রাতের ৩০০ ফুটে আতঙ্ক তরুণদের বাইক
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৫:৩৮ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২৪ মঙ্গলবার
রূপগঞ্জের নতুন রাজধানীখ্যাত পূর্বাচলের মসৃণ ৩০০ ফুট সড়কে একটু বেশি রাত হলেই একদল কিশোর-তরুণ বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর পাল্লা শুরু করে। এ কারণে প্রশস্ত এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বাইকচালকদের নিজেদের মধ্যে বিতণ্ডা ও মারামারির কারণে এলাকাবাসী, বেড়াতে আসা মানুষ এবং এই পথে চলাচলকারীরা প্রায়ই সমস্যায় পড়ছে। পুলিশ কিছু উদ্যোগ নিলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) অমিত কুমার দাস বলেন, ‘কিশোর-তরুণদের মোটরসাইকেল প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত আছে আমাদের। তবে সীমিত জনবল দিয়ে আমরা এত বড় ব্যস্ত সড়কের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতেই সমস্যায় পড়ছি। এর ওপর বেপরোয়া মোটরসাইকেলচালকদের তৎপরতা বাড়তি চাপে ফেলছে।’
সম্প্রতি ভোরের দিকে তিনজন মোটরসাইকেলে পূর্বাচল থেকে দ্রুতগতিতে মূল ঢাকা শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৩০০ ফুট সড়কের মাস্তুল এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলটির সংঘর্ষ হয়। এতে একজন তরুণ মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলে এবং আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সাম্প্রতিক আরেক ঘটনায় একই সড়কের রূপগঞ্জ অংশে দুই প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে আরো দুজন নিহত হয়। প্রতি সপ্তাহেই এমন দুর্ঘটনায় কয়েকজন হতাহত হচ্ছে সড়কটিতে।
খিলক্ষেত থানার ওসি শেখ আমিনুল বাশারএ তথ্য দেন। ওসি বলেন, ‘৩০০ ফুট সড়কে রাতে উঠতি বয়সীরা মোটরসাইকেল নিয়ে রেসিং (প্রতিযোগিতা) করে। এ কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে আমরা চেকপোস্টের মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। সেই সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগও কাজ করছে। ট্রাফিক পুলিশ সূত্র বলছে, সড়কটিতে মোটরসাইকেলের প্রতিযোগিতা, অতিরিক্ত গতিতে চালানো, যেখানে-সেখানে পার্কিং, উল্টো পথে গাড়ি চলাচলসহ নানা অনিয়ম ঠেকাতে অভিযান চলমান রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক গুলশান বিভাগ ও গুলশান ক্রাইম বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এ অভিযান চালানো হচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্র বলছে, গত ১৫ দিনে নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রায় ৬০০টি মামলা করা হয়েছে। মাসে এক হাজারের বেশি মামলা হয়। একই সঙ্গে গাড়ি রেকার ও ডাম্পিং করা হয়। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দুজন সার্জেন্ট আর একজন টিআই ও দুজন কনস্টেবল দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয় জানিয়ে সূত্র বলেছে, এত কম জনবল দিয়ে এখানে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) অমিত কুমার দাস বলেন, ‘স্বল্প জনবল দিয়ে আমরা এত বড় ব্যস্ত সড়কের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছি। এতে স্বাভাবিক কাজের সমস্যা হচ্ছে।
তরুণদের মোটরসাইকেল রেসিং নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে এই বিশাল সড়কে তারা এক জায়গায় স্থির থাকে না। তাদের পিছু নেওয়ার জন্যও লোকবল দরকার।’ স্থানীয়রা বলে, দিনরাত প্রায় ২৪ ঘণ্টা সড়কের কোনো না কোনো স্থানে উচ্ছৃঙ্খল তরুণদের হৈ-হুল্লোড়, উল্টো পথে চলা এবং কার রেসিং করতে দেখা যায়। তবে মধ্যরাতের দিকে এ ঘটনাগুলো বেশি ঘটে।
ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এও বলছে, অভিযান চলায় আগের চেয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ডাম্পিং ও মামলা হওয়ার কারণে সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশ কমে গেছে। পুলিশ বলছে, কুড়িল থেকে মাস্তুল এলাকা পর্যন্ত ডিএমপি নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার অংশেও অভিযান চলমান রয়েছে। এন. হুসেইন রনী /জেসি