বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ৩০ ১৪৩১   ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পদবিহীন নেতাদের দিয়ে কুকর্ম করাতেন শামীম ওসমান

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪৪ পিএম, ৭ নভেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার

নারায়ণগঞ্জ তো বটেই দেশ-বিদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতির জন্য গডফাদার হিসেবে কুখ্যাতি ছিল আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের।  ১৯৯৬ সালের এমপি হওয়ার পর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিস্তৃতি করেন। ২০০১ সালে বিএনপির ক্ষমতায় এলে বোরকা পড়ে দেশ ছাড়েন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে সুযোগ পাননি, তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। ক্ষমতায় বসেই আগের মতোই সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তাঁর এই কুকর্মে যেসকল ব্যক্তি জড়িত ছিল তাদের অধিকাংশেরই আওয়ামী লীগের কোন পদ-পদবী ছিলনা। থাকলেও সেটি বহু আগের। আদতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর, জেলা, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোন কমিটিই হতে দিতেননা শামীম ওসমান।

 

যেসব কমিটি নাম সর্বোস্ব দেয়া হয়েছে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ হতে দিতেন না। পদের লোভ দেখিয়ে তাঁর ক্যাডারবাহিনী দিয়ে নানা অপকর্ম করিয়ে নিতেন। শামীম ওসমানের ক্যাডার বাহিনীর সেসকল সদস্য ফুুলে ফেঁপে উঠার কারণে আওয়ামী লীগের পদের চাইতে শামীম ওসমানের ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতিকেই বেশি পছন্দ করতেন।

 

সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে পেছন থেকে খেলেন শামীম ওসমান। আওয়ামী লীগ সেই ছাত্রলীগ- স্বেচ্ছাসেবক লীগ-শ্রমিক লীগের কমিটি ভেঙে দিলেও সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, ছাত্রলীগ হেতা রাফেল প্রধান, হিমেল খান, বিন্দু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাফায়াত আলম সানি, বন্দরের ক্যাডার খান মাসুদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জ যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি, সিদ্ধিরগঞ্জ ছাত্রলীগ নেতা শাহজালাল বাদলসহ কয়েকশত ব্যক্তিকে পদের লোভ দেখিয়ে যত ধরণের অপকর্ম করে সম্পদের পাহাড় গড়া যায় তাই করেছেন।

 

পদ ছাড়া যেসকল ব্যক্তির চেয়ারের সখ ছিল সেসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে সিটি নির্বাচনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বিভিন্ন ব্যবসায়ীক সংগঠনের পদ, মার্কেট কমিটির পদ, মসজিদ, পঞ্চায়েত কমিটির পদ, স্কুল-কলেজ কমিটির গভর্র্নিং বডির সদস্য, বিভিন্ন সামাজিক ক্লাবের পদসহ যত ধরণের জায়গায় পদ দেয়া যায় সকল জায়গা থেকেই টাকা উত্তোলণের মেশিন হিসেবে ব্যবহার করেছেন। শামীম ওসমানের সাথে একই কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁর স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি, তাঁর শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, তাঁর কথিত শ্যালক এহসানুল হক নিপু, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল, এড. মোহসীন মিয়া। এমনকি এই কাজে তার বেয়াউ ফয়েজউদ্দিন লাভলু, তাঁর ছেলে ভিকি, শামীম ওসমানের মামা শ^শুর জালালসহ আরো অর্ধশত ব্যক্তিকে এসবের নিয়ন্ত্রণের দায়ভার দিয়েছিলেন।

 

শামীম ওসমানের নির্দেশেই মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জল যুবলীগের কমিটি কখনো পূর্ণাঙ্গ করেননি অথবা করতে পারেনি। জেলা ব্যাপী হাজারো পদ ছাড়া যুবলীগ নেতা, হাজারো ছাত্রলীগ নেতা, শ্রমিক লীগ নেতা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াতো। যখনই কোন অপকর্মে ধরা খেত, আওয়ামী লীগের নেতারা ওই ব্যক্তিকে অস্বীকার করতেন। বলতেন, অপকর্মকারী দলের কেউ না। এই ঘৃণ্য পন্থাতেই জেলা আওয়ামী লীগ শেষ পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে গত দুইবছর মাত্র দুই জনকে দিয়ে। একজন আবদুল হাই, আরেকজন শামীম ওসমানের বন্ধু আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল। ব্যাপারটা অনেকটা, ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দারের মতো। 

 

আর বন্দরে তো কখনো জাতীয় পার্টি আবার কখনো আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে কুকর্মের মহোৎসব তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে একই পন্থা সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ এবং আড়াইহাজারে প্রয়োগ করা হয়। সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু একই পন্থায় রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে সকল অপকর্ম কুক্ষিগত করেন। শামীম ওসমান এই পন্থায় সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, বন্দর এবং সোনারগাঁয়ে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেন।  

 

সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গসংগঠনের পদ না থাকলেও কিংবা সাবেক শব্দ ব্যবহার করে এসব ব্যক্তিরাই শামীম ওসমানের সকল অপকর্মের মূল হোতা। পদে থাকা কিছু ব্যক্তি ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন মামলায় অন্তর্ভূক্ত হলেও বিশাল পরিসরে পদের বাইরে থেকে শামীম ওসমানের সকল অপকর্মে সহযোগী হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিরা পূর্ণাঙ্গভাবে মামলায় আসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত সময়ে শামীম ওসমানের অপকর্মের সাথে জড়িত এসব ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।