ব্যর্থতার দায় এড়াতে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১১:৪৬ পিএম, ১ আগস্ট ২০২৪ বৃহস্পতিবার
সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব বয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়, লিংকরোডের শিবু মার্কেট থেকে সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যর্থতার সাথে সাথে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
আদতে পুরো কমিটির কোন নেতাই শক্ত কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন নিজেরা একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ দাবি করে পার পেতে চাইছেন। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ এমপি শামীম ওসমানও। কেননা, জেলার সবচাইতে বড় তাণ্ডবলীলা তাঁর নির্বাচনী এলাকাতেই ঘটেছে। সিংহপুরুষ দাবি করা শামীম ওসমান নানাসময়ে ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিয়ে আলোচনায় আসতেন।
কথায় কথায় তিনি সমাবেশও ডাকতেন। তবে এবারের ব্যর্থতায় নেতাকর্মীদের চুপসে থাকার সুবাদে এই ক্রান্তিকালে দুইবার সমাবেশের ডাক দিয়েও পরে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন। এরজন্য তাঁর অন্যতম দুটি ঘাঁটি ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী নেতাকর্মীদেও ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে গতকাল নিজেদের দায় ঢাকতে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সভায় নেতাকর্মীরা নিজেদের পিছ বাচাতে একে অন্যকে দোষারোপ করতে দেখা গেছে। অনেকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বেও গন্ধ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, ফতুল্লা থানাধীন ৫ টি ইউনিয়ন এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয় কুতুবপুর ইউনিয়নকে। কেননা, কুতুবপুর ইউনিয়নের সীমানা ঘেষেই সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল এর মতো ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল অবস্থিত। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে কুতুবপুর ও কুতুবপুরের পাশের জনপদ গুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা।
তথ্যমতে, কুতুবপুর ইউনিয়ন টি বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। প্রায় দেড় লাখ ভোটারের অবস্থান এই কুতুবপুরে। কিন্তু কুতুবপুরের আওয়ামী লীগ নেতারা সেখানে যেন গুরুত্বহীন ও অকার্যকর । যার ফলশ্রুতিতে, এবারের কোটা আন্দোলন ইস্যুতে কুতুবপুরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপরও হামলা হয়েছে। প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা একটি দলের নেতাকর্মীদের উপর এমন হামলা যেন বিস্মিত করছে সবাইকে। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। গতকাল ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের আয়োজনে আয়োজিত এক যৌথ সভায় তাই সর্বাধিক গুরুত্ব পায় কুতুবপুর আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা সম্পৃক্ত বিষয়টি।
কুতুবপুরের বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর ছত্রছায়ায় বিএনপি'র নেতাকর্মীরা পরিচালিত হওয়ায় এখানে আওয়ামী লীগ সেইভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। বরং অবহেলিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতারা।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘যখন দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তখন আমি ছিলাম দেশের বাইরে। তাই ঠিক কি হচ্ছে আমি জানতাম না। দেশে ফিরে এসে এই ব্যাপারে জানতে পারি। তবে আমার সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে তা সত্যি নয়। সেটা প্রমাণ করতে পারবে না কেউ। তবে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা যদি পুনরায় ঘটে তবে আমি সর্বশক্তি দিয়ে তা মোকাবেলা করবো।’
কুতুবপুরে আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল হক ও ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেলও।
শরিফুল হক তার বক্তব্যকালে বলেন, কেউ কেউ বলছে কুতুবপুরে বহিরাগত লোক এসে আওয়ামী লীগের নেতাদের উপর হামলা করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভিতরের কারো সাহায্য ছাড়া বাইরের কেউ এলাকায় ঢুকে এই ধরনের নাশকতা করতে পারবে না।
তাই কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজান এবং শক্তিশালী করুন এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায়। একই সুরে মীর সোহেল আলী বলেন, কুতুবপুর আওয়ামী লীগে যে অস্থিরতা চলছে তা নিরসন জরুরী। জন্য থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই কুতুবপুর আওয়ামী লীগে সংস্কার চায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও।