বিএনপিতে চাঁদাবাজ-অস্ত্রবাজের ঠাঁই নেই
আল আমিন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১০:২৯ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোববার
১৬ বছর আমাদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার মিথ্যা মামলা-হামলা করেছে।
আয়নাঘর বানিয়ে সেখানে নিয়ে মানুষের জীবন সম্পূর্ণ ভাবে বিপন্ন করে দিয়েছে। অনেক মানুষকে তারা হত্যা করেছে। আমরাতো সেই দিন জানতাম কারা মামলা করেছে, তাদের দ্বারা সৃষ্ট আদালতে আমাদের বিচার হবে এবং বিচারে আমাদের বিরুদ্ধে রায় হবে। জানার পরেও তো আমরা দেশ ছেড়ে যাই নাই।
গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৮ নং ওয়ার্ডের ২নং ঢাকেশ্বরী এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, লুটপাট, নৈরাজ্য ও অপকর্মের প্রতিবাদে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা আইনকে সম্মান করে আইনের মুখোমুখি হয়েছি। প্রতিদিন প্রায় আদালতে গিয়ে সবাই হাজির হয়েছে, নয়তো জেলে গিয়েছি কিন্তু দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাই নাই। যেই শেখ হাসিনা এত দম্ভ করেছে শেখের মেয়ে পালিয়ে যায় না, তাহলে আপনি পালিয়ে গেলেন কেন? আপনাকে তো কেউ একটি ফুল দিয়েও ঢিল মারে নাই। আপনি গেলেন কেন?
এই জন্য গিয়েছে যে, ১৬ বছর এত অপরাধ করেছে, সেই অপরাধগুলা তার চোখের সামনে যখন ভাসে তখন আইনকে ফেস করবে এমন সাহসিকতা তার ভিতরে নাই। সেই জন্য তার সাথে যারা এই স্বৈরশাসনকে পাকাপোক্ত করেছিল, তার শক্তি যুগিয়েছিল তাদেরকে ভুলে গেছে। তাদের প্রতি সামান্য মমত্ববোধ, সামান্যতম ভালবাসা ছিল না। তাদেরকে রেখে শুধু দুই বোন পালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এখন তার সহকর্মীরা কেউ লুকিয়ে আছে, কেউ গ্রেফতার হয়, আজকে কঠিন দূর্দশার মধ্যে আছে। তারাতো অনেক সম্পদ, অনেক অর্থ উপার্জন করেছিল, আজকে সেই অর্থ-সম্পদ কোথায়? অর্থ-সম্পদ আজ তুচ্ছ। সেই অর্থ বিদেশে নিয়েও ভোগ করার মত পরিবেশ নাই। এদেশেই অর্থ-সম্পদ করেছে সেই সম্পদ ভোগ করার মত পরিবেশ নাই। কি নির্মম, কি নিষ্ঠুর, আজ তারা পলাতক থাকতে হয়, আমরা খুঁজেও পাই না।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, ৫ তারিখে দেশ পুনরায় স্বৈরাচার মুক্ত হওয়ার পরে বিএনপি তো ক্ষমতায় নাই। অন্তর্বর্তী কালীন সরকার ক্ষমতায় আছে। আপনারা যেদিন ক্ষমতায় ছিলেন, মিথ্যা মামলা দিয়েছিলেন, সেদিন আমরা ভয় করি নাই। এখনতো বিএনপি ক্ষমতায় নাই, যে অন্যায় করেছেন সেজন্য আজকে বিএনপি আপনাদের চেপে বসবে, আপনাদেরকে শায়েস্তা করবে। এখন তো অন্তর্বর্তী কালীন সরকার, এই সময় আপনারা পালিয়ে গেলেন কেন?
