সাখাওয়াত-টিপুতে নির্ভার মহানগর বিএনপি
লতিফ রানা :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:৩২ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২৪ বুধবার
# বিভিন্ন দুঃসময়ে সংগঠনটির নেতৃত্ব দেন এই জুটি
# চতুর্মূখী ষড়যন্ত্রেও দুর্গা পূজার সফল সমাপ্তিতে আছে তাদের ভূমিকা
# তাদের মাইনাস করতে গিয়ে মাইনাস হন শামীম ওসমানের দোসররা
দীর্ঘদিন যাবত হয়রানি, নির্যাতন ও ধরপাকরের যাতাকলে পিষ্ট হওয়ার আশংকায় থাকার পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ভাগ্যের পরিবর্তন হয় ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর। আর সর্বশেষ দুঃসময়েও এই সংগঠনটির নেতৃত্ব দেন সাখাওয়াত-টিপুর বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পলায়নের পূর্বে অর্থাৎ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা কর্মীদের যে যেভাবে ধরপাকড়, হামলা-মামলা ও নির্যাতন করা হয় সে সময়ও এই সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে পুলিশের লাঠিচার্জ ও কারাবরণের মতো কঠিন দমন পীড়নেও রাজপথ ধরে রেখেছিলেন। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব সেই চড়াই-উতরাই পার হয়ে কাধে কাধ মিলিয়ে, দাঁতে-দাঁত চেপে নেতা-কর্মীদের মাঠে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করেছিল। তাই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আসন্ন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও এই নেতৃত্বের উপরই ভরসা রাখতে চান মহানগর বিএনপির একটি বড় অংশ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নারায়ণগঞ্জ বিএনপির এক সময়ের কর্ণধার ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আবুল কালামের সাথেই সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠিত হন এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ২০০৬ সালে বিএনপির ক্ষমাতচ্যুতির পর ডা. ফখরুদ্দিন ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈনুদ্দিন এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অনেকটা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি থেকে নির্বাসনে চলে যান এডভোকেট আবুল কালাম। এরই মধ্যে ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) এর প্রথম নির্বাচনে শেষ মুহুর্তের নাটকীয়তায় দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান মেয়র প্রার্থী এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
এরপর ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর সিটি নির্বাচনে যখন প্রার্থী সংকটে বিএনপির কান্ডারি হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত-খুন মামলার আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান। যদিও সে সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে জনগণের কাছে তেমন একটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। তারপরও শামীম ওসমানকে হারিয়ে দেওয়া এবং তৎকালীন স্বৈর-শাসকের সমর্থন পাওয়া মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাখাওয়াত। যদিও সেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি তিনি। তবে সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আইভী ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলে পরাজিত বিএনপির নির্বাচনে নতুন মুখ হওয়া সত্ত্বেও ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট পেয়ে দলীয় প্রার্থী বিহীন হওয়া থেকে মান রাখেন সাখাওয়াত।
সূত্র মতে গত ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে সভাপতি এবং এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খানকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। সেই কমিটি গঠনের পর থেকেই এই দুই নেতার বিরুদ্ধে চক্রান্তে সোচ্চার হয়ে উঠেন কমিটিতে ঘাপটি মেরে থাকা নারায়ণগঞ্জের গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের দোসররা। অনেক চক্রান্ত করে সাখাওয়াত-টিপুর জুটিকে কমিটি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই দল থেকে বহিস্কৃত হন বলে দলের নেতা-কর্মীরা জানান।
যদিও তাদের আওয়ামী দোসরদের সেই চক্রান্ত এখনও চলমান বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, মহানগর বিএনপির এই আহবায়ক কমিটির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জে ফেলার চেষ্টা করেও সফল হননি ষড়যন্ত্রকারীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও সংগঠনে থাকা তাদের বিরোধী, সদ্য পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা ষড়যন্ত্রকারী এমনকি একটি বৈদিশক চক্রসহ চতুর্মূখী ষড়যন্ত্রের মুখের মধ্যেও এই নেতৃত্বের শক্ত ও দৃঢ় অবস্থানে খুবই সফলভাবে সম্পন্ন হয় হিন্দু ধর্মালম্বীদের বড় আয়োজন দুর্গা পূজা। যা এই নেতৃত্বের একটি বড় সাফল্য হিসেবে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এর আগে ২০০৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালামকে সভাপতি এবং এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দলীয় সূত্রমতে এই কমিটির মাধ্যমে আবুল কালামকে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় করার একটি চেষ্টা করা হয় বলে মনে করা হয়। তবে একদিকে শারীরিক অসুস্থতা অন্যদিকে বয়সের ছাপ সব মিলিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে আবুল কালামের সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকায় সেই শূন্য স্থান পুরণের চেষ্টা করেন সাখাওয়াত হোসেন খান।
অন্যদিকে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে সমর্থন ও তার পক্ষে কাজ করায় দল থেকে বহিস্কার হন এটিএম কামাল। সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তাই আগামী পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিভিন্ন চড়াই উতরাই পার হওয়া এই নেতৃত্বের উপরই ভরসা রাখতে চান কমিটির সিংহভাগ নেতা, কর্মী ও সমর্থকগণ।