মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৭ ১৪৩১   ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

বহিষ্কার-শোকজেও থামছে না বিএনপির ‘অবাধ্য’ নেতারা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:০৭ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ শুক্রবার

# ৮ জনকে বহিষ্কার ও ১০ জনকে শোকজ করা হয়েছে : গিয়াস উদ্দিন

# মহানগরে পদধারী কোন নেতা অপকর্মের সাথে যুক্ত নয় : এড.সাখাওয়াত

সারাদেশে বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে পুরো পার্টির বদনাম হচ্ছে। যার কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে। আন্দোলনের আগে বিএনপির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিলো। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে শেখ হাসিনাকে হটিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাচুত্য হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। যাকে ঘিরে পালিয়ে যায় বহু এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালীরা। যার কারণে তাদের দখলকৃত স্থানগুলো শূন্য হয়ে পরে। বর্তমানে সেই শূন্যস্থান ভরাট করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

 

তবে গত ৫ আগষ্টের পর থেকে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা জুড়ে যত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, ডিস ব্যবসা, ইন্টারনেট ব্যবসা, ওয়েস্টিজ ও ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, হাট-ঘাট, বিভিন্ন মালিক সমিতি, ভূমিদূস্যতা, বালু মহল, বিদ্যুৎ চোর সিন্ডিকেট, গ্যাস সিন্ডিকেট, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি, পরিবহন সেক্টর, বিদ্যুৎ খাত, টেন্ডারবাজি, শ্রমিক সংগঠন এমন শত শত আওয়ামী লীগের দখলে থাকা সবই বর্তমানে বিএনপির দখলে চলে এসেছে। এমন দখল-দারিত্ব নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ। তা ছাড়া বিএনপির হাইকমান্ড থেকে শুরু করে যৌথবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল পর্যায়ের কর্মকতাদের কাছে আছে তালিকা।

 

এদিকে গত ২ মাস বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে টানা লুটপাট-দখলদারিত্ব চালালেও কোন অভিযান প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু বর্তমানে যৌথবাহিনীর এক্যাশন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, তারাবো পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান পিন্টু, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেকসহ জেলা জুড়ে আরো বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে যৌথবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযোগের প্রেক্ষিতে আটক করার বিষয় নিয়ে অনেকটাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে বিএনপির বড় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভিতর।

 

তবে আটক বা গ্রেফতার দেখালেও সব্বোর্চ ২ দিন আবার কাউকে কাউকে ৮ ঘন্টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার বেপরোয়া গিরি ছুটছে না এখনো। এদিকে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের তথ্য অনুসারে জানা গেছে, গত ২ মাসে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৮/১০ জনকে বহিস্কার ও ১০ জনকে শোকজ করা হয়েছে আরো করার প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বহিস্কার-শোকজে থামানো যাচ্ছে না বিএনপির এই ‘অবাধ্য’ নেতাকর্মীদের। ইতিমধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে নির্বাচনের পূর্বে জনসমর্থন হারাতে শুরু করেছে বিএনপি।

 


সূত্র বলছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর হামলা, দখল, অর্থ দাবি, আধিপত্য বিস্তার এবং দলীয় নির্দেশনা অমান্য করাসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গত দুই মাসে এক হাজারের বেশি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে বহিষ্কার, অব্যাহতি, পদাবনতি ও কমিটি বাতিল করার মতো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরও অভিযোগ আসা এখনো থামেনি। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জে ও ৮/১০ জন বহিস্কার ও ১০ জন শোকজ কিন্তু অভিযোগ থামানো যাচ্ছে না। 

 

অন্যদিকে সরকার পতনের ২ মাসে নারায়ণগঞ্জের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির ২০/২২ গ্রুপের সংর্ষের ঘটনা ঘটেছে।  যাকে ঘিরে বোঝা যাচ্ছে বর্তমানে বিএনপির শত্রু বিএনপিই। তা ছাড়া বিএনপির মূল পর্যায়ের বহু নেতাকর্মী হেয় করছেন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের যা নিয়ে দলে দফায় দফায় সৃষ্টি হচ্ছে আন্ত কোন্দল। যে পরিপেক্ষিতে নেতা-কর্মীদের গত দুই মাসের কর্মকাণ্ড ১৫ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়া দলকে সমালোচনার জায়গায় নিয়ে গেছে। 

 

বিশেষ করে, একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিএনপি আগামী দিনের রাজনীতিতে বা ক্ষমতায় গেলে নেতা-কর্মীরা কী ধরনের আচরণ করতে পারেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডগুলো সেসব প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এদিকে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ওয়েস্টিজ-ঝুট, পরিবহন সেক্টর, চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকান্ডে আধিপত্য করাকে কেন্দ্র করে চলমান রয়েছে এই সংঘর্ষ। সামনে তাদের নিজেদের নিজেদের মধ্যে বড় বড় প্রকারের সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে নানা অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করেন কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। কিন্তু বর্তমানে কোন নেতাকর্মী দল বা কমিটি নিয়ে কোন চিন্তাই মাথায় রাখছে না। অবাধ্য নেতাদের ঠেকানো অনেকটাই কষ্ট হয়ে পরছে বিএনপির বড় নেতাদের কাছে।

 

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন যুুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ-লুটপাট-দখলবাজদের বিরুদ্ধে আমরা দফায় দফায় সমাবেশ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া শুধু সভা-সমাবেশ করেই আমরা ক্ষ্যান্ত নয়। এই সকল অপকর্মে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির লোকজন যারাই আছে তাদের চিহ্নিত করে আমার নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৮/১০ জন বিএনপি নেতাকে বহিস্কার, এমন ১০ জনকে শোকজ এর বাহিরে বহু নেতাকর্মীকে সতর্ক করা হয়েছে। আর যারা সেই সতর্কে কোন প্রকারের তোয়াক্কা করছে না তাদের তালিকা করে বহিষ্কার বা শোকজের প্রস্তুতি অব্যহৃত রয়েছে। যে যত বড় নেতাই হোক না কেন। যারাই এই গণঅভুত্থানের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইবে, আমি থাকাকালীন তা কখনোই হতে দিবো না।’

 

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘মহানগরের আওতাধীন কোন পদ-পদবীতে থাকা বিএনপি নেতাকর্মী কোন প্রকারের অপকর্মের সাথে যুক্ত নয়। যারা রয়েছে তারা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁত করে সকল অপকর্ম পরিচালনা করতো এখনো তাই করছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে মহানগরীতে কোন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা শোকজ করা হয়নি।’