যানজটে নাকাল নগরবাসী
লতিফ রানা :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৪২ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার
# যানজট কমার বদলে উল্টো বেড়ে চলেছে : শহরবাসী
# একটামাত্র সড়কেই দাঁড়িয়ে আছে এই নারায়ণগঞ্জ শহর : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
# যানজট নিরসনে দায়িত্বরতরা তাদের ভূমিকা পালন করছে না : রফিউর রাব্বী
# আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে দ্রুত আরও শক্তিশালী করতে হবে : ধীমান সাহা
বছরের পর বছর যাবত যেসকল সমস্যাগুলো নারায়ণগঞ্জবাসীর নিত্যসঙ্গী হিসেবে ভোগান্তি দিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম শহরের প্রধান সড়কগুলোর যানজট। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা যে সমস্যা নিরসনের দাবি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভা সমাবেশে চাপাবাজি করে গিয়েছেন, একে অন্যকে দোষী সাব্যস্ত করে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন, কিন্তু নিরসনে কোন ভূমিকাই রাখতে পারেননি, বলতে হয় রাখেননি। শহরের সূধীমহলেরর বিভিন্ন সচেতন ব্যক্তি এরই মধ্যে বিভিন্ন দপ্তরে এই সমস্যা নিরসনে হস্তক্ষেপ কামনা করে ধর্ণা দিয়েছেন। মিডিয়ায় শহরের মানুষের এহেন ভোগান্তির খবর প্রচার এবং এর কারণ ও করনীয় সম্পর্কেও একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন জনগপ্রতিনিধিগণও বিভিন্ন সময় তাদের ভূমিকার আশারবানী শুনিয়েছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এরই মধ্যে দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ সব সময়ই তাদের জনবলের অভাবসহ তারা তাদের কাজ ঠিক মতো করে যাচ্ছেন বলে নিরাশ করে যাচ্ছেন। তবে সচেতন মহলের মতে ট্রাফিক বিভাগ চাইলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার তার প্রমাণও ট্রাফিক পুলিশ দিয়েছেন বলে সচেতন মহলের ধারণা। কিন্তু এই সমস্যা দিনকে দিন না কমে উল্টো আরও বেড়ে চলছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহরের ভুক্তভোগী জনগণ। তবে এমন জনবহুল একটি শহরের একটি মাত্র কার্যকর সড়ক থাকায় লোড সামলাতে পারছে না বলে ট্রাফিক বিভাগের অভিমত।
এক দিকে ছোট্ট এই শহরের অধিক জনগণের চাপ, তার উপর শিল্প ও ব্যবসা সমৃদ্ধ জেলা নারায়ণগঞ্জের এত যানবাহন চলাচলের জন্য মাত্র একটি কাযকর সড়ক। নেই কোন বিকল্প সড়ক। তার উপর এই সড়কের দুই পাশের ফুটপাত হকারদের দখলে আছে। আছে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বাসস্ট্যান্ড। শহরের বিভিন্ন মোড়গুলোতে সিএনজি, অটো ইজিবাইক ও লেগুনাগুলো স্ট্যান্ড বানিয়ে দখল করে নিয়েছে। প্রধান সড়ককে ঘিরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন শপিং মলে নেই কোন গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। এরই মধ্যে দিন নেই রাত নেই, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানসহ বড় বড় গাড়িগুলো রাস্তা দখল করে করছে লোড-আনলোড। তার উপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আছে বিভিন্ন দপ্তরের রাস্তা কেটে বিভিন্ন সংস্কারের কাজ। আর ব্যাটারি চালিত অটো ইজিবাইক রাস্তায় এখন বেঙের ছাতার মতো ছেয়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি মানুষের এই শহর এখন থমকে আছে যানজটে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল যুগের চিন্তাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজটে সবচেয়ে বড় কারণ ব্যাটারী চালিত অবৈধ গাড়িগুলোর প্রাদুর্ভাব। বিশেষ করে ৫ অগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর ট্রাফিক বিভাগের এই দুর্বলতার সুযোগে নারায়ণগঞ্জ শহরে আরও বেশ কিছু নতুন অটো ইজিবাইক ঢুকে পড়েছে। তাছাড়া এই শহরের যানজটের সমস্যার জন্য হকারের অনিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাতো আছেই তার সাথে বিকল্প সড়কের দিকেও নজর দিতে হবে। তবে প্রথমে আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থার উপর আরও নজর দিতে হবে এবং এই সেক্টরকে দ্রুত শক্তিশালী করতে হবে।