রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যমুনা ডিপোতেই ভাগ্যে পরিবর্তন তেল চোর টুটুলের

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:৩৯ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লালপুরের আলোচিত সেই ব্রাজিল বাড়ির মালিক আওয়ামী লীগের দোসর জয়নাল আবেদীন টুটুল ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে যমুনা ডিপোর একজন সামান্য কর্মচারী থেকে তেল চুরি করে বনে গেছেন কোটি টাকার মালিক। আর কী ধরনের আলাউদ্দিনের চেরাগ পেলো তা নিয়ে গোটা নারায়ণগঞ্জে গত ৫/১০ বছর যাবৎই চলছে আলোচনা। বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলকে হাইলাইট করে নারায়ণগঞ্জসহ দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছিলেন টুটুল। কিন্তু যার কিছুদিনের মধ্যে তেল চুরির কাহিনী লজ্জাজনত অবস্থায় নিয়ে গেছে তাকে। এদিকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে ওসমান পরিবারের পেত্মাদের ছত্রছায়ায় যমুনা ডিপো জুড়ে চালিয়েছেন রাজত্ম। তা ছাড়া ২০০৫ সালে জয়নাল আবেদীন টুটুলের চাকরি স্থায়ী হয়। পরে তদবীর ও টাকা পয়সা খরচ করে কৌশলে সে তার পদবী পরিবর্তন করে অপারেটর (তেল মাপা) পদে পদায়ন হয়। আর অপারেটর হওয়া মানে তেলের ভেতর ঢুকে যাওয়া। মোটকথা সে যেদিন অপারেটর হয়ে গেল সেদিন থেকে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তবে অপারেটর হওয়ার পর তার আবার সাধনা হলো সে গ্রেজার হবে। গ্রেজার হলো তেল মাপা, মানে যেখানে বড় মাপের তেল মাপা হয়। মাপের হেরফেরের মাধ্যমে দৈনিক লাখ লাখ টাকা ইনকাম হয়। মাসে কোটি টাকা। ধীরে ধীরে তার ভাগ্যের চাকা খুলে যায়। অল্প দিনের মধ্যে তেল চুরির বিদ্যা রপ্ত করেন টুটুল। এক পর্যায়ে ওসমানীয় পেত্মাদের বিভিন্ন লবিংয়ে বাংলাদেশ অয়েল এন্ড গ্যাস ওয়ার্কাস ফেডারশনের সহ-সভাপতি পদে যান তিনি যার পরপরই তিনি নারায়ণগঞ্জসহ বাংলাদেশের সকল ডিপোর সাথে ভালো সখ্যতা তৈরি করে ফেলেন। এদিকে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তোপের মুখে পরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে ঘিরে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় তিনি। এর পরপরই সারাদেশের সকল এমপি-মন্ত্রীরা পালিয়ে যায় তার সাথে নারায়ণগঞ্জের সকল এমপি এমনকি ওসমান ও তাদের প্রেত্মাতারা পালিয়ে গেলে সাথে সাথে পালিয়ে যান এই তেল চোর টুটুল। বর্তমানে পরিস্থিতি আবারো নিয়ন্ত্রণে আসলে আবারো যমুনা ডিপোতে ফিরতে বিএনপির কিছু কথিত নেতাকর্মীদের সাথে জোরদার লবিং চালাচ্ছেন টুটুল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফতুল্লার লালপুরে ব্রাজিল বাড়ির মালিক জয়নাল আবেদীন টুটুল। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর মজুরটেক। গ্রামের স্কুলে ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে। তার বাবা রফিক মিয়া ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পঞ্চবটিতে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি যমুনা অয়েল কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ড। বাবার মৃত্যুর পর যমুনা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি পায় টুটুল। নো ওয়ার্ক নো পে পদ্ধতিতে যমুনা অয়েল কোম্পানির ক্যান্টিনে দৈনিক ৫৫ টাকায় বেতন ছিল টুটুলের। পরবর্তীতে যমুনা অয়েল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ করা তিনজন কর্মকর্তা ও দুইজন সিবিএ নেতার কল্যাণে টুটুল অপারেটরের পদ চাকারি পান। ভাগ্য খুলে যায় টুটুলের। কারণ প্রতিদিন বিভিন্ন তেলবাহী গাড়িতে তেল চুরির মূল হোতা হলো ওই অপারেটর। একপর্যায়ে চাকরি নেন গ্রেজারের। গ্রেজার মূলত বড় বড় তেল মাপায় জড়িত।
যমুনা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন গ্রেজারের দৈনিক আয় কমপক্ষে ১ লাখ টাকা। কখনো কখনো মাসে এ টাকার অংক ছাড়িয়ে যায় কোটিতে। মূলত তেল চুরির টাকা দিয়ে ফতুল্লার লালপুরে আলিশান ব্রাজিল বাড়ি গড়ে তুলেন টুটুল।  নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যাদের নামে মাত্র ১৫ শতাংশ জমি রয়েছে তাদেরই এখন ফতুল্লার লালপুরে ব্রাজিল বাড়ির পাশাপাশি প্রচুর জমিরও মালিক তারা। নারায়ণগঞ্জের ইউসিবি ব্যাংক থেকে ১০ বছর মেয়াদে ২০ লাখ টাকা লোন নিলেও মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে পরিশোধ করা হয় টাকা। টুটুলের এসব কাহিনী ব্রাজিল বাড়ির বদৌলতে সকলে পজেটিভ বিষয় জানলেও ইতোমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে একবার বদলিও করা হয়েছে। দুদকে জমা পড়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। আরো জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ টুটুল ১০ বছর মেয়াদে ২০ লাখ টাকা লোন নেয়। কিন্তু মাত্র দেড় বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পুরো লোন পরিশোধ করে টুটুল। প্রশ্ন উঠে মাত্র দেড় বছরে ২০ লাখ টাকা টুটুল পেল কোথায়? এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফতুল্লার পিলকুনি মৌজায় ৪ শতাংশ জমি, সম্প্রতি ব্রাজিল বাড়ির সন্নিকটে আরও ৮ শতাংশ জমি কিনেছেন টুটুল। অথচ টুটুলের বেতন ২৫ হাজার ৪৬২ টাকা। এই বেতনের একজন কর্মচারী রাতারাতি এতো টাকার মালিক বনে যাওয়ার বিষয়টি আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো লাগছে এলাকাবাসীর কাছে। এক পর্যায়ের টুটুলের বিরুদ্ধে যমুনা ওয়েল কোম্পানির একজন দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেন। দুদকের শুনানীতে টুটুলকে ডাকাও হয়েছিল। আবারো এই টুটুলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুককে) নতুন রিপোর্ট তৈরির করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছে অনেকেই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নাল আবেদিন টুটুল যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমি কোন দুর্নীতির সাথে যুক্ত নেই। আমি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের বাইরে আছি। নারায়ণগঞ্জে ফিরলে এব্যাপারে কথা হবে।’