রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১   ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মোকাররম-আজিজুল কোথায়?

লিমন দেওয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১২:৩৪ এএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার

 

 

# শ্রমিকের রক্ত চুষে শত শত কোটি টাকার মালিক

 

নারায়ণগঞ্জের একজন কুখ্যাত শ্রমিক নেতা যার নামে পরিবহন সেক্টর থেকেই উঠতো মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদা। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ফতুল্লায় দাপিয়ে বেড়ানো মধ্যে দিয়েই এক শ্রমিক  লীগ নেতা। তাঁর রয়েছে তার চার ‘খলিফা’ও (সেন্টু, আবুল, মোকাররম ও আজিজুল হক) বিলাসী জীবনযাপন করছেন। গাড়ি-বাড়ি সবই তাদের রয়েছে। থাকেন বসুন্ধরা ও গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায়।

 

 জানা গেছে, ফতুল্লার আলীগঞ্জ থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত এলাকায় চাঁদাবাজি থেকেই পলাশের মাসিক আয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।এই সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকায় রয়েছে সেই চার খলিফা। যার মধ্যে অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন কয়লা মোকাররম ও অটো  আজিজুল। ওই শ্রমিক নেতার কব্জায় ৭৪টি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে সকলটির মধ্যেই গত ১৬ বছর যাবৎ শীর্ষ পদ দখল করে আছেন তিনি।  সেই নেতার প্রধান খলিফা হিসেবে পরিচিত লেবার সর্দার মোকাররম। 

 

যিনি বুড়িগঙ্গা নদী থেকে মালামাল লোড-আনলোডের সময় বস্তা হিসেবে সমিতির নামে চাঁদা আদায় থেকে শুরু করে কয়লার অবৈধ ব্যবসাসহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের দুই পাশে লোড আনলোড সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন যা ঘিরে তিনি বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। অন্যদিকে ব্যাটারি চালিত অটো, প্যাডাল রিক্সার প্লেড নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বরিশাইল্লাহ আজিজুল। আজিজুল এদিকে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের গডফাদার হিসেবে পরিণত হয়েছে। চাঁদাবাজদের ওই সিন্ডিকেট এখন চাঁদাবাজির পাশাপাশি ফতুল্লার গোটা এলাকায় নানা কুকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে।

 

 চারিদিক থেকে চাঁদার টাকায়; এক কথায় উড়ছে আজিজুল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। যার মাধ্যমে ও তিনি ও বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। সাম্প্রতি কোটাবিরোধেী আন্দোলনে এই পলাশের নির্দেশনায় তার সাঙ্গপাঙ্গের এক দল ভূইঘর, রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনকৃত ছাত্র-জনতার উপরে অস্ত্র-সন্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সর্বশেষ গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন। এরপর কেটে পড়ে এই সিন্ডিকেট।
 
 
 
কথিত চাঁদাবাজ লেবার সর্দার মোকাররম
লেবার সর্দার মোকাররম। যিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের দুই পাশে লোড আনলোড সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করতেন এই মোকাররম। কথায় কথায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, স্থানীয় এমপি ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের সাথে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দেয়। মোকারমের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলীতে। কিশোরগঞ্জের সন্তান মোকাররম ‘গডফাদার’খ্যাত পলাশের সঙ্গে থেকে অঢেল সম্পদ গড়ে তোলেন। এলাকাতে যান স্পিডবোটে চড়ে। গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন আলিশান ভবন। 

 

ওয়ান ইলেভের সময় ফতুল্লায় একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের বিপুল সংখ্যক পচা গম উদ্ধার করা হয় একটি জাহাজ থেকে। ঐ সময় ঐ গ্রুপের আরও কয়েকটি জাহাজে লুটপাট চালানো হয়। তখন ১০ কোটি টাকার মালামাল লুট করা হয় বলে জানা যায়। জনশ্রুতি রয়েছে তখনই কপাল খোলে মোকারমের। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এক সময়কার লেবার সর্দার মোকাররমের। এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি। কয়েক কোটি টাকা লগ্নি করেছেন চলচ্চিত্রে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় মাত্র ১৬/১৭ বছরের ব্যবধানে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সচেতন এলাকাবাসী লেবার থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক। মাত্র তিন মাস আগে নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শত শত কোটি টাকার মধ্য দিয়ে। 