কেন সাহস পান না এ জায়গায় থাকতে, আইনকে ফেস করতে? কারণ অপরাধের বোঝা এত বেশি যে, আজকে আপনারা শাস্তির কথা ভেবে দিশেহারা। এই অন্যায় থেকে মাফ পাওয়ার যোগ্যতা আপনাদের নেই। এটা আপনাদের কাজেই প্রমান হয়, কারণ আপনারা পালিয়ে গেছেন। আমরা আহ্বান করি আজকে নির্দলীয় সরকার, বিএনপি সরকার নয়।
আপনারা সাহস রেখে দেশে ফিরে আসেন। আপনারা ঘর থেকে যারা পালিয়ে আছেন তারা বেড়িয়ে আসেন, আইনের কাছে নিজেদেরকে সোপর্দ করেন। বিএনপি না যে প্রতিশোধ নিবে, জামাত ক্ষমতায় নাই যে প্রতিশোধ নিবে। অন্তর্বর্তী সরকার আছে, ন্যায় বিচারই আপনারা পাবেন, ন্যায় বিচারই প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা আর পালিয়ে থাকবেন না। এই পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আপনারা কি করেছেন, দীর্ঘদিনের একটি রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামীলীগ। চিরদিনের জন্য আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। নেতাকর্মীদের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। নেতাকর্মীরা যে আজ ইজ্জত-সম্মান নিয়ে বেরুবে, এমন মুখ তাদেরকে রেখে যান নাই।
সবাই অপরাধ করে নাই কিন্তু আপনারা অপরাধ করে অপরাধের বুঝার গ্লানি আওয়ামীলীগ যারা করতো সবার উপরে দিয়ে গেছেন। কাজেই এই আওয়ামীলীগ কি মুসলিমলীগ হয়ে থাকবে এদেশে। নাকি আওয়ামীলীগ আবার কোনদিন জনগণের কাতারে আসবে আমরা জানি না।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, ভাল মানুষ যে দলে, যেখানেই থাকুক না কেন, সেই মানুষের কদর হবে, সেই মানুষ অবশ্যই টিকে থাকবে। বাংলাদেশ থাকবে, সেই মানুষও থাকবে, থাকবে না অপরাধীরা, থাকবে না অন্যায়কারীরা। যারা নিরাস্ত্র মানুষের বুকে গুলি চালিয়েছে এই নারায়ণগঞ্জে তাদের ছবি রয়েছে কাদের হাতে সেদি অস্ত্র ছিল, কারা লুটপাট করেছে। আইন তাদেরকে নিশ্চই ছাড়বে না, জনগনও তাদেরকে ছাড়বে না। অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে বিচারকে শুধু ভয় পেয়ে তারা পালিয়ে নেই। তারা বিদেশে এবং দেশে থেকে ষড়যন্ত্র করছে, কি করে দেশের অর্থনীতিকে আবার ধ্বংস করা যায়। কি ভাবে বিরোধ-বিবেধ সৃষ্টি করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নষ্ট করা যায়। এই ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করে যাতে আমাদের অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ৫ তারিখের অর্জনকে তারা নস্যাৎ করতে না পারে। নতুন চিন্তা চেতনা নিয়ে, নতুন দেশপ্রেম এবং মানুষের সেবার মন-মানসিকতা নিয়ে দেশের সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে আগামী দিন এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে, আমাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
দলের মধ্যে কোন স্বৈরাচারী শাসকের আমলে যেমন সন্ত্রাসী ছিল, আমাদের দলে থাকতে পারবে না। আমাদের দলে কোন চাঁদাবাজ থাকতে পারবে না, অস্ত্রবাজ থাকতে পারবে না, নেশার সাথে যারা জড়িত তারাও থাকতে পারবে না। শুধু থাকতে পারবে ভাল মানুষ। এই ভাল মানুষ নিয়ে বিএনপিকে আবার গড়ে তুলতে হবে।
নাসিক ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ডিএইচ বাবুলের সভাপতিত্বে উক্ত জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক আব্দুল হাই রাজু, মাসুকুল ইসলাম রাজী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো: ইকবাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ হালিম জুয়েল, থানা বিএনপির সহ-সভাপতি রওশন আলী, জিএম সাদরিল, গোলাম মোস্তফা মেম্বার।
সেলিম মাহমুদ, এড. মাসুদুজ্জামান মন্টু, যুগ্ন সম্পাদক আবুল হোসেন, কামরুল হাসান শরীফ,সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ডা. মাসুদ করিম, ত্রান ও পূনর্বাসন সম্পাদক তৈয়ব হোসেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক আহবায়ক মমতাজ উদ্দিন মন্তু, যুগ্ন আহ্বায়ক সাগর প্রধান, মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক আয়েশা আক্তার দিনা, ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আনিসুর রহমানসহ প্রমূখ। এন. হুসেইন রনী /জেসি