রেলপথে আশার আলো!
ফরিদ আহমেদ রবি
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:৪১ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার
সুদীর্ঘ কাল যাবত অবহেলিত দেশের প্রাচীনতম ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়নে ক্ষীণ আশার আলো দেখা দিয়েছে।এ লক্ষ্যে সম্প্রতি রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নারায়ণগঞ্জ পরিদর্শন এবং আশ্বাসবাণী এমন আশা জাগানিয়া আলো দেখাচ্ছে। ক্ষীণ বলার কারণ এমন আশ্বাস রাণী বার বার দেয়া হলেও তা কখনও আলোর মুখ দেখেনি।তাই আশংকা থেকেই যায় আশ্বাস বাণী বাস্তবে রূপ নিবে তো?
দেশের সবচেয়ে বেশি যাত্রী চলাচলকারী পরিবহন রুট ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ। দৈনন্দিন প্রয়োজনে এই পথে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক যাতায়াত করে থাকে।এক সময়ের প্রধান পরিবহন রেল বিভিন্ন কারণে জৌলুস হারিয়ে টিমটিম করে চলছে।রেলের পরিবর্তে সড়ক পথে বাস সার্ভিস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যেখানে রয়েছে যাত্রীদের গলা কেটে অর্থ উপার্জনের অনৈতিক প্রতিযোগিতা,রয়েছে প্রভাবশালী মহলের প্রত্যক্ষ ভূমিকা।
যাদের কারণে রেলপথ উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না বলে সচেতন মহলের ধারণা।রেলপথ ডাবল এবং ডুয়েলগেজ করার কাজ শুরু হয়ে মাঝপথে থেমে যাওয়া কোন ষড়যন্ত্রের অংশ কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।কারণ একই সময়ে শুরু হওয়া পদ্মা সেতু পর্যন্ত রেলপথের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে সফল ভাবে সমাপ্ত হয়েছে, যার বড় অংশ ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেলপথের অন্তর্ভুক্ত। তাহলে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত কাজটুকু কেন অসমাপ্ত রয়ে গেল?
নারায়ণগঞ্জ পরিদর্শনে আসা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভাষায় চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ আলাদা প্রকল্প, সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত চীনা কোম্পানির অনভিজ্ঞতার কারণে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন করে কার্যাদেশ দিয়ে অচিরেই উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। ৬ মাসের মধ্যে কিছু উন্নয়ন দৃশ্যমান হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে।
রেলপথ উন্নয়ন শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ এবং সংলগ্ন এলাকার যাত্রী সাধারণের উপকারে আসবে তা নয় বরং রেলওয়েকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে বড় ভূমিকা পালন করবে।সড়ক পথে বাস চলাচল অত্যন্ত লাভজনক এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় বিভিন্ন অজুহাতে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি বলে যে নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার একটি সুবর্ণ সুযোগ এসেছে বর্তমান রেল কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের হাতে।নির্দলীয় সরকার দেশ পরিচালনা করছে।
পরিবহন ব্যবসায় সরকারের আশির্বাদপুষ্ট সংশ্লিষ্ট কেউ নেই এমন ধারণা করা খুবই স্বাভাবিক।সংগত কারণেই আশা করা যায় দীর্ঘদিন যাবত থেমে থাকা ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেলপথের উন্নয়ন কাজে পরিবহন ব্যবসায় জড়িত প্রভাবশালী কোন মহলের কথিত ষড়যন্ত্র বা বাধা থাকবে না। নতুন করে প্রকল্প পাশ করানোর কোন ঝামেলাও নেই।কাজ অনেকদূর এগিয়ে থেমে আছে।
অনেক টাকা ইতিমধ্যে খরচও হয়ে গেছে। কাজ সম্পন্ন করা না হলে পুরো টাকাই গচ্চা যাবে।সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পটি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা গেলে তা হবে সবার জন্যই মঙ্গলজনক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তা যেমন হবে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ পাশাপাশি সরকারের ক্ষেত্রেও হবে তা একটি লাভজনক প্রকল্পের সফল সমাপন।
সড়ক পরিবহন ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি নারায়ণগঞ্জ বাসী সেদিনের অপেক্ষায় রয়েছে যেদিন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন রেলপথে বাধাহীন ভাবে চলবে দুই জোড়া ট্রেন। সময় এবং অর্থ সাশ্রয়ী এমন ট্রেন চলাচল ব্যবস্থায় উপকৃত হবে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার নারায়ণগঞ্জ বাসী।লাভবান হবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তথা জাতি।সাধারণ মানুষের এমন প্রত্যাশা যেন শুধু কথায় না থেকে বাস্তবে রূপ নেয়, ক্ষীণ আশার আলো যেন পরিপূর্ণ আলোক শিখায় রূপান্তরিত হয় সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে নারায়ণগঞ্জ বাসী। এন. হুসেইন রনী /জেসি
লেখক: বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা