মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৭ ১৪৩১   ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিচারসহ ক্ষতিপূরণ চান স্বজনরা  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪২ পিএম, ৯ জুলাই ২০২৪ মঙ্গলবার


আগুনের কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে গেছে। প্রাণ বাঁচানোর আকুতি ও আর্তনাদে চারদিকের নিস্তব্ধতা খানখান হয়ে গেছে। কিন্তু ভয়াল সেই আগুন গ্রাস করে নিল অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণ। রূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় ভর্য়াত অগ্নিকান্ডে ৫৪ জনের প্রাণহানীর ঘটনার তিন বছর পূর্ণ হয়ে চার বছরে পড়লো।
 


গতকাল সোমবার দুপুরে অগ্নিকান্ডের তিন বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে সেই কারখানার চত্ত্বরে নিহতদের স্মরণে দোয়া ও মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় নিহতের স্বজনরা বিচারসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

 


জানা গেছে, ২০২১ সালের ৮ জুলাই বিকালে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজিব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানার ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সময় আগুন দেখে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ১৯ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

 

 

ততক্ষণে আগুনে পুড়ে আরও ৫১ জনের মৃত্যু হয়। কারখানার তিন ও চার তলা থেকে অনেকের মাথার খুলি, চুল ও হাড় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেমসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

 

 

মামলায় নিরাপত্তা না থাকাসহ বিভিন্ন অবহেলার অভিযোগ আনা হয়। সে মামলায় গ্রেপ্তার হন সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ তার চার ছেলে। পরর্বতীতে ২০২৩ সালে আদালত অভিযোগপত্র দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থাটি মামলা থেকে বাদ দেয়া হয় আবুল হাসেমসহ তার ছেলেদের। এতে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া এই অগ্নিকাণ্ডে ৫৪ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করে লেবার কোর্টে ৫১টি মামলা হয়।
 

 


অগ্নিকাণ্ডের পূর্বে আরও একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ। তিনি জানান, ২০২১ সালের ৮ জুলাই কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর আগে জুন মাসে দপ্তর থেকে ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তায় নানা ভায়োলেশন নিয়ে মামলা করে। সেই মামলা চলমান আছে।
 

 


তিনি আরও জানান, হাসেমফুড অগ্নিকান্ডে ৫৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩ জন কারখানা থেকে লাফ দিয়ে মৃত্যু বরণ করেন ও ৫১ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওই ৫১ জনের পরিবার যাতে সরকারীভাবে সহায়তা পান, সে লক্ষে লেবার কোর্টে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।
 


উল্লেখ্য, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে কমিটি গঠন করেছিল জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কারখানাটি অবহেলার কারণেই এতো শ্রমিকদের মৃত্যু ঘটে। পরে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নিহত ৫৪ জনের পরিবারের সদস্যদের ২ লাখ টাকা করে এবং আহত ৩৮টি পরিবার সদস্যদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। যে কারখানায় আগুন লেগেছিল, তা বর্তমানে সীলগালা অবস্থায় আছে।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি