স্বপ্ন সত্য হয় না মুকুলের
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:৩০ পিএম, ১০ মে ২০২৪ শুক্রবার
স্বপ্ন মানুষের একটি মানসিক অবস্থা, যা মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় অবচেতনভাবে অনুভব করে থাকে। স্বপ্নই পদখলেই যে বাস্তবতায় রূপ নেয় না তারই প্রমান বার বার দিয়ে যাচ্ছে বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। কয়েক দফায় কয়েকভাবে স্বপ্ন দেখে তা ভঙ্গ হওয়ার নজির উপস্থাপন করেছেন এই মুকুল। যখনই নিজের স্বার্থে আঘাত হানে তখনই তিনি স্বার্থ হাসিলে বিভিন্ন নৌকায় পাঁ দিয়ে থাকেন।
আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি-বিএনপি কোন দলই তার চিরস্থায়ী নয়, যখনই যে দলে স্বার্থ দেখে তখনই তিনি গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে সেই দলের সাথেই আতাঁত করে। গত বছর মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পেতে দলীয় ঘোষিত কমিটির বিপক্ষ অবস্থান করেছিলেন তিনি এবং বর্তমান কমিটিকে নানা ভাষায় তুলোধুনো করে কেন্দ্রে দফায় দফায় নালিশসহ নিজ স্বাক্ষরে মহানগর বিএনপির আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন করেন।
কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিগত দিন থেকেই সরকারি দলের সাথে আতাঁত করে নিজ দলীয় নেতাদের উপর নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ থাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে কোন নেতাকর্মী ছিলো না তার পক্ষে যাকে ঘিরে সে কোন রেজাল্ট না পেয়ে দল ও দলীয় কার্যক্রম থেকে অনেকটাই নিস্কিয় হয়ে পরেন। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সাথেই তিনি পূনরায় লিপ্ত হয়ে পরেন।
যাকে ঘিরে দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্বে সরকারি দলের সঙ্গে আঁতাত করার সুপষ্ট প্রমাণের কারণে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এই আতাউর রহমান মুকুলকে। তারই ফলশ্রুতিতে রাজনীতির অনেকটাই পেছনের সারিতে চলে যান তিনি। এদিকে আতাউর রহমান মুকুল ছিলেন সাংসদ সেলিম ওসমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। এ কারণে বিএনপির কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন 'দালাল' হিসেবে পরিচিত। এদিকে মহানগর বিএনপির সভাপতি হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যাওয়া তিনি আবারো বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।
সে সময় তিনি সেই আসনের সাংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সমর্থন পাওয়ার স্বপ্ন দেখলে ও তার সেই স্বপ্নে ও ধূলো দিয়ে দেয় সাংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি তাকে সমর্থন না দিয়ে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ রশীদকে সমর্থন করেন। যাকে ঘিরে অনেকটাই হতাশ হয়ে পরেন মুকুল। কিন্তু তার সাথে থাকা বিএনপির কিছু দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে নির্বাচন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে এবং বিএনপির সকল ভোট তার বাক্সে ফেলা হবে এমন প্রতিশ্রুতি দেন।
তখনই মুকুল সেলিম ওসমানের কথাকে সাইড কাটিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আর বিপুল ভোটে পরাজিতর মাধ্যমে উপজেলার চেয়ারম্যানের চেয়ার পাওয়ার স্বপ্নের অবসান ঘটে মুকুলের। বারবারই স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ায় তার হাত ছেড়ে দিচ্ছে তার ঘনিষ্ট অনেকেই। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে তার কর্মী-সমর্থকদের ধরে রাখতে বিতর্কিত আতাউর রহমান মুকুল হয়তো সামনে কোন ভিন্ন স্বপ্নের আর্বিভাব ঘটাবে।
সূত্র মতে, বন্দর উপজেলা নির্বাচনে সাংসদ সেলিম ওসমান সমর্থন করেছিলেন এম এ রশীদকে। বন্দরের এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেলিম ওসমান আতাউর রহমান মুকুলকে অনুরোধ করেছিলেন নির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের। তবে তিনি সাংসদের সেই অনুরোধে সাড়া দেননি। নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনও করেছেন। কিন্তু শেষতক তিনি ভোটের ফলাফল তার পক্ষে আনতে পারেননি।
এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বমোট ৫৪ কেন্দ্রের বেসরকারি প্রাপ্ত ফলাফলে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল চিংড়ি মাছ প্রতীকে পেয়েছেন ১৫ হাজার ৬৫৩ ভোট পেয়েছেন যা অন্য অন্য প্রার্থীদের থেকে অনেকটাই কম। যাকে ঘিরে অনেকেই বলছে মুকুল সাংসদ সেলিম ওসমানের অনুরোধে সাড়া দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেলে অন্তত সাংসদের সঙ্গে তার আগের সম্পর্কটা বহাল থাকতো বলেই মনে করেন স্থানীয়রা। এতে করে তিনি স্থানীয়ভাবে নিজের প্রভাবটাও ধরে রাখতে পারতেন।
এদিকে গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই বিএনপি বহিষ্কার করেছে আতাউর রহমান মুকুলকে দলে ফেরার সুযোগ আর নেই বললেই চলে। এতে করে তিনি রাজনীতির মাঠেও হারিয়ে যাবেন। তা ছাড়া এই বিতর্কিত আতাউর রহমান মুকুল ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় না থাকা সত্ত্বে ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও বন্দরের আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আতাঁত করে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আদিষ্ঠ ছিলেন।
পরবর্তীতে সেই ঘনিষ্ট এমপির কথা শুনে ২০১৯ সালে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। পরবর্তীতে ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা এড. তৈমুর আলম খন্দকারকে গোপনে গোপনে সমর্থন করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেননি। এবার ২০২৪ সালে তিনি দলীয় সকল পরিচয় হারিয়ে আবারো সেই চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন নিয়েছিলেন আর মনে করেছিলেন এবার তার ঘনিষ্ঠ সাংসদ তাকে সমর্থন করবে কিন্তু তিনি তা করেনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিতারিত হয়ে সর্বহারা হয়ে পরেছেন এই বিতর্কিত মুকুল।