নিতাইগঞ্জে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রতিদিন দু’লাখ টাকা চাঁদা আদায়
পরিচয় প্রকাশ গুপ্ত
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৫:১৯ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার
# সেনা সদস্যদের সুদৃষ্টি কামনা
গেলো আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত স্বৈরাচারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জে ছাত্ররা বাজার মনিটরিংয়ে নেমেছিল। তখন বাজারে ছাত্রদের আনাগোনায় চাঁদাবাজ ও অসৎ ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল। এর একটি ইতিবাচক ফল ফলেছিল বাজার দরে। কাঁচা বাজারে সামান্য হলেও শাক-সবজির দাম কমেছিল। শতাব্দী প্রাচীন নিতাইগঞ্জের পণ্যবাজারের সিন্ডিকেটগুলো ভেঙ্গে পড়েছিল। আতঙ্কিত সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ভয়ে তাদের গোপন গুদামের মালামাল খোলা বাজারে ছেড়ে দিয়েছিল। এর ফলে, যৎসামান্য হলেও তেল, চিনি ও ডালের দামও কমেছিল। ছাত্রদেও নজরদারীর কারণে গরুর গোস্তের দাম কমেছিল কেজিতে দেড়শ’ টাকা।
তবে, আগস্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বর আসতেই ছাত্রদের বাজার মনিটরিং বন্ধ হয়ে যায় । বাজারের সকল পর্যায়ে আবার ফিরে আসে পূর্বাবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, কোথাও কৌশল পাল্টিয়ে পুরনেরা, আবার কোথাও ভোল পাল্টিয়ে নতুন চাঁদাবাজরা এসে বাজার দখল নেয়।
নিতাইগঞ্জের ট্রাক ড্রাইভারদের অভিযোগ, দেশের সবচেয়ে বড় পণ্য বাজার নিতাইগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ৮০ থেকে একশ’টি পণ্য বোঝাই ট্রাক দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এখানে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নামে প্রতিটি ট্রাক থেকে চাঁদা তোলা হয় ২২শ’ টাকা করে। প্রতিদিন উত্তোলিত চাঁদার পরিমাণ কম বেশী দু’লাখ টাকা। এখানে ২২ বছর ধরে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নে কোন নির্বাচন নেই। অতীতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে বন্দোবস্তকারীদের হটিয়ে জাপা নেতা নাসিম ওসমান এই ইউনিয়নটি দখল করেন।
তারপর থেকে আর কখনো এ সংগঠনটি দখলমুক্ত হয়নি, তবে হাত বদল হয়েছে। হাজী রিপন, মানিক, সানাউল্লাহ, আনু ইত্যাদি ব্যাক্তিবর্গ কেউ নাসিম ওসমানের ছবি টানিয়ে, কেউ শামীম ওসমানের ছবি টানিয়ে, আবার কেউ হাজী সাহেবের (আজমেরী ওসমানের) ছবি টানিয়ে ইউনিয়ন অফিস দখল করে এখানে বছরের পর বছর চাঁদাবাজী করেছেন। দখলদার এ সব নেতারাই চাঁদার টাকা ভাগ করে খেয়েছেন। আর, ভাগ পেয়েছে শক্তির জোগানদার রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ ও প্রশাসনের কিছু কর্তাব্যাক্তি।
আগষ্ট বিপ্লবের পর পূর্বে ইউনিয়নের নেতৃত্ব দানকারী আনু, পলাশ, রাজিব এরা আত্মগোপন করেছে। বর্তমানে এদের পরবর্তি সারির নেতা জুয়েল, জামান, রবি, বিল্লাল, মুন্না মৃধা, মমিন, মোক্তার প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ এ চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিচ্ছে।
শহরের নেতৃস্থানীয়দের মতে, চাঁদার টাকা ব্যবসায়ীরা পণ্যের ক্রয়মূল্যের সঙ্গে যোগ করে এবং তারপর বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তা সাধারণের কাছ থেকেই আদায় করা হয়।তাই, চাঁদাবাজী অবশ্যই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির একটি কারণ। বর্তমানে দেশে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হয়েছে। নাগরিক নেতৃবৃন্দ মনে করেন, নিতাইগঞ্জের এই চাঁদাবাজীর প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন।