রতন-আরিফের কৌশলে জিম্মি কাশীপুর
যুগের চিন্তা রিপোর্ট :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:৪৭ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৪ রোববার
সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়ন জুড়েই চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, লুটপাট, মামলা বাণিজ্যে, ভূমিদূস্যতা, ড্রেজার ব্যবসাসহ আওয়ামী লীগের ফেলে রাখা সবই পূণরায় দখলে নিতে পায়তারা করছেন কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মঈনুল হাসান রতন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ মন্ডল। গত (০৫ আগষ্ট) স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেই কাশীপুর জুড়ে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে রতন ও আরিফের অনুসারীরা। এদিকে কাশীপুরের ৯টি ওয়ার্ড জুড়ে মিনি ফ্যাক্টরী, বড় বড় গার্মেন্টস, ইট-বালুর ব্যবসা, ড্রেজার সেক্টর, ভূমিদুস্যতা সিন্ডিকেট, ২টি ইজারাদারকৃত বাশেঁর ব্রিজ, ওরিয়ন, বর্জ্য খাতের টাকা, বিভিন্ন সেক্টর থেকে চাঁদাবাজি সবই বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছেন সভাপতি মঈনুল হাসান রতন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ মন্ডল।
বিশেষ করে কাশীপুর ১, ২, ৩, ৭ পুরোই তাদের দখলে রয়েছে। এদিকে আরিফ মন্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিগত দিনে আওয়ামী লীগের ছায়ায় থেকে ব্যবসা বাণিজ্য সচল রেখেছিলেন তিনি। বর্তমানে ও চেয়ারম্যান পুত্র সাজনকে সাথে নিয়েই কাশীপুরে নানাভাবে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে আরিফ। তিনি বর্তমানে কাশীপুরে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুর নাম বিক্রি করেই সকল অপকর্ম করছেন। এদিকে আরিফ মন্ডল গত ১ মাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কাশীপুর থেকেই। একই সাথে কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মঈনুল হাসান রতন জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের নাম প্রকাশ্যে ব্যবহার করছেন কাশীপুরে তার নাম ভাঙ্গিয়েই কাশীপুরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছেন।
এখানে ড্রেজার ব্যবসা থেকে শুরু করে গার্মেন্টস সব চলছে রতনের একক নিয়ন্ত্রণে। আর এসব নিয়ন্ত্রণে তিনি গড়ে তোলেছেন এক বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। যে বাহিনী দিনরাত মহড়া দিয়ে চলেছে পুরো কাশীপুর এলাকা জুড়ে। ইতিমধ্যে কিছুদিন পূর্বে বিভিন্ন অভিযোগে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেককে যৌথবাহিনী রাতের আধারে আটক করার ঘটনায় কাশীপুর ছিলো অনেকটাই ঠান্ডা কিন্তু এর কয়েকদিন পার হলে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেন সেই ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
সূত্র বলছে, আরিফ এক সময় যুবদলের রাজনীতিতে ছিলেন। ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটুর সাথে তার গভীর সখ্যতা রয়েছে। টিটু যুবদলের নেতৃত্বে থাকাবস্থায় আরিফ মন্ডল তার কর্মী ছিলেন। টিটু ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক হওয়ার পর আরিফ মন্ডলকে কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদে আদিষ্ঠ করেন। এদিকে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর একটি পক্ষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতারাও। বিএনপির কর্মীদের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। তবে দলের সেই নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে আরিফ কাশীপুরে বিএনপির নাম ব্যবহার করে মানুষের বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, দোকানে দোকানে চাঁদাবাজিসহ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে।
এতে বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কাশীপুর ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শহীদ ভেন্ডারের ছয় তলা ভবনে তালা লাগিয়ে দেয় আরিফ মন্ডল ও তার লোকেরা। পরবর্তীতে মোটা অংকের চাঁদা নেওয়া ভবন মালিকের কাছ থেকে। এছাড়াও কাশীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা শফির বাড়ীতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। এতে ১৬ ভরি স্বর্ন ও নগদ টাকা লুটে নেয়ার অভিযোগ তোলেন শফীর পরিবার। শান্তিনগর এলাকায় কামালের বাড়ীতে গিয়ে হামলার হুমকির মাধ্যমে চাঁদা দাবী করে আরিফ মন্ডল। ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইসলাম ও মুসলিমের বাড়ীতে গিয়ে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। একটি অটো গ্যারেজে চাঁদা আদায় এবং ব্যাটারী লুটে নেয় তার লোকেরা। ভোলাইল ও মরাখালপাড় এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন ভবন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজীর অভিযোগ রয়েছে আরিফ মন্ডলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও বিভিন্ন গার্মেন্টস ও ডাইংয়ে গিয়ে ওয়েস্টিজ ব্যবসার নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে।
পাশাপাশি শান্তিনগর এলাকায় একটি দোকান মালিকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এমনকি ২ কাশীপুরের স্টার ব্যাটারী হাউজে লুটপাট চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সাইফুল্লাহ বাদলের ছেলে সাজনকে সাথে নিয়ে ভোলাইল এলাকায় বর্জ্য সিন্ডিকেট চালু করেছেন সবই নিয়ন্ত্রণে তার সাথে রয়েছেন রবিন ও রনি। একই সাথে গেদ্দারবাজার এলাকায়। তৈরী করেছে সন্ত্রাসী বাহিনী যাদের মাধ্যমে এলাকায় এলাকায় মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ জনগণকে ভীত রেখেছেন এই আরিফ মন্ডল। অপর দিকে কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মঈনুল হোসেন রতন বর্তমানে দখলদারিত্বের সাথে যুক্ত হয় কাশীপুর ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আলমগীর হোসেন। তারা দুজনে মিলে রাতারাতি বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে একে একে দখল নিতে শুরু করে ড্রেজার, গার্মেন্টস ও ইট বালু ও সিমেন্ট ব্যবসাসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে কাশীপুরের সকল ড্রেজার, গার্মেন্টস ও ইট বালু ও সিমেন্ট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের পর চোঁখ পড়ে কাশীপুরের ৩নং ওয়ার্ডের নরসিংপুর চরে। তারা এখন চর দখল করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এ দিকে বিএনপি নেতা রতনদের এমন দখলদারিত্বে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে কাশীপুরবাসী। বর্তমানে কাশীপুরে রতন ও আরিফ মন্ডল যেন ত্রাসের রাহত্ব কায়েম করছেন। বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।