বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ৩০ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পোড়া পাসপোর্ট অফিস সংস্কারের অপেক্ষায় সেবাপ্রত্যাশীরা

আরিফ হোসেন :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:২০ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার

# সংস্কারের জন্য বাজেট পাশ হয়েছে শোনা গেলেও কাজ শুরু করেনি ঠিকাদার

# অন্য জেলায় পাসপোর্ট করতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়

প্রায় চার মাসেও চালু হয়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেয়া নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এখনও এই কার্যালয়ে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়ন ও নতুন পাসপোর্ট করতে আগ্রহী গ্রাহকরা অন্যান্য সেবা গ্রহিতারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া আগুনে আট হাজার পাসপোর্ট পুড়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা । দ্রুত পাসপোর্ট অফিস চালু করার দাবি জেলাবাসীর। এর আগে জেলা প্রশাসক আশ^াস দিয়েছিলো অচিরেই পাসপোর্ট অফিসের সংস্কার কাজ শুরু হবে।

 

তবে দীর্ঘ চার মাসেও সংস্কার কাজ শুরু না করতে পারায় সাধারন গ্রাহকরা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। গতকাল রোববার (১০ নভেম্বর) সরেজমিনে পাসপোর্ট অফিসে গেলেও কোন কর্মকর্তা ছিলেন না, একমাত্র দারোয়ান ব্যতিত। এমনকি আগে পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বে থাকা যে সকল কর্মকর্তা ছিলেন তারা কেউ আর সেখানে উপস্থিত নেই।

 

পাসপোর্ট অফিসের নতুন উপ-পরিচালক (ডিডি) যে হয়েছেন যে এখনো আসেননি। তবে পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্বে থাকা দারোয়ান জানান, কবে পাসপোর্ট অফিসের কাজ চালু হবে তা জানিনা যতুটুকু শুনেছি সংস্কারের জন্য বাজেট পাশ হয়েছে কিন্ত যে ঠিকাদার এই কাজের দায়িত্ব নিয়েছে যে, এখনো কাজ চালু করেনি। আশা করছি খুব তাড়াতারি কাজ চালু হতে পারে।

 

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাতে হামলা চালায় নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। প্রধান ফটকের তালা ভেঙে শত শত মানুষ ভেতরে ঢুকে লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে চার তলা ভবনটিতে। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সার্ভার, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও যাবতীয় নথিপত্রসহ গ্রাহকদের আট হাজার তৈরি পাসপোর্ট। ধংসস্তুপে পরিণত হয় সরকারি এই কার্যালয়টি। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রায় তিন কোটি টাকার সম্পদ। শুধু তাই সেই সময় প্রায় ৮ হাজার পাসপোর্ট ছিলো অফিসটিতে যেগুলো সবগুলোই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

 

এঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পুরো জেলাবাসী। প্রতিদিন সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন শত শত মানুষ।

 


 সম্প্রতি রাজধানীর কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীর পাসপোর্ট অফিসে নারায়ণগঞ্জের গ্রাহকদের অঞ্চলভিত্তিক সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হলেও অধিক দূরত্ব ও গ্রাহকদের চাপের কারণে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না এই জেলার গ্রাহকরা । যেই পাসপোর্ট অফিসগুলোতে নারায়ণগঞ্জের লোকেরা পাসপোর্ট করতে যায় সঠিক সেবাটা পেতেও কষ্ট হচ্ছে এমনকি দুই জেলার লোকের পাসপোর্ট একসাথে হওয়ার কারনে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকেও সময় স্বল্পতার কারণে আবারো চলে যেতে হচ্ছে।

 


ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকার নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি। আন্দোলনে পুড়িয়ে দেয়ার আগে প্রতিদিন জেলা সদরসহ সব উপজেলা থেকে কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার গ্রাহক বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে আসতেন। পুড়ে যাওয়া কারনে অনেকেই পাসপোর্ট না পেয়ে অনেকটা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। কারো ভিসা পর্যন্ত বাতিল হয়েছে আবার অনেকেই বাহিরে যেতে পারেননি।

 

 

এ বিষয়ে পাসপোর্ট গ্রহীতা বলেন, ‘আন্দোলনের আগে আমি পাসপোর্ট করতে দিয়েছিলাম। ডেলিভারির তারিখে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখি কোন মানুষজন নেই। একটা সিকিউরিটি গার্ড পর্যন্ত দেখলাম না। কেউ যে একটা তথ্য দেবে এমন একটা মানুষও এখানে নেই। পরে জানতে পারলাম এখানে আগুন দেয়ার দিন আট হাজারের মতো রেডি পাসপোর্ট পুড়ে গেছে। আমার পাসপোর্টও নাকি পুড়েছে। পরে বিভিন্নভাবে খবর নিয়ে জানতে পারি এই জেলার পাসপোর্ট কেরাণীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী অফিসে করা হচ্ছে। তিন অফিস ঘুরে পরে আমি পাসপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছি’।

 

তাই এই নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিস যেন খুব তাড়াতাড়ি চালু করে দিয়ে গ্রাহকদের সমস্যা সমাধান খুব দ্রুত সময়ে করা হয় এইটাই তাদের প্রত্যাশা।