ঝুটের নিয়ন্ত্রণ নিতে উৎপাত, গ্রেফতার পাগলা হামিদ- আনিস
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৪:১৪ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার
৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও ওই সরকারের আমলের কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা ভোল পাল্টে আগের মতোই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপি নেতাদের সাথে আঁতাত করে এমন কর্মকাণ্ড প্রকাশ পাচ্ছে। বিতর্কিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের দুর্ধর্ষ ক্যাডার পাগলা হামিদের প্রত্যক্ষ মদদে ফতুল্লার বিসিক ও তৎসংলগ্ন এলাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি মহল। বেশ কিছু মামলার আসামি পাগলার হামিদের প্রত্যক্ষ মদকে এবার বিকেএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর আহমেদের ‘মাদার কালার লিমিটেডে’ গিয়ে ঝুটের জন্য উৎপাত শুরু করেছে বিএনপি নাম ধারী সন্ত্রাসীরা। এনিয়ে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে গতকাল সেনাবাহিনীকে জানানো হলে আনিস নামের বিএনপি কর্মীকে করে। পরে তাকে ফতুল্লা থানায় সোপর্দ করা হয়। ফতুল্লার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগের চিন্তাকে জানান, ‘আনিস নামে একজনকে আটকের পর সেনাবাহিনী থানায় হস্তান্তর করেছেন। তার বিরুদ্ধে ঝুট সংক্রান্ত বিষয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে ওসি জানান, তার পূর্ববর্তী কর্মকাণ্ডের রেকর্ড খারাপ। তাকে আগস্ট মাসের একটি চুরির মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিকেএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ‘মাদার কালার লিমিটেডের’ ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনসুর আহমেদ যুগের চিন্তাকে বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ১০/১২ দিন পর থেকেই বিএনপির বিভিন্ন সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা পরিচয়ে আমার প্রতিষ্ঠানে ঝুটের জন্য উৎপাত শুরু করে। যারা এসেছে আমি তাদের বলেছি, কোন সহায়তা লাগলে নিতে পারো, কিন্তু ঝুট দিতে পারবো না। আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঝুট আমিই রক্ষণাবেক্ষণ করি। যেহুতু প্রতিষ্ঠানে তীব্র গ্যাস সংকট রয়েছে, সেহুতু ছোট ঝুটগুলো আমি পুড়িয়ে জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করি। আর বাকি অংশ আমার ভাতিজা তাহেরকে দিয়ে যেখানে ঝুট বিক্রি হয় সেখানে বিক্রি করি। এতে আমি অন্যদের তুলনায় কিছুটা ভালো লাভবান হই। আমার সৎসাহস আছে, তাই আমি এই কথাগুলো সবাইকে বুঝিয়ে বলতে পারি। কিন্তু এখন সমস্যা করছে, আজমেরী ওসমানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত পাগলা হামিদ। সে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাদের পাঠাচ্ছে ঝুট নেয়ার জন্য। আধিপত্য বিস্তারের জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে এই পাগলা হামিদ। বেশ কিছু মামলার আসামি গুন্ডা পাগলা হামিদ পঞ্চবটির চাঁদনী হাউজিং এলাকায় মাদকব্যবসা, অবৈধ গ্যাস ব্যবসা, ঝুট ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। সোমবার তাঁর ইন্ধনে আনিস নামের একজন লোকজন নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠানে উৎপাত করেছে। আমি বিষয়টি সেনাবাহিনীর কাছে জানিয়েছি। আশা করি তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সূত্র জানিয়েছে, ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের শাসনগাও চাঁদনী হাউজিং এলাকার পাগলা হামিদ একসময় প্রাইভেট গাড়ি চালক ছিলেন। