খোকনের রাজনীতি ব্যাকফুটে
যুগের চিন্তা রিপোর্ট :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:৫৮ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২৪ রোববার
গত ৫ আগষ্ট পটপরির্বতনের পর থেকেই রূপগঞ্জ জুড়ে এক আতঙ্কের নাম হিসেবে উঠে এসেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের নাম। যিনি জেলা বিএনপির নাম ব্যবহার করে পুরো রূপগঞ্জে একক আধিপত্য বিস্তার করছেন। যার প্রমান ইতিমধ্যে রূপগঞ্জে বহু নেতাকর্মীদের হাতে হাতে রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রূপগঞ্জের বালু সিন্ডিকেট সবই বর্তমানে খোকনের দখলে যা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি জুড়ে বইছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা তার পাশাপাশি একজন ক্লিন ইমেজের প্রবীন নেতা তিনি। যার দরবারে মাত্রা তিরিক্ত অপকর্মকারীদের কোন ঠাঁই নেই। যার ফল পশ্রুতিতে বর্তমানে জেলা বিএনপির কোন কর্মসূচিতে গিয়াস-খোকনকে এক কাতারে দেখা যায় না। গতকাল ৮ নভেম্বর শুক্রবার ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
তাদের এই র্যালি সফল করতে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী নয়াপল্টনে উপস্থিত হন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ব্যানারে ও হাজারো নেতাকর্মী লক্ষ করা গেলে ও দেখা যায়নি কথিত সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনকে। গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির র্যালি অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। এদিকে গেলাম ফারুক খোকনকে রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ব্যানারের পিছনে ঘন্টা ২ এর মতো নটডরেম কলেজের সামনে দেখা গেলেও পরবর্তীতে উধাও হয়ে যান তিনি। তা ছাড়া নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে র্যালিতে শৃঙ্খলা ও র্যালি মনিটরিং করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সে সময় তারা জেলা বিএনপির ব্যানারের পিছনে সভাপতি গিয়াস উদ্দিনকে দেখতে পান ও মাইকে সম্মানের সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির বিশাল শোডাউন প্রকাশ হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মাঝে চুপি চুপি কথা লক্ষ্য করা যায়। যার মাধ্যমে আর বুঝতে দেরি নেই খোকনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎে ধস।
সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে ব্যাপকভাবে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছেন এই গোলাম ফারুক খোকন। নব্য এই রাজনৈতিকবিদ যিনি অল্প কিছুদিন যাবৎ রাজনীতিতে এসেই বিএনপির নির্বাহী কমিটি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর ছত্রছায়ায় ছাত্রদলের কোন রাজনীতি বা পদ-পদবীতে না থেকেই প্রথমে একটি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি পরবর্তীতে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া পর পরই দিপুর আর্শিবাদে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক বনে গেছেন এই গোলাম ফারুক খোকন।
এদিকে বর্তমানে গিয়াসের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একটি চক্র প্রকাশ্যে গিয়াসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যাদের সাথে এই গোলাম ফারুক খোকনের অনেকটাই সুসম্পর্ক যা আজকের রাজধানীর প্রেগামেই প্রকাশ পেয়েছে। অনেকে আবার বলছেন গিয়াসের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের সাথে খোকনের কোন হাত রয়েছে কি না তা নিয়ে ও চলছে সমালোচনা। তা ছাড়া বর্তমানে শুধু রূপগঞ্জ দখলেই রাখতে ব্যস্ত খোকন। আর সেখানে কেউ হাত দিলে তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবেন তিনি এমনটাই বলতে শোনা গেছে তার দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে।
এ দিকে জানা গেছে, কিছুদিন পূর্বে তারাবো পৌরসভা জুড়ে লুটপাটের পাশাপাশি দুই চালককে মারধর করে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের ট্রাকভর্তি বালু লুটের ঘটনায় অভিযুক্ত লুটপাটকারী যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ায় হাফিজুর রহমান পিন্টু জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের চ্যালা হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বিগত দিনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে থাকা গোলাম দস্তগীর গাজীর সাম্রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ করছেন এই বিএনপি নেতা গোলাম ফারুক খোকন। বর্তমানে চ্যালা চামুন্ডারা যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক বা গ্রেফতারে আসলে ও শেল্টার দাতা হিসেবে গোলাম ফারুক খোকন বারবারই বেঁচে যাচ্ছে।
এদিকে পিন্টুর গ্রেফতারের খবরে অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে পরেছিলেন রূপগঞ্জ। কিন্তু গ্রেফতারের কয়েকদিনের মধ্যে জামিন পেয়ে বেড়িয়ে আসায় তার নেতাকর্মীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। ইতিমধ্যে গোলাম ফারুক খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মুড়াপাড়া ইউনিয়নের আওতাধীন দখলে রাখা গার্মেন্টসগুলোর নাম হলো- সিম ফেবিক্স, এস কে এফ র্ফামাসিটিকে‘স, ওয়াটা ক্যামিকেল‘স, এসি আই, টাইগার কোমল পানিয়/মিনারেল ওয়াটার, মীর সিমেন্ট, মেঘনা গ্রুপ, রূপসী কনক্রিট, সিকদার সল্ট, বি এইচ এল গ্রুপ। একই সাথে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন জুড়ে তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে- গ্রামটেক, ফকির এপারেলস, সানজানা গার্মেন্টস।
তাছাড়া তারাবো পৌরসভা এলাকায় এ সি এস ট্রেক্সটাইল। সবই বর্তমানে খোকন ও তার লোকজনদের দখলে। এদিকে সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান বালু হাবিবের রূপগঞ্জ সকল ড্রেজারের নিয়ন্ত্রণ, নুরুজাম্মান খানের ১৭টি ড্রেজারের ব্যবসা পরিচালনা, রূপগঞ্জ উপজেলার সকল হাইজিং কোম্পানীর সমস্ত মিল ফ্যাক্টরী একক নিয়ন্ত্রণকারী, শীতলক্ষ্যা জেডির সকল লোড-আনলোড ড্রেজারের নিয়ন্ত্রণ সবই বর্তমানে একক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিএনপি নেতা গোলাম ফারুক খোকন। শুধু তাই নয় এমন আরো শত শত প্রতিষ্ঠান বর্তমানে খোকনের নিয়ন্ত্রণে।
তাছাড়া রূপগঞ্জ দখলে রাখতে তাদের বলয়ের লোকজন দিয়েই মূলদল ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি সাজিয়ে রেখেছেন এই খোকন। এদিকে আওয়ামী লীগের অন্যতম দোসর বসুন্ধরা গ্রুপের সাথে আতাঁত করে রূপগঞ্জে একটি বিশাল আধিপত্য বিস্তারের পায়তারা করছেন তিনি। এ ছাড়া দাউদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারীর মাধ্যমে পূর্বাঞ্চল এলাকায় জমি খেকো বনে যাচ্ছেন এই খোকন। বিভিন্ন অভিযোগে বর্তমানে লুটে এগিয়ে থাকলে ও রাজনীতিতে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে খোকন। যার ফলে এখন আর দলীয় কর্মসুচিতে খোকনের স্থান হয় না জেলা বিএনপির ব্যানারের পিছনে।