নগরীতে তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ জনজীবন
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:০৪ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার
তীব্র যানজটে নারায়ণগঞ্জ শহরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। র্দীঘ সময় সড়কে যানবাহনে আটকে পড়ায়, দুর্ভোগে নাকাল হচ্ছে কর্মব্যস্ত নগরবাসী। স্কুলে যথাসময়ে পৌছুতে দেরী হচ্ছে শিক্ষার্থীদের, অফিসগামী ও দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষদের মূল্যাবান সময় নষ্ট হচ্ছে। এর পাশাপাশি সড়কে আটকে থাকা মুমূর্ষু রোগীদের মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে।
নগরীতে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু সড়ক, সিরাজউদ্দৌলা সড়ক সহ প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বিশাল যানজট বাধতে দেখা যায়। দীর্ঘ সময়ে আটকরা পড়ে যানবাহনের যাত্রী বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যানজট বাধার পেছোনে বিভিন্ন কারণ জড়িত বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
তবে নগরীতে রুট পারমিট বিহীন পরিবহনের চলাচল বেড়ে যাওয়া এবং শহরে জায়গায় জায়গায় অবৈধ স্ট্যান্ড এ দুই কারণে নগরীতে যানজট অনেকটাই বেড়েছে বলছে নগরাবাসী। সচেতনমহল বলছে, প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশের যৌথ উদ্যোগে সড়কে রুটপারমিট ও ফিটনেস বিহীন বাস ডাম্পিং এর ব্যবস্থা করা হলে এবং অবৈধ লেগুনা, মিশুক, সিএনজি, বাসের স্ট্যান্ড উৎখাত করা হলে যানজট নিরসন সম্ভব।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা'র সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি ছোট্ট শহর। এখানে সড়কের তুলনায় পরিবহন বাস, অটোরিকশা, রিকশার সংখ্যা অনেক গুণ বেশি। শহরটিকে সচল করতে হলে প্রথমে, যে সমস্ত বাসের রুট পারমিট নেই তাদের ডাম্পিং এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি বাড়াতে হবে।
নারায়ণগঞ্জে মানুষজনের চলচল করার জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা নেই। এর জন্য ট্রাফিক পুলিশ জেব্রা ক্রসিং এর উদ্যোগ নিতে পারেন। ট্রাক চলাচলের জন্য নির্ধারিত সময় রাত ১০ টা থেকে সকাল ৮টায় স্থির করতে হবে। এসময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানহর ও শহরে কোন ট্রাক চলাচল করতে দেওয়া যাবে না। এর পাশাপাশি প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা।
ফুটপাথগুলো দখল থেকে মুক্ত করে চলাচলের যোগ্য করে তুলতে হবে। ফুটপাথ দখলে থাকায়, স্বল্প দূরতের যাতায়াতে পায়ে হেটে যাওয়ার পরিবর্তে রিকশা, অটোরিকশা ব্যবহার করছি। যাতে সড়কে এদের ব্যবহার বাড়ছে এবং যানজট সৃষ্টির বড় কারণ হচ্ছে। নাগরিক উদ্যোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ উদ্যোগ এবং আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে নেই কোন পার্কিং স্পেস। যার কারণে সড়কের পাশে গাড়ি পার্ক করা হচ্ছে। যেসমস্ত বিপনী বিতানে পার্কিং স্পেস নাই সেব্যাপারে আইনগত উদ্যোগ নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জের প্রধান প্রধান গুলোতে ভাড়ি যানবাহনের আলাদা লেন ও হাল্কা যানের আলাদা লেন করে ট্রাফিক সিস্টেম সক্রিয় করা হলে অচল শহর সচল হবে।
এদিকে, যানজট নিরসনে প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে নানান ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, শহরে যানজট নিরসনে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরইমধ্যে সড়ক থেকে রুট পারমিট বিহীন যান চলাচল বন্ধ করতে এবং অবৈধ স্ট্যান্ড উৎখাতে অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্বের জন্য আমার পঞ্চাশ জনকে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছি। যানজট নিয়ন্ত্রনে তারা সহায়তা করবেন। গতকাল থেকে মাঠপর্যায়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি, আগামী ২-১ দিনের মধ্যে শহরবাসী সুফল পাবেন।
তিনি বলেন, সরকারের পট পরিবর্তনের পর পুলিশে ম্যাসেকার হওয়ায় পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত তিন চার দিন ধরে আমার পূর্বের ন্যায় মাঠে ফিরে কাজ করছি। বিভিন্ন বাসের রুট পারমিট নেই, এ সংক্রান্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য পাচ্ছি। গত পনের বা মাস খানিক ধরে গ্রিন সেবা, এশিয়ান লাইন পরিবহন এর বাসগুলো চলছে যা আমার আগে দেখি নাই। রুটপারমিট বিহীন বাসসহ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসছি। বাসের রুট পারমিট না থাকলে জেলা ম্যাজিস্ট্রট, পুলিশ যৌথভাবে অভিযান করে শক্তভাবে নির্মূল করবো।
তিনি আরও বলেন, সড়কে ট্রাক চলাচলের সময়ের ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন যে নির্দেশ দিবেন আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো। শহরে একটা মার্কেটেও কোন পার্কিং ব্যবস্থা নেই। সবাই রাস্তায় গাড়ি রাখছেন। যাতায়াতের ক্ষেত্রে স্পিডের গাড়ি নন স্পিডের গাড়ি এক লেনে আসছে।
নারায়ণগঞ্জে আসলে ইনফ্রাস্ট্রাকচারের যে অবস্থা, যেখানে চাইলেও সব ধরণের সিস্টেম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, তবে কোন পলিসি এপ্লাই করতে পারছি না। যানজট নিরসনে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আশা করছি, যানজটের মাত্রা শিঘ্রই কমে আসবে। এন. হুসেইন রনী /জেসি