বুধবার   ১৬ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ১ ১৪৩১   ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি থেকে দুবাইয়ে শামীম ওসমান

লতিফ রানা

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫৬ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২৪ বৃহস্পতিবার

 

 

# একদিন আগে সর্বশেষ তাকে আরব আমিরাতে দেখা গেছে বলে জানা গেছে
# গডফাদার, পরহেজগার, চাঁদাবাজ আবার নায়কের খেতাবও পেয়েছেন শামীম ওসমান

 

নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সন্তান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান শুধু নারায়ণগঞ্জ জুড়েই যে আলোচিত তা নয়। দীর্ঘদিন যাবতই তিনি জাতীয় পর্যায় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পরিচিতি ভাইরাল পারসনের খ্যাতাব পেয়েছেন। কখনও গডফাদার, কখনও পরহেজগার, আবার কখনও চাঁদাবাজ, কখনও নায়কের খেতাবও পেয়েছেন এই শামীম ওসমান।

 

তার ‘খেলা হবে’ ডায়ালগটি জাতীয় পর্যায়ে তৎকালীন সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মুখ থেকে শুরু করে দেশের বাইরে পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রীর মুখেও ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। তবে সর্বশেষ তার নামের পাশে বোরকা শব্দটি অর্থাৎ বোরকা শামীম ওসমান তকমাটি বেশ সাড়া ফেলেছে। এমনকি শামীম বিরোধী ও সমালোচকদের ধারণা ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গোপনে নিজের পরিচয় লুকাতে আবারও সেই বোরকা পড়েই নাকি দেশ ত্যাগ করেছেন নারায়ণগঞ্জের এক সময়ের প্রভাবশালী ও জাঁদরেল এই নেতা। 

 

এরই মধ্যে কখনও তাতে দিল্লীর নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে, আবার কখনও তাকে আরব আমিরাতের আজমান সিটি সেন্টারে প্রকাশ্যে দেখা যায় যায় বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। তবে এরই মধ্যে তার ছোট একটি ভিডিও ক্লিপও ভাইরাল হয়, যেখানে তাকে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে দেখা যায় এবং দেশে ফিরতে পারবেন কি না সন্দেহ প্রকাশ করে সকলের দোয়া চান। তবে পরে ভিডিওটি পুরানো বলে জানা গেছে। কিন্তু গত ১৯ সেপ্টেম্বরে শহরের ডিআইটিতে শামীম ওসমান তার চেল্যাদের নিয়ে অস্ত্র নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গুলি করার ভিডিওটি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।

 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালালে ওসমান পরিবারের সদস্যদের আর দেখা পাওয়া যায়নি। সে সময় যেসব মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের অবস্থান জানতে উৎসুক হয়ে পড়ে পুরো দেশ তাদের তালিকায় আছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি একেএম শামীম ওসমানের নাম। শামীম ওসমান ও তার স্বজনরা দেশে নাকি বাইরে আছেন তা নিয়েও ছিল আলোচনা-সমালোচনা। 

 

এরপর গত ১৪ আগস্ট মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের একটি রিসোর্টে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান রয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রিসোর্টটির সামনে ভীড় করেন ছাত্র-জনতা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে জানতে পারে বিষয়টি গুজব। স্বৈরাচার পতনের ঠিক একমাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর তাকে দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগায় দেখা যায় বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়। ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আকাশ হক তাকে সেখানে দেখেছেন।

 

রাত ৯টা ৫ মিনিটে শামীম ওসমানের ছবিও তুলেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে আকাশ হক গণমাধ্যমকে জানান, রাতে তিনি দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করতে যান। এ সময় তিনি শামীম ওসমানকে দেখতে পান। শামীম ওসমানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। প্রমাণস্বরুপ তিনি ছবি তুলে রেখেছেন বলেও জানান। এরপর গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার আরব আমিরাতের আজমান সিটি সেন্টারে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায় বলে খবর প্রকাশ হয়। স্থানীয় সময় রাত নয়টায় সিটি সেন্টারে তাকে ঘুরতে দেখেন সে সময় সেখানে থাকা বাংলাদেশীরা। 

 

তার সঙ্গে বোরকা পরিহিত আরও দু’জন নারীকে দেখা গেছে বলে খবরে প্রকাশ করা হয়। সে সময় তিনজনের হাতেই লাল সুতা বাঁধা ছিল বলে জানা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি ভারতের নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ থেকে এই সুতা বেঁধেছেন তারা। মিডিয়াকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স হাতে শামীম ওসমান দ্রুত শপিং মলটিতে থাকা একটি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানে যান। এসময় তিনি তার ছবি তুলতে বারণ করেন। অনেকেই মনে করেন এবারও তিনি বোরকা পড়েই পালিয়েছেন বলে। অথচ দেশে থাকতে ক্ষমতাবান হিসেবে গডফাদার, বিভিন্ন ওয়াজ নসিহতে বক্তব্য রাখার জন্য পরহেজগার, তার সমালোচকদের মুখ থেকে চাঁদাবাজ এবং ভক্তদের কাছ থেকে হিরো বা নায়কের খেতাব পান এই শামীম ওসমান।

 

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারে পতনের একদিন আগে অর্থাৎ গত ৩ আগস্ট শামীম ওসমান দেশ ছেড়েছেন বলে চাউর হয়। পরে গণমাধ্যমে দেখা যায় সেদিনই তিনি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন। এ সময় তিনি দেশেই আছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। তবে এরপর আগস্টের শেষ দিকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। 

 

যেখানে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার চেল্যাদের নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি ছুড়ছে। সেই মিছিল থেকে বিভিন্নজনের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রদর্শন ও প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা গেছে অনেককেই। সেই ঘটনায় শামীম ওসমানসহ অস্ত্রধারী ও গুলিবর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। 

 

এর মাঝে অবশ্য আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে শামীম ওসমানকে বলতে শোনা যায় তিনি একজন মানুষ, ফেরেশতা বা শয়তান নন। তাই ভুল হতেই পারে। রাজনীতিতে অনেক কথা বলতে হয়, যা হয়তো অনেকের কষ্টের কারণ হয়।

 

 সেখানে তিনি সকলের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চান এবং বলেন, আমি ফিরব কিনা জানি না। আপনারা দোয়া করবেন।’ ভিডিওটি পালিয়ে যাওয়ার পরে মনে করে অনেকেই বিভিন্ন পোস্ট দিতে শুরু করেন। কিন্তু পরে জানা যায় আসলে ভিডিওটি একবছর আগে যখন তিনি ওমরা করতে যাচ্ছেন তখন তিনি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভিডিও বার্তাটি প্রকাশ করেছিলেন। তবে সর্বশেষ তিনি আরব আমিরাতে আছেন বলেই খবর পাওয়া গেছে।