শ্রী চৈতন্য দেবের আবির্ভাব তিথি
রণজিৎ মোদক
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:০৫ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২৪ সোমবার
আজ গৌর পূর্নিমা শুদ্ধ বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক হরিনাম মহা মন্ত্রদাতা শ্রী চৈতন্য দেবের আবির্ভাব তিথি। তিনি ১৪৮৬ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীধাম নবদ্বীপ মায়াপুরে ব্রাহ্মন পরিবারে আবির্ভূত হন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। পিতা পন্ডিত জগন্নাথ মিশ্র, মাতা শচীদেবী। জগন্নাথ মিশ্রের পৈতৃক নিবাস শ্রীহট্ট (সিলেট)। বিদ্যা শিক্ষার জন্য জগন্নাথ মিশ্র শ্রীধাম নবদ্বীপে এসেছিলেন।
নীলাম্বর চক্রবর্তীর কণ্যা শচীদেবীকে বিয়ে করে তিনি স্থায়ী ভাবেই নবদ্বীপ থেকে যান। লীলাময়ের লীলা বুঝা সম্ভব নয়। মিশ্রের আটটি কণ্যা সন্তান অকালে মৃত্যুবরণ করে। ধর্ম আর বর্ণবাদ অভিশাপ রূপে দেখা দেয়। কালের কড়াল গ্রাস থেকে মহা মুক্তির বাসনায় শ্রী অদ্বৈত প্রভূ প্রার্থনা জানান, শ্রী রাধা গোবিন্দ পদে। সেই শ্রী রাধা গোবিন্দের যুগল মুর্তি শ্রী গৌরাঙ্গরূপে অবতীর্ণ হন শ্রীধাম নবদ্বীপের মায়াপূর।
বালক নিমাই গৌর ছিলেন, দূরন্ত চঞ্চল। কিন্তু তা হলে কি হবে অতি অল্প বয়সেই ব্যাকরণ অলংকার, স্মৃতিশাস্ত্রে ও ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। নিমাইয়ের অগ্রজ বিশ্বরূপ সংসার বিরাগী, দশ এগার বছর বয়সে নিমাই পিতৃ হারা হন। ষোল বছর বয়সে বিদ্যার্থী নিমাই পন্ডিত নিমাই বলে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেন। টোল খুলে ছাত্র পড়াতে লাগলেন। তিনি নদীয়াবাসীর অন্তরে চৈতন্য জ্ঞান দান করেন।
শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন গৌর বর্নে আবির্ভূত ভগবৎ অবতার। বল্লভাচার্যের কন্যা লক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে নিমাই এর বিয়ে হয়। লক্ষ্মীদেবী সর্পাঘাতে মারা যান। পরবর্তীতে চঞ্চল নিমাই কে সংসার মুখী করতে পন্ডিত সনাতন মিশ্রের কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে নিমাই এর বিয়ে দিলেন। এরপর পিতার পিন্ড দানের উদ্দেশ্যে গয়াধামে গিয়ে বিষ্ণু পাদপদ্মে পিন্ড দান করে নিমাই হলেন এক নতুন মানুষ।
ঈশ্বরপূরীর নিকট দীক্ষিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমে মহা প্রেমিক হলেন নিমাই। নাম হলো তাঁর শ্রী চৈতন্য দেব। নাম কীর্তনে মাতোয়ারা গৌর। নন্দন আচার্যের মন্দিরে গিয়ে দেখা পেলেন শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর। শ্রী নিত্যানন্দ হলেন শ্রীচৈতন্য দেবের প্রধান পার্ষদ বলদেব অবতার। নিত্যানন্দ প্রভু হরিদাসের মাধ্যমে নবদ্বীপে প্রেম ভক্তি ধর্মের প্রচার শুরু করেন। চঞ্চল গোবিন্দেরে অঞ্চলে বেধে রাখা যায়না।
নিমাই সতী লক্ষ্মী বিষ্ণু প্রিয়া কে শ্রীকৃষ্ণ প্রিয়া হওয়ার মন্ত্র দিয়ে নিজেই ঘর থেকে বেড়িয়ে পরলেন, জীবের দুঃখ দূর করার জন্য। বিলাতে লাগলেন হরে কৃষ্ণ হরে রাম মহামন্ত্র। মহা প্রভু বলেছেন “পৃথিবীতে যত আছে নগরাদি গ্রাম/ সর্বত্র প্রচার হইবে মোর হরিনাম।” শ্রীবাস, গদাধর মুকুন্দ অদ্বৈতচার্য এরা সবাই ছিলেন শ্রীচৈতন্য দেবের পার্ষদ। তাই প্রভূ ব্যক্ত করলেন, “শোনো হরিদাস/ সর্বত্র আজ্ঞা মোর কর প্রকাশ, প্রতি ঘরে ঘরে গিয়া কর এই ভিক্ষা,/ বল কৃষ্ণ, ভজ কৃষ্ণ কর কৃষ্ণ শিক্ষা।”
