আড়াইমাসেও ওসমান সাম্রাজ্যের আইনজীবীদের দেখা মিলেনি
যুগের চিন্তা রিপোর্ট :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১০:৫৭ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বলতে প্রভাবশালী সাবেক এমপি গডফাদার শামীম ওসমানকে বুঝানো হত। কেননা এক সময় পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণ করেছে এই নেতা। পরবর্তিতে তার দাপট কমে আসলে নারায়ণগঞ্জ সদর বন্দর,সোনারগাঁ এবং তার নিজ নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে এক চেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এছাড়া আদালত পাড়া সহ এলাকা গুলোতে ওসমান সম্রাজ্যের একচেটিয়া শাসন-শোষন, অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়েছে তার অনুসারীরা। বিশেষ করে আদালত পাড়ায় মুষ্টিময় আইনজীবি দিয়ে জেলার আইনজীবি সমিতিকে নিজের মত করে পরিচালনা করেছেন। সেই সাথে তাদের অনুসারী আইনজীবিদের হাতে অন্যান্য জুনিয়র সিনিয়র আইনজীবিরা লাঞ্ছিত হয়েছে। এমনকি জুডিশিয়াল বিভাগের বিচারপতিদের সাথেও ঔদ্ধত্যপুর্ণ আচরন করেছে ওসমান সম্রাজ্যের অনুগত আইনজীবিরা। শেখ হাসিনা পদত্যাগের পরে তাদের অনেক আইনজীবিকে খুজে পাচ্ছে না তাদের মক্কেলরা।
এদিকে গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। একই সাথে তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার সাথে নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান সহ তার পুরো পরিবার পালিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান বিশাল এক ওসমান সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। জেলার সরকারি বেসরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে আদালত আইনজীবি সমিতিতে মুষ্টিমেয় কয়েক আইনজবি দিয়ে কোর্ট পাড়াকে জিম্মি করে রেখেছেন। সেই সাথে আইনজীবিদের উপর নানা ভাবে নির্যাতন চালিয়েছে ওসমান খলিফা।
কোর্ট পাড়ার আধিপত্য বিস্তারের মাঝে ওসমান সম্্রাজ্যের আইনজীবি হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট বন্ধু মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড.খোকন সাহা। আইনজীবি সমিতিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র নারী আইনজীবিদের নিয়ে গালা গালি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিচারকদের সাথে ঔদ্ধত্যপুর্ণ আচরণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া আইনজীবি সমিতির নির্বাচন নিয়ে বারংবার বিতর্কিত হয়েছেন এড. আব্দুল রউফ এবং এড. মাসুদুর রউফ। তাছাড়া তাদের অনুসারী শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমানের আশীর্বাদ নিয়ে বিনা ভোটে আইনজীবি সমিতির সভাপতি হয়েছেন হাসান ফেরদাউস জুয়েল। একই ভাবে শামীম ওসমানের দুঃসর্ম্পকের শ্যালক এবং তার পিএস হিসেবে পরিচিত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপুর হাত ধরে ওসমান সম্রাজ্যের খাতায় নাম লিখান আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এড. মহসিন মিয়া। জোর করে ভোট আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া কমিটি সাধারণ সম্পাদক রনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. মাহবুব হোসেনও বিতর্কিত তালিকায় পিছিয়ে নেই।
ভুমিদস্যু মাদককাকার বাড়িদের শেল্টার দিয়ে তারা বিশাল টাকার মালিক বনে গেছে। এছাড়া আদালত পাড়ায় নারী আইনজীবি হিসেবে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বেয়াদব খ্যাতি পেয়েছে এড. সুইটি ইয়াসমিন। তিনি তার আপন মামা খালেদ হায়দার খান কাজলের নাম ব্যহার করে জুনিয়র সিনিয়র আইনজীবিদের সাথে অশোভ আচরন করেছে বলে একাধিক আইনজীবি জানান। এছাড়া তার স্বামী কামরুল হাসান মাসুমকে দিয়ে অসহায় মানুষের জায়গ্ াজোর করে দখল করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। শামীম ওসমানের বন্ধু সাবেক পিপি এড. ওয়াজেদ আরী খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রয়েছে। তার নানা কর্মকান্ডের জন্য তিনি নিজেও বিতর্কিত। কিন্তু আওয়ামী লীগের পতনের সাথে গত আড়াই মাস আগে তাদের পতন হয়েছে আদালত পাড়া থেকে। অথচ তারা এক সময় দাপটে আদালত পাড়ায় প্রভাব বিস্তার করেছে। এই আইনজীবিদের তাদেরা মক্কেলরাও খুজে পাচ্ছে না। তাদের এড. আনিসুর রহমান দিপুরও দেখা মিলছে না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের সাথে সাথে তাদের গুরু শামীম ওসমান পালিয়ে দেশ ছেড়েন তারাও আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেক মক্কেল বিচার প্রার্থী তাদের মামলা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন। কিন্তু তারা যে সকল অপকর্ম চালিয়েছে আদালত পাড়ায় তাদের দেখা মিললে কোন ছাড় পাবে না বলে আইনজীবিদের মাঝে আলোচনা হচ্ছে। তবে তারা আদালত পাড়ায় আসবে কি না এনিয়ে রয়েছে ধোয়াশা। কেননা তারা অপকর্মের জন্য আসবে না বলে ধারনা করা হচ্ছে।