মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৭ ১৪৩১   ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

কুতুবপুরে আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত টিটু

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১১:০০ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৪ সোমবার

গত আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওসমানী সম্রাজ্যের দোসররা নারায়ণগঞ্জকে যেভাবে জিম্মি রেখেছিলেন এমনকি  প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল সেক্টরে বিগত ১৬ বছর যেভাবে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি ও লুটপাট করেছেন তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি সরকার পতনের পরেও। গত ৫ আগষ্ট সাবেক স্বৈরাচারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে ক্ষমতাচুত্য হয়ে পরে আওয়ামী লীগ সেই সুবাদে সভা নেত্রীর পাশাপাশি পালিয়ে যায় সাবেক সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান সহ বাকি এমপি-মন্ত্রীরা। একই সাথে তাদের সিন্ডিকেট করা দোসররা অনেকেই পটপরিবর্তনের পর পালিয়ে যায় আবার অনেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ছায়াস্থলে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। 

 

এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের ফতুল্লার থানার আওতাধীন সব থেকে বড় ইউনিয়ন কুতুবপুর ইউনিয়নে নতুন সাম্রাজ্যে খুলে বসেছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু। এদিকে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর কুতুবপুরে থাকা একাধিক শিল্প কারখানায় নিজস্ব বাহিনী দ্বারা চালিয়েছে লুটপাট চাঁদাবাজি। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্যাতিত হওয়ায় এই টিটু বর্তমানে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠেছে। হিংস্র রূপ ধারণ করেছে। এদিকে কুতুবপুরে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, ডিস ব্যবসা, ইন্টারনেট ব্যবসা, ওয়েস্টিজ ও ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, হাট-ঘাট, বিভিন্ন মালিক সমিতি, ভূমিদূস্যতা, বালু মহল, বিদ্যুৎ চোর সিন্ডিকেট, গ্যাস সিন্ডিকেট, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি, পরিবহন সেক্টর সকল অপকর্ম যা বিগত দিনে আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিলো সবই বর্তমানে একাই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন শহিদুল ইসলাম টিটু। 

 

এ ছাড়া ও কুতুবপুর নয়ামাটি, শান্তি নিবাস, কামালপুর, পাগলা বাজার, জাউল্লাপাড়া এলাকায় টিটুর ভাই তপন ও স্বপন তার নাম বিক্রি করে মাদকের ডিলার হয়ে উঠেছেন। একই সাথে প্রতিটি ইউনিয়নে যতই অপকর্ম পরিচালিত করছেন তার লোকেরা সব থেকে মোটা অংকের চাঁদা ও নিচ্ছেন এই কথিত থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু। বতর্মানে তিনি দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সাইডে রেখে আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন।

 

 

সূত্র বলছে, গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করলে সে সময় শহিদুল ইসলাম টিটু ছিলেন কারাগারে। কিন্তু সেখান থেকেই তিনি তার নেতাকর্মীদের নানা দিক নির্দেশনা দিয়ে বহু অপকর্ম পরিচালনা করিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি জেল থেকে বেড় হয়ে এসেই ফতুল্লায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন। জড়িয়ে পরেন বিভিন্ন অপকর্মে। তার বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ খবরে বেড়িয়ে আসে বহু অপকর্ম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগষ্টের পরেই ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুর আপন ছোট ভাই  তপন ও স্বপন তার শেল্টারে কুতুবপুর নয়ামাটি, শান্তি নিবাস, কামালপুর, পাগলা বাজার, জাউল্লাপাড়া এসব এলাকায় মাদকের ডিলার হয়ে উঠেছেন গত ২ মাসে।

 

বিগত দিনে যে এরিয়াগুলোর মিরুর দখলে ছিলো সবই বর্তমানে টিটুর ভাই তপন ও স্বপনের দখলে। তা ছাড়া এসব এলাকার ইন্টারনেট ও ডিস ব্যবসা মিরুসহ বিভিন্ন মালিকদের কাছ থেকে দখলে নিয়েছেন এই থানা বিএনপির সভাপতি টিটু। তা ছাড়া ও পাগলা বাজার মালিক সমিতি নিয়েছেন তার নিয়ন্ত্রণে, পাগলা বাজার এলাকার অটো স্ট্যান্ড যেখানে প্রায় ১৫০০ অটো রয়েছে সেই স্ট্যান্ড বর্তমানে দখলে নিয়েছে টিটু আর সেখান থেকে অটো প্রতি নিয়মিত ৫০ টাকা তুলছে টিটুর চ্যালা যুবদল নেতা চায়না কামাল। তা ছাড়া পাগলা বাজার থেকে চিতাশাল পর্যন্ত অস্থায়ী প্রায় ৮০০ দোকান বর্তমানে টিটুর দখলে। এমনকি নয়ামাটি, শান্তি নিবাস, কামালপুর, পাগলা বাজার, জাউল্লাপাড়া এসব এলাকার আশেপাশে কয়েক শত গার্মেন্টস, মিনি/বড় হোসিয়ারী, ডাইং রয়েছে সেখান থেকে ওয়েস্টিজ মালামাল ও ঝুট জোরপূর্বকভাবে টাকা না দিয়ে টিটুর নামে নিয়ে যাচ্ছে তার লোক যুবদল নেতা চায়না কামাল। 

 

এদিকে পাগলা বাজার এলাকায় বিগত দিনে শ্রমিকলীগ নেতা পলাশের সম্রাজ্যে দখলে নিয়েছেন এই থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ট্রাক শ্রমিক সংগঠন থেকে শুরু করে ট্রাক স্ট্যান্ড-পাগলা বাস স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা সবই তুলছেন এই টিটু সাঙ্গপাঙ্গরা। তা ছাড়া ও গত (৭ আগষ্ট) রাতে টিটুর নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিমসহ কুতবপুরে থাকা কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রোলিং মিলে হামলা করে রড চুরির অভিযোগ রয়েছে। এর বাহিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মামলার ভয় দেখিয়ে মামলা বাণিজ্যেসহ বহু অভিযোগে রয়েছে। সেই হিসেবে গত ৭ অক্টোবর জুলকারনাঈন শিয়ার নামের এক ফেসবুক আইডি থেকে প্রকাশিত যৌথবাহিনীর একটি লিষ্টে শহিদুল ইসলাম টিটুর নাম লক্ষ্য করা যায় যেখানে তার নিয়ন্ত্রণে থাকা হিসেবে উঠে এসেছিলো পাগলা বাস স্ট্যান্ড ও কাতুবপুর বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা উঠে এসেছি।

 

কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপ-আলোচনায় উঠে আসে কুতুবপুর ইউনিয়নের বেশি ভাগ অংশই বর্তমানে থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর বাহিরে ও ফতুল্লা ইউনিয়নে দাপা ইদ্রাকপুরে থাকা কয়েকটি রোলিং মিল, গার্মেন্টস নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন টিটুর কিছু লোকজন। এ ছাড়া এনায়েতনগর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মানিক বিসিকের প্রায় ৮টির অধিক গার্মেন্টস-হোসীয়ারী এই টিটুর নামে দখলে নিয়েছেন তারা যেখান থেকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয় এই টিটুকে। বর্তমানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিটু বর্তমানে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যার কারণ হলো জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তার বন্ধু গোলাম ফারুক খোকনের হাত রয়েছে মাথার উপরে সে কারণে তিনি কাউকে তোয়াক্কা না করে গভীর থেকে গভীর অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পরছেন। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে দলের হাইকমান্ডের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

 

এ বিষয়ে জানতে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুর মুঠোফানে একাধিক বার কল করলে ও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।