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইভটিজিং’ সিনেমা তৈরিতে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন মোকাররম। ওই ছবিটি ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়। গত ২০১৬ সালের জুনে ‘হ্যারিয়ার’ নামে ৭৬ লাখ টাকায় একটি গাড়ি কিনেন মোকাররম। তবে তিনি বলেন, এত নয়, ২৮ লাখ টাকা দিয়ে পুরনো একটি গাড়ি কিনেছি। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কিশোরগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া এলাকায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা দিয়ে তিনতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি কিনেন তিনি। বিগত দিনে প্রতিদিন ৮০ টাকা মজুরিতে করা এই মোকাররম শ্রমিকদের মাথায় কাঠাঁল ভেঙে তাদের রক্ত চুষে বনেছেন হাজারো কোটি টাকার মালিক। তা ছাড়া ছাত্র-জনতার কোটা বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে দমাতে অবৈধ অস্ত্র সাপলাই দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জে, যাত্রাবাড়ীতেসহ ঢাকায় অস্ত্র সাপলাই করেছিলেন বলে ও সূত্র মতে জানা গেছে।
 
বরিশাইল্লা অটো আজিজুল
 
শ্রমিক লীগ নেতার নাম ছত্রছায়ায় আজিজুল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা গোটা এলাকায় চাঁদাবাজদের আখড়া তৈরি করেছিলেন। চাঁদাবাজির কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বারবার গ্রেফতার হন আজিজুল। জামিনে মুক্তি হয়ে আবার নেমে পড়েন চাঁদাবাজিতে। ফতুল্লায় এক সময় পাগলা থেকে পঞ্চবটি অটো চালানো সেই আজিজুল এখন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে কিভাবে এতো অল্প সময়ে এতো টাকার মালিক হলেন একজন অটো চালক। জানা যায়, এই অটো চালক আজিজুল বিভিন্ন গ্যারেজের অটো চালকদের নিয়ে ফতুল্লায় একটি সংগঠন গড়ে তোলে। আর এই সংগঠনটি প্রত্যেকটি পাড়া মহল্লায় যে সকল অটো চালক রয়েছে তাদেরকে নির্দেশনা দেন। এই ফতুল্লায় অটো চালাতে হলে প্রতিদিন ৩০ টাকা ও মাসে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। 

 

তা ছাড়া ফতুল্লায় মধ্যে অটো চালাতে হলে আগে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা দিয়ে চাঁদাবাজির তকমা ঢাকতে; কথিত রুট পারমিটের জন্য চাঁদাবাজ আজিজুলের কাছ থেকে প্লেট নিতে হবেই। আর যে এই অটোর প্লেট নিতে পারবেনা সে এই ফতুল্লায় অটো চালাতে পারবে না। সর্বশেষ র‌্যাব ১১ এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্ত কে শোনে কার কথা বারবার জেল খাটার পরেও এখনো বদলায়নি এই চাদাঁবাজ আজিজুল। একে একে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমলেও সেটা নিয়ে তার নেই কোন ভাবনা। তার শুধুৃ একটাই লক্ষ্যে কিভাবে চাঁদাবাজি করে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া। তা ছাড়া তিনি পাগলায় নিজস্ব গ্যারেজ স্থাপনা করেন। সেখানে বসেই তিনি তার চাঁদাবাজির রাজত্ব চালাতেন। 

 

ফতুল্লা থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে অটো চাঁদাবাজিকে মহোৎসবে পরিণত করেছিলেন। বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এই আজিজুল তাকে খুঁজছে নির্যাতিত ব্যাটারি চালিত অটো-প্যাডাল রিক্সা চালকবৃন্দ। তিনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে জালকুড়ি এলাকায় ছাত্র-জনতার উপরে হামলা চালিয়েছিলেন বলে ও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ফতুল্লার শিল্পাঞ্চল বিসিক এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগঠনের নামে চাঁদা তুলতেন এই বরিশাইল্লাহ আজিজুল হক। ইতিমধ্যে ফতুল্লা থানায় মামলায় আজিজুল হক হত্যা মামলার আসামী হিসেবে এজাহারে রয়েছেন।