বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ২৩ ১৪৩১   ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যবসায়ী সংগঠনে ওসমান দোসরদের বহাল থাকা নিয়ে ক্ষোভ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪৪ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২৪ বুধবার

বাংলাদেশের অর্থকারী ফসল সোনালী আঁশ পাটকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’ হিসেবে পরিচিত ছিল নারায়ণগঞ্জ। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শিল্প- বাণিজ্যে সমৃদ্ধ জেলাটি। বিগত দুই দশকে পাটের সেই সোনালী অতীত না থাকায় পোশক শিল্প মাকের্ট দখল করে নেয়। তৈরী পোশাক খাতের ৭০% পোশাক সরবরাহ হয়ে থাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে। যার ব্যবসায়ী সংগঠনের এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ পরেই বিকেএমইএ সংগঠনের অবস্থান। যারা কার্যালয় নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। 

 

বিগত ১৫ বছর যাবত বিকেএমই এর সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়ে সভাপতি পদ দখল করে রেখেছিল সাবেক এমপি সেলিম ওসমান। তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্তায় কোন এজিএম হয় নাই। তাদের অনুগত ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী নিয়ে এক রুমে বসে কমিটি করে ফেলতেন। তবে এনিয়ে দীর্ঘ দিন ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও তা কেউ প্রকাশ করতে পারে নাই। তাছাড়া বিকেএমইতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তারাই আবার চেম্বার অব কমার্সে বিভিন্ন পদ দখল করে রাজত্ব চালিয়েছে। যা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলের দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের এজিএমে প্রকাশ পেয়েছে।

 

এদিকে সম্প্রতি ব্যবসায়ী সংগঠনে ওসমান পরিবারের দোসরদের বাদ দিয়ে নতুন ভাবে পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন। সেই সাথে তিনি বিকেএমইএ’তে ওসমান পরিবার তথা শেখ হাসিনার প্রধান দোসর মো. হাতেম। ওসমান পরিবারের দোসরদের বাদ দিয়ে ভালো লোক নিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে।


অপরদিকে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও এখনো ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোতে রয়ে গেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসররা। গুটিকয়েক ব্যবসায়িক নেতা সংগঠনগুলোর শীর্ষ পদ থেকে সরে গেলেও এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসররাই রয়েছে। যার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি তৈরী পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ'র ক্ষেত্রেও। বিকেএমইএ থেকে সাবেক সভাপতি সেলিম ওসমান পদত্যাগ করলেও কমিটি পুনর্গঠন না করে সেখানে আসন গেড়েছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে অভিযুক্ত মোহাম্মদ হাতেম। এছাড়াও অন্যান্য পদগুলোতেও এখনো শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে অভিযুক্ত ব্যবসায়িক নেতারাও বহাল রয়েছে। যে কারণে বিকেএমইএ'তে বৈষম্য দূর করার জন্য দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি সাধারণ সদস্যদের।

 

 

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সালে বিকেএমইএ'র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর পরে আর কোন নির্বাচন হয় নাই। একই অবস্তা নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সেও। ওই নির্বাচনে সেলিম ওসমান সভাপতি ও মোহাম্মদ হাতেম সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিগত ৭টি নির্বচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায়। বিকেএমএই'তে বিগত দিনে সব কিছুই চলতো সেলিম ওসমানের নির্দেশনা অনুযায়ী। বিকেএমইএ'তে কে কোন পদে থাকবেন সেটাও নির্ধারণ করে দিতেন সেলিম ওসমান। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলের পুরোটাই সেলিম ওসমানের সঙ্গে থেকে পুরোপুরিই ফায়দা লুটেছেন মোহাম্মদ হাতেম এমন অভিযোগ সাধারণ ব্যবসায়ীদের।

 


বিপরীতে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সকে একচেটিয়া ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে ওসমান পরিবার। তাদের পরিবারের আস্থাভাজন খালেদ হায়দার খান কাজল তার কিছু সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে এই ব্যবসায়ী সংগঠনকে নেতৃত্ব দিয়েছে। চেম্বার অব কমার্স এবং বিকেএমইএ’ তে ওসমান দোসররাই বিগত দিনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা একচেটিয়া ভাবে ব্যবসায়ী সংগঠনকে জিম্মি করে রেখেছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ন্যায় বিচার পর্যন্ত পান নাই অভিযোগ করে। ব্যবসায়ী সংগঠন জিম্মি করে রেখে ওসমান দোসররা আঙুল ফুলে কলগাছ বনে গেছে। সেই সাথে তাদের দোসর তথা সাঙ্গপাঙ্গরাও বিত্তশালী বনে গেছে। সেলিম ওসমানের সাঙ্গে যেকে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন আরো কিছু এর ব্যবসায়ী নেতা তার মধ্যে রয়েছেন সহ সভাপতি অমল পোদ্দার, চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, সহসভাপতি মোঃ আখতার ফারুক অপূর্ব (সেলিম ওসমানের মেয়ের জামাতা), শোভন গ্রুপের পরিচালক আবু আহমেদ সিদ্দিক, পরিচালক ফকির গ্রুপের ফকির কামরুজ্জামান নাহিদসহ অনেকেই।

 


তাছাড়া গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সাংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে বিকেএমইএ'র তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি (বর্তমান সভাপতি) মো. হাতেম বালেছে, "এরকম একটি সঙ্কটকালে আমরা এমন সিদ্ধয়েশন দেখবো সেটা আশা করিনি। যে তান্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা তা উদযাঘটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন। 

 

আমরা সরকারের পাশে সবসময়ই ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। আওয়ামীলীগের দোসরদের নিয়েই পথ চলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এই কমিটিতে এখনো আসীন রয়েছে সহ সভাপতি অমল পোদ্দার, সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিতদের মধ্যে রয়েছেন ফজলে শামীম এহসান, গাওহার সিরাজ জামিল, সহ সভাপতি মো. আখতার ফারুক অপূর্ব ও সহ সভাপতি (অর্থ) মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল। যার মধ্যে মোঃ আখতার ফারুক অপূর্ব সেলিম ওসমানের মেয়ের জামাতা হিসেবে সহ সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। অমল পোদ্দার ও মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল বিগত দিনে ওসমান পরিবারের প্রভাবকে খাটিয়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনেছেন।


যেসব কারণে বিকেএমইএ'তে ওসমান পরিবার তথা ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের দোসরদের রাহুমুক্ত চান সাধারণ সদস্যরা। অবিলম্বে নির্বাচন দেয়ার দাবিও জানিয়েছেন সাধারণ সদস্যরা। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সে এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির এজিএমে ওসমান দোসরদের নেতৃত্ব থাকা নিয়ে এবং বিগত দিনে বেডরুমে বসে কমিটি গঠন করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবসায়ীরা।