দুর্ধর্ষ দুই চাঁদাবাজে জিম্মিদশায় বন্দরের লক্ষণখোলা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১০:৫০ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ বুধবার
# চাঁদা দাবী করেছে কিনা আমি অবগত নই : এড. সাখাওয়াত
# অভিযোগ সত্য হলে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো : এড. টিপু
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নাম ভাঙিয়ে দখলবাজিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে মহানগরীর ২৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফারুক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সাউদ চুন্ন। চাঁদাবাজির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধিয়েছেন বিএনপির এই দুই নেতা। চাঁদাবাজ চুন্নুর বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছেন বন্দরের লক্ষ্মণখোলা এলাকার ব্যবসায়ী মহল ও শিল্প কলকারখানার মালিকেরা।
এদিকে অতিষ্ট হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বারর্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য, আয়েশা ইপিএস ইনস্যুলেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন বাবু। এই লিখিত অভিযোগের অনুলিপি র্যাব-১১, বন্দর থানার ওসি, জেলা শিল্প পুলিশ, জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি বরাবর দাখিল করা হয়।
তিনি লিখিত অভিযোগে জানান, ইদানিং বেশ কিছু লোকজন অবৈধভাবে আমার কারখানায় এসে চাঁদা দাবিসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধমকি দিচ্ছে এবং প্রয়োজনে কারখানায় লুটতরাজ করা হবে বলে হুমকি দিতেছে।
উল্লেখ্য যে, (১) ২৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি সেক্রেটারি কামরুল হাসান সাউদ ওরফে চুন্নু, পিতা- মোহাম্মদ আলী, (২) মোঃ মমিন উল্লাহ সাউদ জুম্মন, পিতা- জাফরউল্লাহ সাউদ (৩)মো: রাব্বি সাউদ, পিতা- মনির হোসেন, (৪) মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পিতা মো: লাভলু মিঞা সর্বসাং লক্ষনখোলা, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ সহ আরও ১৫/২০ জন মাঝে মধ্যেই আমার কারখানার নিকট এসে অবৈধভাবে মহড়া দিয়ে চাঁদা দাবি করে, অন্যথায় কারখানা ভাঙচুর এবং লুটপাট করবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে এবং আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার ও হুমকি দিতেছে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, আমার পিতা মরহুম শহীদুল্লাহ বিএনপি'র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিস্বার্থভাবে দলের জন্য কাজ করে গেছেন। কিন্তু আমরা (আমি সহ আরও আমার বড় দুই ভাই) স্বক্রিয়ভাবে কোন দল করি না কিন্তু অন্তরে বিএনপি'র আদর্শ লালন করি। আমরা দেশের স্বার্থে এবং এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবসা বাণিজ্য করি। আমার অন্য দুই ভাই সাজু এবং জনাব রাজু অন্য দুটি কারখানা তত্ত্বাবধায়ন করে থাকেন। কিন্তু এলাকার বিএনপি নামধারী কিছু সন্ত্রাস চাঁদাবাজ গত ০৫-০৮-২০২৪ ইং ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকার পতনের পর হতেই এলাকায় সরব হয়ে উঠেছে। এতে করে দলের ক্ষতিসহ এলাকায় অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। জনমনে নানা ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন যে, বিগত ২৪-০৯-২০২৪ ইং তারিখ আমার কারখানার সংলগ্ন চায়না ব্যাটারী ফ্যাক্টরীটি ভাঙচুর এবং লুটপাট করে উল্লেখিত কামরুল হাসান সাউদ ওরফে চুন্নু গ্রুপ। পরবর্তীতে বিশাল অংকের চাঁদা আদায় করে উক্ত কারখানা থেকে। সেই চাঁদার টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গত ০১-১১-২০২৪ ইং তাদের বাগ বিগন্ডা এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে, যা আমার লোকমুখে জানতে পারি। কিন্তু উল্লেখিত কামরুল হাসান সাউদ ওরফে চুন্নু আমাকে এবং আমার বড় দুই ভাই জনাব সাজু এবং জনাব রাজুর বিরুদ্ধে বন্দর থানাসহ বাংলাদেশের আরো কয়েকটি থানায় মামলা দিবে বলে মোবাইলে ও সরাসরি চাঁদা আদায়ের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। আমার এবং আমার কারখানার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে পুলিশ মোতায়েনপূর্বক নিরাপত্তা নিশ্চিতকররণে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান প্রার্থনা করেন।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন লক্ষণখোলা এলাকায় চাইনিজদের মালিকানাধীন একটি ব্যাটারি কারখানা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন ফারুক হোসেন ও চুন্নু। কারখানা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফারুক হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সাউদ চুন্নু মিয়া দুই দফায় ৫ লাখ ঢাকা করে চাঁদার টাকা গ্রহণ করেন। ডংজিন ব্যাটারী ফ্যাক্টরীর ভেতরে অবস্থিত সিসিটিভির ফুটেজে চাঁদা নেয়ার দৃশ্য রয়েছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতা ফারুক হোসেন এবং চুন্নু মিয়া সরাসরি এসে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এই অজুহাত তুলে ২০ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় ব্যাটারী কারখানাটি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে আপোষ রফায় গত ১০ অক্টোবর এবং ১৫ অক্টোবর দুই দফায় কারখানার অফিস থেকে ৫ লাখ করে চাঁদা নিয়ে যায় বিএনপির এই দুই নেতা। আদায়কৃত টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফারুক হোসেনের সাথে সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সাউদ ওরফে চুন্নু মিয়ার বিরোধ বাঁধে। এই বিরোধের জের ধরে গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় লক্ষণখোলা মাদ্রাসা স্ট্যান্ড সংলগ্ন চুন্নুর অফিসে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারী কামরুল হাসান সাউদ ওরফে চুন্নু মিয়া তারই সংগঠনের সভাপতি ফারুক হোসেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী সাজু, রাজু, বাবুসহ ১২ জনকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে বন্দর থানায় এজাহার দায়ের করেন।
এলাকাবাসী জানায়, ডংজিন ব্যাটারী ফ্যাক্টরী থেকে আদায় করা ১০ লাখ চাঁদাবাজির টাকার বেশির ভাগ অংশই চুন্নু মিয়া নিজের কাছে রেখে দিলে সভাপতি ফারুক হোসেনের সাথে তার বিরোধ বাঁধে। মামলার এজাহারে স্থানীয় তিন ব্যবসায়ী সাজু, রাজু ও বাবুকে আসামী করে ভিন্নভাবে ফায়দা লুটার চেষ্টা চালাচ্ছে ফারুক হোসেন ও চুন্নু।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি উনারা তাদের এলাকায় অবস্থিত একটি চায়না ব্যাটারী কারখানার কালো ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষণ হচ্ছিল সেই কারণে এলাকাবাসীদের নিয়ে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করেছে, এ বিষয়ে আমি অবগত আছি এর বাহিরে কোন চাঁদা দাবী করেছে কিনা আমি অবগত নই।’
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত না, লোক মুখে যতটুকু শুনতে পেয়েছি। সেখানে চায়না ব্যাটারি কারখানা রয়েছে। যার কালো ধোয়ায় যা পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। যার কারণে এসপি, র্যাব, ইউএনওসহ বসে সেই কারখানা সিলগালা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর বাহিরে যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে প্রসাশনের যারা এটা বন্ধ করেছে তারা তাদের ডেকে কথা বলবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এখানে অন্য কিছু রহস্যজনক রয়েছে। এখন যেহেতু অভিযোগ হয়েছে সেখানে প্রসাশন এখন সত্যতা যাচাই করবে। আর সেখানে যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে যে অভিযোগ করেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’