কায়সারের কট্টর বিরোধী লোক সোহাগ রনি এখন অনুগত
এম মাহমুদ
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:২৮ পিএম, ২ জুন ২০২৪ রোববার
# ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন সোহাগ
রাজনীতিতে স্বার্থের টানাপোড়নে প্রতিপক্ষকে অনুগত বানিয়ে নেয়া রাজনীতিতে নতুন নয়। তবে সেখানে থাকে উভয়ের রাজনৈতিক স্বার্থের বৃহৎ উদ্দেশ্য। ঠিক এমনটাই ঘটেছে সোনারগাঁয়ের বর্তমান সাংসদ কায়সার হাসনাত এবং সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রনির মধ্যে। কেননা বর্তমান সাংসদ কায়সার হাসনাতের অন্যতম প্রতিপক্ষ ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী শাহ্ মো. সোহাগ রনি যখন তিনি মোগরাপাড়া ইউপি নির্বাচন করেন।
মোগরাপাড়া ইউপি নির্বাচনে পরাজয়ের পর কায়সারের বিরুদ্ধচারণ প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের বরাবর অভিযোগ দেন। তবে এসকল অভিযোগ বিরুদ্ধচারণ বাদ দিয়ে স্বার্থের টানাপোড়নে সোহাগ রনি কায়সারের অনুগত হওয়ার চেষ্টা করে সফল হয়ে যান। যার কারণে বর্তমান সময়ে সোনারগাঁয়ে আলোচিত হচ্ছে বছর না গুরতেই রাজনৈতিক স্বার্থে সাংসদ কায়সারের বিরোধী লোক সোহাগ রনি এখন অনুগত।
সূত্র বলছে, ২০২২ সালের ১৫ জুন সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি এক হাজারাধিক ভোটের ব্যবধানে বিদ্রোহী প্রার্থী আরিফ মাসুদ বাবুর কাছে পরাজিত হোন। তখন নির্বাচনে পরাজিত হয়েই উপজেলার শীর্ষ বেশকজন নেতার ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তার দাবি ছিল মোগরাপাড়া ইউপি নির্বাচনে আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, মাহফুজুর রহমান কালাম, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ও রফিকুল ইসলাম নান্নু নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন।
আর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সোহাগ রনি। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৫ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে কায়সার হাসনাতের একটি শ্লোগানের ভিডিও ফাঁস করেন। যে ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল কায়সার হাসনাত ভোট থেকে ভোট দিয়ে বের হয়ে ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘সাদা সবুজ, সাদা সবুজ’।
তবে সেসময় তার এসকল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারা। কিন্তু সোহাগ রনি প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগে করে সেখানে উল্লেখ করেছিলেন ২০০১ সালের ঘটনা টেনে ও কায়সার হাসনাতের পরিবারের অতীত ভুমিকা টেনে অভিযোগ করেন যে, ২০০১ সালে এই পরিবারটি নৌকার বিরোধীতা করে নৌকার পুড়িয়ে নৌকার প্রার্থী আবু নূর মোহাম্মদ বাহাউল হককে পরাজিত করেছিলো।
২০১৮ সালে মহাজোটের প্রার্থীর বিরোধীতা করে কায়সার হাসনাত সিংহ মার্কায় নির্বাচন করেছিলেন। একইভাবে ২০১৪ সালে ও ২০১৯ সালে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী প্রয়াত মোশারফ হোসেনের বিরোধীতা করে বিদ্রাহী হয়েছিলেন মাহফুজুর রহমান কালাম। তার আপন ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম সহ তারাও মোগরাপাড়া নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। ২০১৮ সালে সিংহের পক্ষে নির্বাচন করা রফিকুল ইসলাম নান্নুও মোগরাপাড়ায় নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন।
সোহাগ রনি অভিযোগ করেন- তারা ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি করে অতীতে অনেকবার নৌকা ডুবিয়েছেন। তারা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ করে না। অতীতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা বারবার নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছেন। তবে এমন কট্টর অভিযোগ দিয়েও শেষতক দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তুতি চলমান থাকায় মোগরাপাড়া ইউপি নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী সোহাগ রনি ইউপি নির্বাচনের সকল বিরুদ্ধচারণ বাদ দিয়ে ভোল পাল্টে কায়সার হাসনাতের অনুগত হওয়ার মিশনে নামেন।
কেননা সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার হাসনাত তার সাথে হাত মিলিয়ে নিলেই উপজেলা আওয়ামীলীগে ঠাঁই পেয়ে যাবেন এমনকি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অন্যতম প্রার্থী ছিলেন কায়সার হাসনাত। যার কারণে সোহাগ রনি কায়সার হাসনাতের সাথে বৃহৎ স্বার্থে হাত মেলান সোহাগ রনিকেও কায়সার হাসনাত বৃহৎ স্বার্থে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সাদরে গ্রহণ করেন।
কেননা সোহাগ রনির অর্থের প্রভাব রয়েছে তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পাবার উদ্দেশ্যেই সাদরে গ্রহণ করেন সোহাগকে যেটা সোনারগাঁয়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। পরবর্তীতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়ে কায়সার হাসনাত জয়ী হলে কায়সার বলয় থেকে আর বের হয়নি সোহাগ। কারণ কায়সার হাসনাত সাংসদ হওয়ার পর পুরোপুরি স্বার্থের খেলায় মেতে উঠে সোহাগ রনি হয়ে যান কায়সারের একান্ত অনুগত।