মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৭ ১৪৩১   ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

না.গঞ্জে আ.লীগকে ওসমান লীগ বানিয়েছে শামীম ওসমান

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:৪২ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৪ রোববার

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকা কালিন সময়ে সিংহ পুরুষ খ্যাত নামেই পরিচিতি পান গডফাদার শামীম ওসমান। এছাড়া তার দেয়া ডায়লগ খেলা হবে দেশ ছেড়ে ভারতে পর্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়া সাবেক এমপি শামীম ওসমান বিভিন্ন সময় বিএনপিকে নিয়ে হুঙ্কার দিয়ে নানা মন্তব্য করেন। যদিও তার মন্তব্যে কর্ণপাত করতেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা। কেননা তারা জানেন এই সিংহ পুরুষের পালিয়ে যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ মানেই ওসমান পরিবারের সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে বুঝানো হত। সেই সুযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং সহযোগি সংগঠনকে শামীম ওসমান নিজের কব্জায় জিম্মি করে রেখেছে। তার কব্জায় এখানকার আওয়ামী লীগ জিম্মি থাকায় নতুন কোন নেতৃত্ব তৈরী হয় নাই। উল্টো এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পর এক মুহুর্তে তা তছনছ হয়ে যায়।

 

এদিকে প্রভাবশালী সাবেক এমপি শামীম ওসমান বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে আলোচনায় থাকেন। তিনি নিজেও আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন। কখনো গরম বক্তব্য দিয়ে আবার কখনো তার অনুসারীদের বিতর্ক কর্মকান্ডের কারনে বিতর্কিত হয়ে আলোচনায় থাকেন। আবার কখনো সন্ত্রাসী তকমা নিয়ে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে তিনি নিজের মত নিয়ন্ত্রন করার জনর‌্য তার অনুসারীদেরকে কমিটিতে রাখেন।  


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওসমান পরিবারের সুখ্যাতির মূলত শুরু হয় ১৯৯৬ সালে শামীম ওসমানের এমপি হওয়ার পর থেকে। সাংসদ নির্বাচিত হয়েই নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে ভয়ংকর রাজনীতিবিদের তকমা লাগে তার গায়ে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে এক কথায় বলতে গেলে প্রায় পুরো নারায়ণগঞ্জ ছিল তার করায়ত্তে। এছাড়া ১৯৯৭ সনে এমপি শামীম ওসমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান। তবে অভিযোগ রয়েছে শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জবাসী। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগও তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পাশা পাশি শামীম ওসমানও বিএনপির প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের কাছে পরাজিত হন। তখন প্রথমে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি যান কানাডায়। পরবর্তিতে ২০০৬ সালে ফিরে এসে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হলেও ২০০৭ সালের ওয়ান ইলিভেনের পট পরিবর্তনে আগের দিন তিনি দেশত্যাগ করেন। ফিরে আসেন ২০০৯ সালের এপ্রিলে। এর পর থেকে তাকে আর পিছনে তাকাতে হয় নাই।

 

দলীয় সুত্রমতে, ২০২২ সনের ২৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবু হানাত মো. বাদল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব্ পান। এর আগে ২০১৬ সনে শামীম ওসমানের আশীবার্দে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের একই পদে আসেন। তাছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সাথে ভালো সখ্যতা রয়েছে। এছাড়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও তিনিই রয়েছেন। মহানগর যুবলীগের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন শামীম ওসমানের আস্থাভাজন শাহাদাত হোসেন সাজনু। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন হলেন গডফাদার শামীম ওসমানের গুরু। সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা হলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

 

 এছাড়া মহানগরে যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলমে হেলাল শামীম ওসমানের গুন্ডা হিসেবে পরিচিত তারা। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক দুলাল প্রধান সহ পুরোটাই ছিল শামীম ওসমানের অনুসারী। তাছাড়া জেলা মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিও শামীম ওসমানের অনুসারী তথা তার ছেলে ওয়ন ওসমানের বন্ধরা ছিলেন। এছড়া কৃষকলীগ, তাতীলীগের কমিটিতে ছিলেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ তথা ওসমান লীগ করতেন। দলীয় কমিটিতে নিজের অনুগতদের পদে রেখে আওয়ামী লীগকে ওসমান লীগ বানিয়েছে শামীম ওসমান। যা বিভিন্ন সময় আড্ডার বৈঠকে অনেক নেতাকর্মী নিজেও বলে বেরাতেন তারা ওসমান লীগ করেন। তাদের কাছে শামীম ওসমানই সব।

 


কিন্তু গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাহগহ করার পর সাবেক এমপি শামীম ওসমান সগ তার গুন্ডা বাহিনী সব পালিয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে শামীম ওসমান বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারত হয়ে দুবাইয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তার ঘিনষ্ঠজনদেরকেও তিনি সেখানে রাখার ব্যবস্থা করতেছেন। তবে আওয়ামী লীগের পতন ঘটার পরে ১৫ আগষ্ট বড় আকারে পালন করলেও এবছর বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্র্দ্ধা জানানোর মত কেউ ছিলেন না। তারা সকলেই পালিয়ে আত্বগোপনে রয়েছেন । আর এতে করে আওয়ামী লীগ যেন নারায়ণগঞ্জ থেকে এক মুহুর্তে তছনছ হয়ে গেছে। ঘুরে দাড়ানোর এখন সুযোগ পাচ্ছে না। কেননা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী পর্যন্ত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত হওয়া হত্যা মামলায় আসামী হয়ে রয়েছেন।