অধরা রয়েছেন ওসমানদের আস্থাভাজন মামা-ভাগ্নি
যুগের চিন্তা রিপোর্ট :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:৫২ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার
# ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের একচ্ছত্র মাফিয়া ছিলেন খালেদা হায়দার খান কাজল
নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘ ১৫ বছরে একচেটিয়া শাসন শোষন করেছে ওসমান পরিবার। এই শহরে তাদের পুরো পরিবার মিলে বিশাল বাহিনীর মাধ্যমে ওসমানীয় সাম্রাজ্য গড়ে তুলে নানাভাবে অপরাধ জগত চালিয়ে গেছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে শামীম ওসমান দরবারের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের কয়েকজন পাতি নেতা গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে ওসমানদের আশীবার্দে যারা সীমালঙ্ঘন করে একের পর এক অপরাধ করে এখনো অধরা রয়েছে অনেক বিগফিশ। তারা আবার মামা ভাগ্নি হিসেবেও পরিচিত নারায়ণগঞ্জ সর্বমহলে। যদিও ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান চালানো শুরু হলেও বড় নেতারা কেউ গ্রেপ্তার হয় নাই।
এদিকে ওসমান সাম্রাজ্যের অপরাধ জগতের বিভিন্ন সেক্ট্ের একেক খলিফা দায়িত্ব পালন করে অপরাধ চালাত। এই অপরাধ জগতের উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন ব্যবসায়ীদের কাছে মাফিয়া হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। একই সাথে তিনি নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে খালেদ হায়দার খান কাজলের ভাগ্নিও আদালতপাড়ায় প্রভাব বিস্তার করে আইনজীবিদের উপর নির্যাতন চালাত।
এদিকে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছে খালেদ হাদায়র খান কাজল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের অলিখিত উপদেষ্টা থাকায় ব্যবসয়ীদের উপর ভোল্টজার দিয়ে চাদাঁবাজি চালিয়েছে। যখনি টাকার প্রয়োজন হত তখনি অমুক-তমুক ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা অংকের টাকা চাওয়া হত। ব্যবসায়ীরাও গডফাদার খ্যাত সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ভয়ে হলেও দিতে বাধ্য হতেন। ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশন, হোসিয়ারি সমিতি, নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনসহ নিতাইগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীদের মাঝে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে এই মাফিয়া কাজল। আর এজন্য তিনি ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজ মাফিয়া হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সম্প্রতি গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান সহ ওসমান সম্রাজ্যের সদস্যদের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। কিন্তু গুঞ্জন উঠেছিল বিশাল অংকের টাকায় খালেদ হায়দার খান কাজলের নাম যেন মামলায় না আসে। এমনকি তার এড. ভাগ্নির নামও যেন না থাকে। কিন্তু কথায় আছে যদি থাকে নসিবে তারে রক্ষা করে কে? তাদের বেলায়ও তাই হয়েছে। তারই ধারা বাহিকতায় এবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা-গুলিবর্ষনের অভিযোগে শামীম ওসমান, অয়ন ওসমানও শাহ নিজাম, খালেদ হায়দার কাজল সহ ৬০ জনের নাম উল্লেখ করে ও ২০০/৩০০ জনের নামে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বও ফতুল্লার কুতুবপুর লামাপাড়া এলাকার সাদেক আলীর ছেলে আহম্মদ আলী বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। আর এতে করে খালেদ হায়দার খান কাজলের নাম দেয়া হয়। সেই সাথে তার নাম হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় খালেদ হায়দার খান কাজলের ভাগ্নি এপিপি হয়ে এড. সুইটি ইয়াসমিন আইনজীদের উপর একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে। জামাত বিএনপি পন্থি আইনজীদের সাথে প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করেছে। এমনকি আওয়ামলীগের আইনজীবিরা পর্যন্ত তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পায় নাই। এড. সুইটির স্বামী মাসুম ছিলেন ডাইং ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্ক। কাজলের ভাগ্নি এড. সুইটি ইয়াসমিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলার আসামী হন।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মিনারুল ইসলাম নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একই মামলায় অ্যাডভোকেট সুইটি ইয়াসমিনও আসামী হন। মামলার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নিহতের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতো দিন মামা ভাগ্নি রক্ষা পেলেও শেষ বেলায় এসে তারাও হত্যা মামলায় ফেরারী আসামী হয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছে। কিন্তু তারা শামীম ওসমানের আস্থাভাজন হওয়ায় এখনো পালিয়ে থেকে অধরা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করার দাবী জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল।