দেশের বৃহত্তম ক্যালিগ্রাফিতে ‘ঐক্যের ডাক’
বিশেষ প্রতিনিধি
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৫:৪৭ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শুক্রবার
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর ব্রিজের পূর্বঢালে দেখা মেলে দেশের বৃহত্তর আরবী ক্যালিগ্রাফি। দৃষ্টিনন্দন সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুরের এ ৬ হাজার স্কয়ার ফুটের বিশাল ক্যালিগ্রাফিতে মুগ্ধ পথচারীরা। নজর কাড়ছে এ পথে চলাচলরত ২০ জেলার মানুষদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সংযোগ স্থলে এমন শিল্পকর্মে চোখ ধাঁধানো গ্রাফিতি ও ক্যালিগ্রাফি প্রশংসায় ভাসছেন সংশ্লিষ্ট শিল্পিরাও।
এ শিল্পকর্ম, প্রতিবাদী স্লোগান ও দেয়াল লিখনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন যাত্রাবাড়ী মাদরাসার শিল্পীরা। যা দেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের নিদর্শন বলে দাবী করেছেন কেউ কেউ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁচপুর সেতুর পূর্বপাশে আরবি হরফের সাধারণ গাঁথুনি দিয়ে গড়ে তোলা নান্দনিক এক শিল্পকর্ম। যদিও পথচারী, গাড়ী চালক, স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এমন আরবী শিল্পকর্মের পাশাপাশি বাংলা অক্ষর বা বাক্যে ক্যালিগ্রাফি বাড়ানোর।
কাঁচপুরের বাসিন্দা এ্যাডভোকেট মনির হোসেন বলেন, ২৪ এর ছাত্র জনতার আন্দোলনে বিজয়ের দৃশ্য মনে হচ্ছে এটি। যদিও আরবী ক্যালিগ্রাফি। তবে ৯৫ ভাগ মুসলিমদের বসবাসে এমন চিত্র প্রশংসার দাবীদার। ছাত্ররা নিজেদের অর্থায়নে দেয়ালগুলোতে দেশপ্রেম, ঐক্যের ডাক দিয়েছেন নানা চিত্রে আর কবিতায়। এঁকেছেন অনুপ্রেরণার চিত্র। এটা নতুন বাংলাদেশ দেখছি।
ক্যালিগ্রাফি শিল্পী হোসেন মাহমুদ বলেন, চোখ ধাঁধানো এই ক্যালিগ্রাফি আঁকতে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ হানিফ। তিনি যাত্রাবাড়ী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেছেন। একজন সৃষ্টিশীল শিল্পীর সহকর্মী হিসেবে আমিসহ আর বন্ধু মহল ছিলাম। ৫ আগষ্টের পর আমরা নিরলস প্রচেষ্টায় এটি তৈরী করেছি। বাংলাদেশের কোথাও এতো বড় গ্রাফিতি তৈরী হয়নি।
শিল্পি মোল্লা মুহাম্মদ হানিফ বলেন, নিজেদের মনের মতো করে ফুটিয়ে তুলতে ১২ দিন সময় নিয়েছি। এখানে ঐক্যের ওপর জোর দেয়া আরবি হরফগুলো অনন্য সুন্দরভাবে লেখা হয়েছে ক্যালিগ্রাফিতে। কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর লাল-সাদা রঙে ফুটিয়ে তোলা হয় সৃজনশীল এই শিল্পকর্ম। 'একতাই শক্তি' শিরোনামে আমাদের নতুন কাজ। আমাদের টিম ১২ দিন কাজের মধ্যে দিয়ে কাজটা সম্পন্ন করতে পেরেছি।
কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, কাজের শুরুতেই ডান দিক থেকে একতাই শক্তি লেখা আছে। মাঝে মুষ্টিবদ্ধ দু’টি হাত। একটি হারিয়ে যাওয়া জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরেকটি দল এসে একতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং চতুর্পাশে ইনকিলাব, ইত্তিহাদ, ইন্তিফাদার মেসেজ এবং আমাদের শেষ বার্তা ছিল। দু’টি হাত একে অপরকে ধরে রেখেছে, এর মানে হলো, আমরা যদি বিচ্ছিন্ন না থেকে এক থাকতে পারি তাহলে আমরা বিশ্বের এক শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে পারব।
পৃথিবীতে মুসলিম উম্মাহর ওপর যে নির্যাতন চলছে এ এ সময়টায় আমরা একতাবদ্ধ না হলে আমরা মুসলিমরা আরো নির্যাতিত হবো। তাই ঐক্যের বিকল্প নাই। মোল্লা মোহাম্মদ হানিফ তার এ শিল্পকর্ম এমনটাই বুঝাতে চেয়েছেন দাবী করে তিনি আরও বলেন, এর আগে ২ হাজার স্কয়ার ফিট জুরে এমন কাজ করেছি। কিন্তু আরবী লিখলে বাঁধা পেতাম। দেশটা বৈষম্যহীনের স্বপ্ন নিয়ে তরুণরা প্রাণ দিয়েছেন। তাদের এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা জরুরী।
এদিকে বাংলা ভাষায়ও এমন গ্রাফিতি বাড়ানোর দাবী করেছেন নাগরিক সমাজ। তাদের দাবী, ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তের সম্মানে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলা ভাষা স্বীকৃত ও জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও মাতৃভাষার জন্য শহীদ হওয়ার ঘটনা ঘটে নি। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। তাই সামাজিক বার্তা পৌঁছে দিতে বেশি বেশি বাংলা ভাষার চর্চা শিল্পীদের করতে হবে।তাদের শিল্পকর্মে বাংলাভাষা আরও সমৃদ্ধ হবে। এন. হুসেইন রনী /জেসি