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক্ব রফিউর রাব্বি যুগের চিন্তাকে বলেন, যানজট নিরসনের প্রধান কারণগুলোর অন্যতম হলো যার যে রকম ভূমিকা রাখার কথা তারা সে ভূমিকা পালন করছে না। বিশেষ বরে ট্রাফিক পুলিশের যে ভূমিকা তা তারা রাখতে পারছে না। ট্রাফিক পুলিশ যে ইচ্ছে করলে যানজট দূর করতে পারে তা আমরা গত দুর্গা পূজায় দেখেছি। সেই পূজার সময় বেশ কয়েকদিন কিন্তু যানজট ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের সেই উদ্যোগ আর নেই। কেন নাই তা তারাই বলতে পারবে, এটা তাদের ব্যর্থতা। এর পাশাপাশি শহরে প্রচুর ইজিবাইক চলাচল করছে, যা নিয়ন্ত্রণহীন। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কোন উদ্যোগ বা ভূমিকা নাই। এরমধ্যে শহরের এই সড়কে অপরিকল্পিতভাবে বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখে। নতুন করে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আবার ফুটপাতের ব্যবসা শুরু হয়েছে। এই সবকিছুই এই যানজটের জন্য দায়ী। সরকার চাইলেই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন সাগর যুগের চিন্তাকে বলেন, যানজট নিরসন করতে না পারার অনেকগুলো কারণ আছে। এরই মধ্যে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গতকালও আমরা অর্মিসহ অভিযান পরিচালনা করেছি, প্রায় ২৯টি গাড়ি আটক করেছি। কিন্তু তারপরও তাদের মধ্যে কোন ভয় ডর নেই। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে পরিবহন চলাচলের জন্য রাস্তা মাত্র একটি (বঙ্গবন্ধু সড়ক)। এই একটি সড়ক ছাড়া নারায়ণগঞ্জে গাড়ি চলাচরের জন্য আর কোন বিকল্প সড়ক নাই। এখানে চাষাঢ়া দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করে আবার চাষাঢ়া দিয়েই বের হতে হয়। দক্ষিণ পাশের সৈয়দপুর দিয়ে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া পঞ্চবটি-পাগলা সড়কে প্রায় বারো মাসই অকেজো থাকে। সেখান দিয়েও গাড়ি বের হতে পারে না। অন্যদিকে সেই রোডে প্রায় সব সময়ই বড় বড় গাড়ি থেকে বিভিন্ন মালামাল লোড-আনলোড করা হয়, ফলে সড়কটি সব সময়ই ব্যস্ত থাকে। যানবাহন চলের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের সদস্যরা রাস্তার ডিসিপ্লিন ধরে রাখার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের এই সড়কটিতে দিনের বেলায় ট্রাকসহ বড় গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। ব্যবসাবহুল এই শহরে দিনরাত ২৪ ঘন্টাই এসব গাড়ি দরকার হয়। তাই এখানকার ব্যবসায়ীরা তা মানতে চায় না। তাই ব্যবসায়ীসহ লোকার জনগণ এসব বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়গুলো শুধু মিটিংয়েই বলে কিন্তু বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা পাই না। বাসগুলো শহরের রাস্তার উপরই স্ট্যান্ড বানিয়ে রাখে। এই বিষয় নিয়েও আমরা বিভিন্ন সময় সতর্ক করেছি এমনকি বেশ কিছু একশনও নিয়েছি, কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। আমরা আইনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। এখানে সিএনজি, লেগুনা স্ট্যান্ড বানিয়ে রাখে। তাছাড়া এখানে বছরের বারো মাসই সড়ক ও জনপথের কাজ, বিপিডিসি’র কাজ, সিটি কর্পোরেশনের কাজ চলে। এখনও ড্রেনের কাজ চলছে। এসবের কারণেও আমরা রাস্তা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছি না। তাছাড়া এখানকার শপিং মলগুলোতে কোন পার্কিং ব্যবস্থা নেই। সব কিছু মিলিয়ে আসলেই নারায়ণগঞ্জবাসী খুবই নাজেহাল অবস্থায় আছে। পুলিশের দায়িত্বের অবহেলার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকেই বেশ কিছু দিনই পুলিশের কার্যক্রম ছিল না বললেই চলে। নতুন করে কার্যক্রম শুরু করার পর বদলী জনিত কারণে আমাদের এখানে নতুন লোক আসতেছে। তবে আমাদেরও এখন একটু নমনীয় হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের সাথে সবাই এখন একটু প্রভাব দেখাতে চাচ্ছে। আমরাও চাচ্ছি না কোন গেঞ্জামে যেতে। আমরা যতটুক সম্ভব আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।