বহাল তবিয়তে শামীম ভক্তরা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:৫১ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২৪ রোববার
(সোলডার) ত্বকী হত্যার ১৪০ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি
# পরিবহন মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিসি-এসপিকে হুঁশিয়ারি
জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে হুঁশিয়ার করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মাফিয়ারা বিদায় হলেও তাদের প্রেতাত্মারা এখনও রয়েছে। যেই মাফিয়ারা বছরের পর বছর লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, তারা এখনও নারায়ণগঞ্জে বহাল তবিয়তে পরিবহন সেক্টরে বিরাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪০ মাস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি নারায়ণগঞ্জের চেহারা, চরিত্র জানেন না। শামীম ওসমান তার গুন্ডা ও জল্লাদ বাহিনী দিয়ে কখনও মানুষকে পরাজিত করতে পারে নাই। তার সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও পারে নাই। আর তারা যখন দেশ থেকে পালিয়েছে আর তাদের চেলা-চালমুন্ডারা আজকে নারায়ণগঞ্জের মানুষের উপর দাপট করবে, এটি কস্মিনকালেও হবে না।
এসপি-ডিসির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘ওসমান পরিবারের চেলা-চামুন্ডাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ১৯ জুলাই যেভাবে এই নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে শামীম ওসমান, তার ছেলে, বেয়াই, শালাসহ তার আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় গুন্ডারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর গুলি করেছে। এখনও পর্যন্ত আপনারা তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করেন নাই।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া কমিয়ে ৪৫ টাকা করার দাবি জানিয়ে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘বাসভাড়া না কমালে ১৭ নভেম্বর অর্ধবেলা হরতাল পালিত হবে। এইটাই হবে ইউনূস সরকারের সময়ে এইদেশে প্রথম হরতাল। সুতরাং সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে চাইলে এই ওসমান পরিবারের মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করুন।’
রাব্বি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে আমাদের যে হত্যা, গুম, খুন, আয়নাঘর সংগঠিত হয়েছে, সে সমস্ত কিছুর দায় শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য দেশের বিভিন্ন সংস্থা এবং তার দলীয় মাফিয়াদের দিয়ে দেশকে এভাবে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। নির্বিচারে হত্যা, গুম, খুন, প্রতিপক্ষকে আয়নাঘরে পাঠিয়ে দেওয়া; নৃশংস যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সকল দায় শেখ হাসিনার। ত্বকী হত্যার সাথে জড়িতদেরও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে তিনি টিকিয়ে রেখেছেন। সমস্তকিছু জানার পরও অপরাধীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই।’
‘নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার হত্যা, গুম, চাঁদাবাজি, রাহাজানি করেছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই। ইতোপূর্বে বহুবার বলেছি, এই ওসমান পরিবার সরকার, প্রশাসন, পুলিশের মদদে এই শীতলক্ষ্যায় লাশের পর লাশ ফেলে, চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে যায়। তারা নারায়ণগঞ্জে ভয়ে থাকে না কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে, লুট করে তারা নিয়ে যায়। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের লাশ ফেলে শীতলক্ষ্যায়’, যোগ করেন তিনি।
‘তাদের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন আমরা বলেছি। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কীভাবে তারা ভিওআইপির নামে সরকারের ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, তা আমরা দুদককে জানিয়েছি। অন্য দেশের নাগরিকত্ব থাকার পরেও দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে তারা আমাদের দেশের আইনপ্রণেতা হয়েছে। তারপরও দুদক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওসমান পরিবার দেশে আছে কি নাই, সেইটা আমরা জানি না। কেউ বলছে, পালিয়ে গেছে, কেউ বলছে, দেশেই আছে। এর সত্যতা নির্ণয় করার দায়িত্ব গোয়েন্দা সংস্থার। যদি তারা পালিয়ে যায় তাহলে এর দায়, ব্যর্থতা এই গোয়েন্দা সংস্থার এবং আমাদের আইনের রক্ষক হিসেবে যারা রয়েছেন, তাদের। যেখানে একটা গরু-ছাগলও বর্ডার ক্রস করতে পারে না, গুলি করে হত্যা করা হয়। সেখানে ওসমান পরিবারের মতো এই খুনিরা, জল্লাদরা দেশ থেকে কীভাবে পালায়? কার আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় তারা পালিয়েছে, তা জানতে চাই। যদি কোনো সংস্থা বা বাহিনীর সহযোগিতা না থাকে তাহলে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে পারে না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘নির্বিচারে যারা মানুষ মেরেছে, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে মানুষ মেরেছে; সেই খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের দাবি জানাই। ২০১৩ সালে একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচার চেয়েছি। আমরা এই জুলাই-আগস্টে গণহত্যাকারীদের বিচার চাই। একাত্তরের গণহত্যার বিচারের জন্য যেমন গণআদালত গঠন করা হয়েছিল, যদি আজকে জুলাইয়ের গণহত্যার বিচার করতে এই সরকার ব্যর্থ হয় তাহলে মনে রাখতে হবে, আবারও গণআদালত তৈরির মধ্য দিয়ে এই খুনি হাসান ও তার দোসরদের আইনের আওতায় এনে দেশে বিচার আমরা সম্পন্ন করবো।’
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা কমিটির সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা দুলাল সাহা, সিপিবি শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী বিকু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা নেত্রী রাশিদা বেগম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। এর দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবেন। কিন্তু সে সম্মেলনের দুই মাস পরে ৩ জুন শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। সে অভিযোগপত্র আর আদালতে পেশ করা হয় না। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।