১৫১০ খ্রিঃ জানুয়ারিতে এক রাতে নিমাই গৃহত্যাগ করেন। তিনি কাটোয়ায় এসে হাজির হন। মহাপ্রভূ যখন নীলাচলে যাত্রা করেন, তখন সমুদ্রের স্রোতের ন্যায় হাজার হাজার ভক্ত প্রাণ মহা প্রভূর সঙ্গী হন।
বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার কার্যে তিনি বিভিন্ন গ্রাম থেকে গ্রামে যাত্রা করলেন। মহা পন্ডিত বাসুদেব সার্বভৌম রামানন্দ রায় সবাই প্রভূর মহা ভাবে ভাবিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমে মগ্ন হন। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুদ্ধ কৃষ্ণ প্রেম প্রচার শুরু করেন। কলিহত জীব কামনা বাসনার বেড়া জালে বন্দি। এ বন্দিদশা থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র। নববিধ ভক্তির মাধ্যমে শ্রবনং কীর্তনং বিষ্ণোংঃ- তম উত্তম।
কলি যুগে লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত রূপ ধারন করে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভূ রূপে অবতীর্ন হন। কলি যুগ অত্যন্ত অধঃ পতিত যুগ হলে ও ধন্য কলি বলা হয়েছে। পতিপাবন শ্রীচৈতন্য মহা প্রভূ প্রেমের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন। প্রেমহীন সংসারে কৃষ্ণ প্রেমই শান্তি প্রদান করতে পারে। এ সত্য কে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনা মৃত সংঘ (ইসকন) কৃষ্ণপ্রেম বিতরণের দূর্বার আন্দোলন করে যাচ্ছে। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত গৌর সুন্দর।
জাগতিক সংসারের সকল সুখ ত্যাগ করে শ্রীকৃষ্ণ সুখ অনুভব করেছেন। মধুর বৃন্দাবন দর্শন করে তিনি ভাবাবেশে আপ্লুত হন। মহা ভাবের অবতার হচ্ছে গৌরাঙ্গ অবতার। যার যতটা ভাব সে ততটাই প্রেম লাভের অধিকারী।
গৌরাঙ্গ প্রেমে জাত পাতের কোন বালাই নেই। “যে জন গৌরাঙ্গ ভজে সে হয় আমার প্রানরে”। কেশব ভারতীর কাছ থেকে সন্যাস ধর্মে দীক্ষা নিয়ে নবীন সন্যাসীর নামকরণ হলো শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য সংক্ষেপে শ্রীচৈতন্য দেব। শ্রী চৈতন্য দেবের বানী হচ্ছে যেই ভজে সেই বড় অভক্ত হীন ছার/ কৃষ্ণ ভজলে নাহি জাতি কুলাদি বিচার।
কলির কলুষ নাশকারী, যুগ ধর্ম সংকীত্তন যজ্ঞ প্রবর্তন কারী শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর ৫৩৩ তম শুভ আবির্ভাব তিথি তথা গৌর পূর্নিমা। মহামহিমান্বিত দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে ঢাকা স্বামীবাগ ইসকন মন্দির, নারায়ণগঞ্জ দেওভোগ (ইসকন) মন্দির, বাড়ৈভোগ রাধা গোবিন্দ মন্দির ও রূপগঞ্জ শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরসহ বিশেষ অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে। এছাড়াও পাগলার পাগলনাথ মন্দিরে দোল উৎসব পালিত হচ্ছে। হরে কৃষ্ণ.......। লেখক- রণজিৎ মোদক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, সাবেক সভাপতি, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব। এন. হুসেইন রনী /জেসি