বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ২৩ ১৪৩১   ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচনী প্রস্তুতি একমাত্র গিয়াসউদ্দিনের

মাহফুজ সিহান :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৩৫ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২৪ বুধবার

# ফতুল্লাকে নাসিকের অন্তর্র্ভূক্ত করার উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া

# ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে সফল হলে বাজিমাত 
# ব্যবসায়ীক-সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণিপেশাতেও তাকে নিয়ে আলোচনা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। হত্যাসহ নানা অভিযোগে সমগ্র জেলাজুড়ে মামলায় আওয়ামী লীগ নেতারা ছন্নছাড়া ও পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপি নেতাদের যেই করুণ অবস্থা হয়েছিল সেই পথেই এখন আওয়ামী লীগ নেতারা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা সংস্কার নিয়ে বর্তমানে কাজ করছে। এই সময়ে বিএনপি নেতারা ঘরে ফেরার সুযোগ পেলেও আগামী নির্বাচনী ভাবনা নেই জেলার অধিকাংশ নেতা।

 

৫ আগস্টের পর থেকে একমাত্র জেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন আগামী নির্বাচনী ভাবনা মাথায় রেখে  সম্ভাব্য নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) এলাকায় একের পর এক সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করছেন। এতে করে আগামী নির্বাচনের ভোটারদের মন জয় করার কাজটি তিনিই নারায়ণগঞ্জে সর্বপ্রথম করে যাচ্ছেন। একদিকে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সাংগঠনিকভাবে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত গড়ছেন অপরদিকে এই নির্বাচনী এলাকায় জনগণের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হচ্ছেন।

 

আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ব্যাপী লাগাতার রোডম্যাপ অনুযায়ী এই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আগামী নির্বাচনে তাকে অন্য সম্ভাব্য যে কোন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অনেক এগিয়ে রেখেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখলে আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে বিএনপিতে তাঁর সাথে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা যোজন যোজন পিছিয়ে থাকবে। 

 

রাজনৈতিকবোদ্ধারা বলছেন, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএনপির জেলা সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব জনসমর্থন অর্জন করেছে। বিশেষ করে ফতুল্লা এলাকার ৫টি ইউনিয়নকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্র্ভূক্তি করার যে দাবি তিনি তুলেছেন সেটি বিশেষ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এছাড়া ফতুল্লার বিস্তীর্ণ এলাকা বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় যে দুর্ভোগ জনসাধারণকে দিচ্ছে  তা থেকে পরিত্রাণের উদ্যোগও তিনি নিয়েছেন। 

 

জনগণের দুর্ভোগ সংশ্লিষ্ট  এই দুটি সমস্যা সমাধানে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন, এছাড়া জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। এই প্রস্তাবনা তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ মিলেছে। এই দুটি বিষয় সমাধান হলে ফতুল্লার বিস্তর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যার ফলে পিছিয়ে থাকা ফতুল্লাও সিদ্ধিরগঞ্জের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নীত হওয়ার সুযোগ পাবে। ফতুল্লাবাসীর জন্য গিয়াসউদ্দিনের এই উদ্যোগ ব্যাপক উন্নয়নের রাস্তা প্রসারিত করবে। ফতুল্লার বিশাল ভোটারদের মন জয় করার এই উদ্যোগ ভোটারদের মনে মানসিকভাবে তাকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। 

 

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতির দিকে গিয়াসউদ্দিনের আরেকটি কৌশলও ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে। সেটি হচ্ছে রাজনীতিতে কর্মীবান্ধব ও জনসংশ্লিষ্ট হওয়ার বিকল্প নেই। আর এই কাজটি গত তিনমাসে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন দারুণভাবে সেরে ফেলেছেন। গত ১৫ বছর মামলা-হামলার দরুণ এলাকা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ছিল বলা যেতে পারে বিএনপি কর্মীরা। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন মামলায় জামিন প্রক্রিয়া শেষ করে ঘরে ফিরেছে বিএনপি কর্মীরা। গিয়াসউদ্দিনের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক লাগাতার কর্মসূচির কারণে বিএনপি কর্মীরা সংগঠিত হয়েছে। এছাড়া এলাকার মানুষের সমস্যাগুলোও অনুধাবন করা সহজ হয়েছে। যার দরুণ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি কর্মীদের একটি শক্ত ভীত তৈরি হয়েছে। এই সাংগঠনিক ভীত নিয়ে জনগণের কাছে আগামী নির্বাচনে দ্বারস্থ হওয়া বেশ সুবিধাজনক হবে গিয়াসউদ্দিনের জন্য। 

 

রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াসউদ্দিন অতীতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচন করেছিলেন। যার ফলে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বেশ অভিজ্ঞ। আর এর প্রমাণ পাওয়া গেছে ২০০১ সালে নির্বাচনে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা শামীম ওসমানকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন গিয়াসউদ্দিন। যা আদতে ছিল তার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চূড়ান্ত পুরস্কার। ওই নির্বাচনের হারের স্বাদ থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের পুরোটা সময় শামীম ওসমানের প্রধান দুঃশ্চিন্তা ছিল এই গিয়াসউদ্দিন। নানাভাবে তাকে হয়রানি করার কৌশল এটেছেন শামীম ওসমান। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন তাঁর কর্মীদের ছেড়ে পালিয়ে যাননি। এই দৃঢ়চেতা মনোবলের কারণেই গিয়াসউদ্দিন তাঁর কর্মীদের সাথে এতো নিবিড়ভাবে মিশতে পেরেছেন। সংস্কারের পর অনুষ্ঠিতব্য আগামী নির্বাচনে তাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে গিয়াসউদ্দিনকে ভোটের মাঠে মোকাবেলা করা যে কোন প্রার্থীর জন্যই বেশ কষ্টসাধ্য।

 

এদিকে সর্বশেষ ওসমানদের দোসর ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সুবিধাভোগীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। জেলার শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকে ওসমান দোসরদের বিদায় করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ, বিকেএইএ, ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশন, হোসেয়ারি এসোসিয়েশনসহ বড় বড় সংগঠনগুলো থেকে ওসমান পরিবার ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসরদের বিদায় করার আহবান জানিয়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। এছাড়া সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে যারা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে সুবিধাহাসিল করেছেন এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করেছেন তাদেরকেও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে সব শ্রেণিপেশার মানুষের সমর্থন ও সাধুবাদ পেয়েছেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায়ের পর দল-মত-নির্বিশেষে নারায়ণগঞ্জের আপামর মানুষের অভিভাবকের গুরুদায়িত্ব পালন করছেন গিয়াসউদ্দিন। তার এই সাহসী ভূমিকায় বিগতসময়ের সুবিধাভোগী দোসরদের মনে ভয়-শঙ্কা জাগিয়েছে, অপরদিকে আপামর মানুষের মনে সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়ার এক ইতিবাচক সমৃদ্ধ জেলা গড়ার হাতছানি উঁকি দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

 

সর্বশেষ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সাংবাদিকতার মোড়কে নানা অনৈতিককাজে জড়িত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার সময় সাংবাদিকদের মধ্যে কারা ওসমান পরিবারের এবং শেখ হাসিনার দালালি করেছে আমরা সবাই তাদেরকে চিনি। আজ যতই আপনার চেহারা পরিবতর্ন করেন না কেন আমাদের কাছে কিন্তু আপনাদের চেহারা লুকাতে পারবেন না। ভালো সাংবাদিক যারা তাদের প্রতি আহ্বান করতে চাই, আমরা কেন শুধু খারাপ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো, আপনার হচ্ছেন জাতির বিবেক, যারা অসাধু সাংবাদিক হয়ে ওসমান পরিবার তথা ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার দলের দালাল ছিল, আমরা চাই ভালো সাংবাদিকরা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। তাদেরকে প্রতিহত করেন। না হলে ভালো সাংবাদিকরাও যে কোন সময় লাইনচ্যুত হবেন।’


রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০টি ওয়ার্ড ও ফতুল্লার ৫টি ইউনিয়নের ওয়ার্ডগুলো যেভাবে গিয়াসউদ্দিন সংগঠিত করছেন, তাতে বিএনপির ত্যাগী কর্মীরা মূল্যায়িত হবেন, বিতর্কিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। এছাড়া জনগণের সবচাইতে কাছাকাছি পৌঁছানোও বেশ সহজ হবে। আর এই ভীতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নিঃসন্দেহে বিশাল ভোটের ব্যবধানে গিয়াসউদ্দিনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই সবচাইতে বেশি। অপরদিকে মানষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে জীবনমান উন্নিত করার উদ্যোগ, একজন সুশীল ও সচেতন নাগরিক হিসেবে ব্যবসায়িক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সমস্যা সমাধানে যেসকল উদ্যোগ নিচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। একজন রাজনীতিকের মূল ভাবনাই গণমানুষের জীবনের সমৃদ্ধি, উন্নতি। আর  যেসকল রাজনীতিক সেটা ভাবেন, তারাই প্রকৃত রাজনীতিবিদ। আর যার ফলে দল-মত নির্বিশেষে গিয়াসউদ্দিনের এসব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সবাই।