আগে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও করায়নি।

 

আমরা যদি চিল্লাচিল্লি না করতাম সেটা ও তারা করাতো না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারে দাবি করছি। আর এমন ভুল চিকিৎসা করা হাসপাতাল যাতে সরকার বন্ধ করে দেয় আমাদের মতো যে আর কেউ তাদের কলিজার টুকরো না হারায়।

 

সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল কুদ্দুস মৃধা জানান, জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। বাদি ও বিবাদি যদি কোন অভিযোগ করে তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবে সিভিল সার্জন, তবে আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

 

মালিকপক্ষে কবির হোসন জানান, আমি বাড়িতে ছিলাম। এসে শুনেছি শিশুটি মারা গেছে। শিশু অপারেশন পর বাবা তার বাচ্চাকে জুস ও কেক খাওনোর পর থেকেই সমস্যা দেখা দেয়। তবে ডাক্তারের চিকিৎসা ভুল ছিল না। আর পরিবার যে অভিযোগ করেছে ১১টায় ইনজেকশন দেয়া হয়েছে এটা সম্পূর্ণ ভুল। ওইটা মূলত ৮টায় দেয়া হয়েছে, আর সেটা ছিলো কাশীর জন্য।

 

স্থানীয় একজন দোকানদার জানান, কালকে সকালেই এই বাচ্চা ও তার বাবা আমার দোকানে আসছিলো কিছু মালপত্র নিতে। ওই সময় বাচ্চাটা তার বাবার সাথে অনেক খেলা করছিলেন। ও যে অসুস্থ তা বোঝাই যায় নাই, এই বাচ্চা যে এভাবে মারা যাবে এটা অসম্ভব ব্যাপার। নিশ্চই ডাক্তারের কোন প্রকারের গাফলতি রয়েছে।

 

এ বিষয়ে জানতে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করার চেষ্টা করলে ও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

 

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান যুগের চিন্তাকে বলেন, আল-হেরা হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি আমরা গঠন করেছি। সকল যাচাই বাছাই করে আমরা সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এস. এ/জেসি