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তিনি নারায়ণগঞ্জের গডফাদার আজমেরী ওসমানের একান্ত প্রিয় আস্থাভাজন ও সেকেন্ড ইন কমান্ড হয়ে উঠেন এবং নিজেকে আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এভাবে ধীরে ধীরে চাঁদনী হাউজিং তথা বিসিক শিল্প নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করেন। বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী থেকে জোরপূর্বক ওয়েজটেজ মালামাল, জুট, লেফটওভার নিয়ে নিতেন। তাকে ছাড়া অন্যত্র গার্মেন্টস মালিকরা ওয়েজটেজ মালামাল, জুট, লেফটওভার বিক্রি করতে পারতেন না। তার ভয়ে এলাকার মানুষ সবসময় আতংকিত থাকত। তিনি চাঁদনী হাউজিং এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে মাসিক চাঁদা আদায় করতেন। চাঁদনী হাউজিং ও এর আশেপাশে এলাকায় তাকে চাঁদা না দিয়ে কেউ বাড়ি নির্মাণ করতে পারত না। তিনি জোরপূর্বক বিচার শালিস করে টাকা আদায় করতেন। এরআগেও ২০২২ সালের ১৭ মে আব্দুল হামিদ ৭/৮ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক নিয়ে ফতুল্লা বিসিক নগরীর পাশে মাদার কালার লিমিটেড শতভাগ রপ্তানীমূখী এই শিল্প প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীদের অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠানের ভিতর প্রবেশ করে এবং হুমকি দিয়ে বলে , এই প্রতিষ্ঠানের জুটের মালামাল, লেপটওভার তাকে না দিলে আমাদেও প্রতিষ্ঠানের যে কোনো বড় ধরনের ক্ষতি করিবে এবং জানে মেরে ফেলবে। এই ঘটনায় পরে মাদার কালার লিমিটেড এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফতুল্লা থানায় সাধারন ডায়েরি করেন যার জিডি নং- ২০৫৩ (তাং-২৯/০৯/২০২২ইং)। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আব্দুল হামিদ বর্তমানে আত্মগোপনে থাকলেও মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে এসে তার অনুসারীদের সহ এবং কখনও কখনও তার অনুসারীরা এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংঘটিত করছে এবং বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে ওয়েজটেজ, জুট, লেফটওভার মালামালের জন্য হানা দিচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এসকল অবৈধ কার্যকলাপের মাধ্যমে তিনি ও তার অনুসারীরা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এই মুহুর্তে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শিল্প কারখানা সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে এবং এলাকায় শান্তি শৃংখলা বিনষ্ট হবে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি নাসিম ওসমানের পুত্র আজমীর ওসমান অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত বাহিনী নিয়ে মহড়া দিয়েছেন। তার অন্যতম সহযোগী ফতুল্লা শাসনগাও চাঁদনি হাউজিংয়ের অঘোষিত ডন, বহু অপকর্মের হোতা আ. হামিদ ওরফে পাগলা হামিদ। যিনি আজমীর ওসমানের শেল্টারে থেকে গড়ে তোলেন বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। চাঁদনি হাউজিংয়েরসহ ফতুল্লা মানুষ হত্যা, গ্যাস চুরি, মাদক ব্যবসা,ভূমিদস্যুতা থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই যা পাগলা হামিদ করেনি।
সূত্র জানিয়েছে, পাগলা হামিদ ছিলেন এক সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি কবরীর ক্যাডার যিনি সেই সময় থেকে নানা অপরাধে সাথে যুক্ত। ২০১৪ সালে শামীম ওসমান এমপি হলে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদলের গাড়ীর ড্রাইভার হিসেবে জনসম্মুখে ফিরে আসে। তার পরে শামীম ওসমান এর সাথে মিল দেয় এবং গত বেশ বছর যাবৎ সন্ত্রাসী আজমীর ওসমানের সাথে মিল দিয়ে নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছিলো। ফতুল্লা শাসনগাও এলাকা সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে গেলে চাঁদা না দিয়ে গেলে তাকে আটকে রাখা হতো এমন অভিযোগ হরহামেশাই পাওয়া যেত হামিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন বিএনপির নেতাদের উপর ভর করে আবারো মূর্তমান আতঙ্কে পরিণত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাগলা হামিদ।
এদিকে সর্বশেষ ফতুল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমানের অন্যতম প্রধান সহযোগী ও ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামী সন্ত্রাসী পাগলা হামিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফতুল্লা থানাধীন চাঁদনী হাউজিং এলাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয় কুখ্যাত এই সন্ত্রাসীকে। পরে ফতুল্লা মডেল থানায় সোপর্দ করা হয় তাকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে পাগলা হামিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।