শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সানি-সুব্রত সাহার মাসদাইর নিমতলায় অবৈধ গুদাম

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:০৭ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার

 

 

এক সময়ে যে পরিবারের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে কেঁপে উঠতো পুরো নারায়ণগঞ্জ। সেই ওসমান পরিবারের কুখ্যাত সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমানের চাঁদাবাজির অন্যতম দুইজন সিপাহী টানবাজারের এলসির কালোবাজারী, সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের মূল হোতা সানি সাহা (এম.এম ট্রেডার্স) ও সুব্রত রায় (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স)। এরা দুইজন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমানের ভয় দেখিয়ে ও অবৈধ অস্ত্র তাক করে টানবাজার জুড়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদাবাজি করতেন এই কুখ্যাত দুইজন ব্যবসায়ী চাঁদাবাজ। 

 

এদিকে প্রায়ই সময় এই সানি সাহা ও সুব্রত সাহাকে দেখা যেত আজমেরী ওসমানের হোন্ডা বহরে এমনকি পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে তাদেরকে এক সাথে দেখা যেতো যার পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে তাদের মধ্যে দহরম মহরম সম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া আজমেরী ওসমানের পাঁ চেটে তার বোন (আফরিন ওসমানের) স্বামী গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলামের সাথে আজমেরী ওসমানের ভরাতে পরিচিত হয়ে ভালো সখ্যতা বানিয়ে ফেলেন সানি সাহা ও সুব্রত সাহা।

 

 এদিকে হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে আজমেরী ওসমানের সাথে রাতে শহরে মহড়া দিতেন এই সানি সাহা। এর পাশাপাশি এই সানি সাহা ও সুব্রত রায় টানবাজার জুড়ে বন্ড সুতা অবৈধভাবে পরিচালনার জন্য আজমেরী ওসমানের নামে মাসদাইর কবরস্থানের উল্টো পাশে একটি বিল্ডিংয়ে অবৈধ বন্ড সুতার গুদাম ও মন্ডলপাড়ার পাশেই নিমতলা মন্দিরের আশেপাশে রয়েছে আরো কয়েকটি অবৈধ বন্ড সুতার গুদাম। তা ছাড়া ও নয়ামাটি পুরান ভবন, টানবাজার এলাকায় বিভিন্ন বন্ড সুতার অবৈদ গুদাম করছেন এই সানি সাহা ও সুব্রত রায়।

 

 এমনকি অন্তরালে-আবডালে অজানাভাবে বহু গুদামসহ আরো বহু অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছেন এই সানি ও সুব্রত সাহা। ব্যাবসায়ী সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিল্পাঅঞ্চলে থাকা স্পিনিং মিলের মালিকদের সাথে ওসমানদের নাম ব্যাবহার করে তাদের থেকে তাদের এলসির মাধ্যমে বন্ড সুতা কিনে তাদের গুদামে রেখে সেখান থেকে ও পার্টিকে মাল দেখিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার নজির ও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে। ওসমানদের ছায়াতলে থেকে বর্তমানে জিরো থেকে বনে গেছেন শত শত কোটি টাকার মালিক।

 

সূত্র বলছে, গত ১০ বছরে ঝিমিয়ে পড়েছে টানবাজারের সুতার ব্যবসা। এলসির কালোবাজারী, সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের কারণে এখন ধ্বংসের পথে রয়েছে সুতা ব্যবসায়ীরা। আর এই সকল অপকর্মের মূল হোতা হচ্ছে ওসমান পরিবার। ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণে টানবাজারে সকল অপকর্ম পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ডস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা। এই লিটন সাহার শেল্টারে টানবাজারের সুতার কালোবাজারী ব্যবসা পরিচালনা করতেন সানি সাহা ও সুব্রত সাহা।

 

