আন্দোলনের নতুন শব্দ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’
ইউসুফ আলী এটম
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৪:১১ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২৪ বুধবার
আন্দোলন সংগ্রামে এতোদিন যেসব শব্দের প্রচলন ছিলো সেগুলো বাদ দিয়ে নতুন ভাষায় নতুন শব্দ প্রয়োগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আন্দোলনের কর্মসূচিতে তাদের আবিষ্কৃত ও প্রয়োগকৃত শব্দটির নাম ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। আন্দোলনের মাঠে নতুন নামের এ কর্মসূচি থ্রো করার পর পরই ব্যাপক সাড়া পড়ে। কমপ্লিট শাটডাউন একটি ইংরেজী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে, কোনো কিছুর কার্যক্রমকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে রাখা। অর্থাৎ সারাদেশের সবকিছু পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া বা রাখা।
ব্রিটিশ শাসনামলে আন্দোলনের মোক্ষম অস্ত্র ছিলো ‘বন্ধ’। পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন নামের আন্দোলন সংগ্রাম যেমন-মানববন্ধন, লংমার্চ, অসহযোগ, ঘেরাও, অবরোধ এবং হরতাল কর্মসূচি গ্রহণ করা হতো এবং হয়। কিন্তু অধিক ব্যবহারে বিভিন্ন নামের এসব কর্মসূচি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে দেখা গেছে, হরতাল কিংবা অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচিও মাঠে মারা যাচ্ছে। এসব আন্দোলনের ধার কমতে কমতে এমনভাবে ভোঁতা হয়ে গিয়েছিলো যে, এসব কর্মসূচিকে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্টরা আমলেই নিচ্ছেন না। পাশাপাশি এসব কর্মসূচিতে দলীয় নেতা কর্মিদের অংশগ্রহণও দিন দিন একেবারে তলানিতে নেমে গিয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করেই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ নামে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি থ্রো করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সরকারের গোটা প্রশাসনকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের নমনীয়তা এবং সিদ্ধান্তহীনতা কাল হয়ে দাঁড়ায়। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে ছাত্রদের পাশাপাশি অছাত্র এবং লুটেরাবাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটে। সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চলতে থাকে বাধাহীনভাবে। ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন সরকার। অবস্থা স্বাভাবিক করতে কারফিউ জারির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হতে হয় সরকারকে। পরিশেষে সুপ্রীম কোর্টের রায় মেনে প্রজ্ঞাপন জারি করতেও বাধ্য হন সরকার। মাঝখানে সারাদেশে ঝরে পড়ে অনেক তাজা প্রাণ। শিথিলের মধ্য দিয়ে এখনো সারাদেশে কারফিউ বিদ্যমান থাকায় জনসাধারণে আতংক বিরাজমান। কাজ করতে না পারায় দিনমজুরদের দিনকাল খুবই খারাপ যাচ্ছে। তারা এই অনিশ্চয়তার অবসান চান। পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় সব খাদ্যসামগ্রির দাম ঊর্ধ্বমুখি।
সরকার এবং আন্দোলনকারি উভয়পক্ষের সমঝোতায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই গোটা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। আমরা আরো আশা করবো, শীঘ্রই কারফিউ উঠিয়ে নেয়া হবে এবং জনসাধারণ স্বস্তিকর পরিবেশে ফিরে যাবেন।