 কিন্তু তাদের সকলের মূল হোতা ছিলেন এম.এম ট্রেডার্সের মালিক সানি সাহা ও এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স এর মালিক সুব্রত রায় প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার অবৈধ বন্ড সুতা চোরাইপথে নারায়ণগঞ্জে আনা-নেওয়া করতেন। বর্তমানে চোরাইপথে বন্ডের সুতার ব্যবসা করে শত কোটি টাকার মালিক বনেছেন এরা। সূত্র আরো বলছে, এক সময় কুমিল্লা জেলায় মাদকের ব্যবসা করতেন সানি সাহা। মদ, বিয়ার সহ বিভিন্ন মাদক এলাকায় এলাকায় খুচরা বিক্রি করতে তিনি। ২০১৩ সালে মামা অঞ্জন সাহার হাত ধরে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায় আসেন সানি সাহা। বেকার ভাগিনাকে নিজের অফিসেই ১৮ হাজার টাকা মাসে বেতন দিয়ে দেখা শুনার কাজে রাখেন।

 

 কিন্তু সেই বেকার ভাগিনা ১০ বছরে কালোবাজারীর সুতা ব্যবসা করে হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। বর্তমানে তার রয়েছে টানবাজার আশা হলের সামনে সানি সাহা ও সূব্রত রায় মিলে জমি ক্রয় করেছেন প্রায় ১১ শতাংশ, ৪টি দামি গাড়ি, জামতলা এলাকায় মালিকানাধীন হিরা ড্রাগন প্যালেস, আমলাপাড়ায় গ্রীন ফার্মা ও পদ্মা সিটি প্লাজার ২য় তলায় রয়েছে নিজের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এম.এম ট্রেডার্স এসোসিয়েশন। 

 

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় তার রয়েছে বিভিন্ন সম্পত্তি। একই সাথে তার ব্যাবসায়ীক পার্টনার সুব্রত রায় থাকেন গলাচিপা এলাকায় তিনি ও সানি সাহার সঙে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ কালো টাকায় কিনছেন জমি। বর্তমানে তারা দুইজন টানবাজারে একটি ২৬ শতাংশ জায়গা কিনার পায়তারা করছেন। এদিকে সুব্রত রায় ভারতের তাদের আত্মীয়দের কাছে আগে থেকেই হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করে রেখেছেন, সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির লক্ষে। 

 

তা ছাড়া ও টানবাজারে এই দুইজন শেল্টার দিয়ে পালতেন একটি বাহিনী। যারা নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় অপকর্ম পরিচালনা করতেন। এদিকে সানি-সুব্রতের চোরাইপথে আনা বন্ড সুতার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা থেকে রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। লিটন সাহার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এই সিন্ডিকেটের এই অবৈধ ব্যবসার বিরাট অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সরকার। তাই অনতিবিলম্বে এই সিন্ডিকেটে জড়িতদের সম্পদের অনুসন্ধান করতে দুদকের প্রতি আহবান জানিয়েনে ব্যবসায়ীরা। 

 

সানি সাহা, সুব্রত সাহার এসবকিছুর ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অতিদ্রুত খোঁজ নেয়ার দাবি জানিয়ছেন ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া বন্ড সুবিধায় দেশীয় বাজারে বিদেশি সুতা ও কাপড় ঢুকে পড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় বস্ত্রখাত। প্রায় ৪ শতাধিক স্পিনিং মিলে অবিক্রীত সুতার পরিমাণ ৮ লক্ষাধিক টন যার মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা এবং হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এদিকে গত ২০১৫ সালে থেকে এক কেজি সুতা উৎপাদনে যেখানে খরচ হতো সাত টাকা সেখানে বর্তমান খরচ ২৪ টাকা। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির মূল কারণ ক্রমাগত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি।

 

 পূর্বের মূল্যে বিক্রয় করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মিল মালিকরা। এভাবেই ওসমানের নামে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গিয়ে দফায় দফায় হচ্ছেন অবৈধ সম্পত্তির মালিক। তা ছাড়া গত ৫ আগষ্ট পটপরিবর্তনের পরপরই সানি সাহা ও সুব্রত সাহা আত্মগোপনে চলে গেলে ও আবারো টানবাজারকে ওসমানী সাম্রাজ্যে তৈরির লক্ষে তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীবৃন্দ।