মনোনয়নের আশায় মাঠে সক্রিয় হতে মরিয়া
যুগের চিন্তা রিপোর্ট :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:৫৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ রোববার
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিনকে ঘিরে একদল নেতারা জোট বেধেছে। আবার কৌশলী আলোচনা করে ছক কষছেন। টার্গেট আসছে নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন হাতিয়ে নেওয়া। বর্তমানে মাঠে উঠে পরে লেগেছেন রাজনীতির মাঠে সক্রিয়তা নাই কিন্তু ভোট আসলেই জেগে উঠা কিছু নেতাকর্মীরা। যারা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন নিয়ে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত দিনে ও এদের নামে নানা অভিযোগ রয়েছে এরা নির্বাচন সামনে আসলেই দুই হাত ভরে টাকা বিলাতে শুরু করেন।
রাজনীতিবিদদের কারো কারো পকেটবন্দী করে ছড়ি ঘুরান। কিন্তু তারা দলের কোন দুঃসময়ে আসেন না তাদের সর্বপ্রধান টার্গেট নির্বাচন। যে কোন মূল্যে নির্বাচনে টিকে থাকার লড়াই। দল যখন দুঃসময়ে তখন তাদের পা পড়ে না এ জনপদে। কিন্তু নির্বাচন আসলে দিনরাত একাকার করে দেন। নারায়ণগঞ্জের এমন দুই রাজনীতিক হলেন শাহ আলম ও মনির হোসাইন কাশেমী। এর মধ্যে শাহআলম বিএনপি ও কাশেমী হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা। গত কয়েক মাস ধরেই তারা এলাকাতে খুব সক্রিয়। শাহআলম কাজ করছেন অন্তরালে থেকে। নেতাকর্মীদের ডেকে ডেকে শলা পরামর্শ করছেন। আর কাশেমী সরাসরি মাঠে। ব্যবহার করছেন ফতুল্লার কয়েকজন বিএনপি নেতা ও শামীম ওসমান ঘেঁষা হেফাজত নেতাদের। টার্গেট দুই কূল ঠিক রেখে ভোটের ময়দান ঠিক রাখা।
কিন্তু তার আগে তাদের টার্গেট জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। যাকে ঘিরে তাঁরা বারবারই বসেছেন জেলা বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন। ছক কষা নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে এখন থেকেই 'জেলা বিএনপির কর্তৃত্ব হাতে নিতে না পারলে মনোনয়ন বা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার সহজ হবে না। এজন্য সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোও নতুন করে নিজেদের আয়াত্তে নেওয়ার চেষ্টা করছেন এরা। এদিকে বর্তমানে এমপি হওয়ার প্রত্যাশায় যারা মনোনয়ন চান তাদের সকলকে বারবারই স্বাগত জানিয়েই চলছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
সূত্র বলছে, টার্গেট নির্বাচনের গন্ধে নাকে আসলেই গর্তে থাকা এই ঘুমন্ত নেতারা আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। তেমনইভাবে মাঠে আবারো অতিথি পাখির মতো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টায় মগ্ন মনির হোসেন কাশেমী ও শাহ আলম। জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগের অত্যাচার নির্যাতনের সময়ে ফতুল্লায় দেখা যায়নি শাহআলমকে। অনুসারী নেতাকর্মীরাও ছিল পর্দার আড়ালে। কোন মামলা হয়নি শাহ আলমের বিরুদ্ধে। ভালো অবস্থানেই ছিলেন আওয়ামী লীগের পুরোটা সময় জুড়ে। শামীম ওসমানও প্রায়শই নানা ইঙ্গিতে শাহ আলমের প্রশংসা করতেন। একই অবস্থা ছিল মনির হোসাইন কাশেমীর। তিনিও পা দেয়নি ফতুল্লায়। কারাবন্দী হওয়ার আগেও আসেনি ফতুল্লাতে, পরেও দেখা যায়নি।
তবে ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি বেশ সক্রিয়। তাকে মাঠে নামান ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মুহাম্মদ চৌধুরী। টার্গেট নির্বাচন। এদিকে গত এক দশকে মামলার কারণে ঠিকমত বাসায় থাকতে পারেনি গিয়াসউদ্দিন। মামলায় জ্বলে পুড়েছেন তিনি। শামীম ওসমানের রোষানলে যখন গিয়াস পুড়ে তখন আরাম আয়েশেই ছিলেন শাহ আলম। কিন্তু এখন দলের সু সময়ে তারা ফের জেগে উঠতে শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময়ে কল্যাণ পার্টির রাজনীতিতে জড়ান শাহ আলম। ওয়ান এলেভেনের সময়ে কল্যাণ পার্টিতে দুই হাত ভরে অনুদান দিয়েছেন। সেই পার্টির নেতা সব শেষ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে বেঈমানী করে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। শাহআলম পরবর্তীতে যুক্ত হন বিএনপিতে। টার্গেট ছিল এমপি হওয়া।
২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের সারাহ বেগম কবরীর কাছে ধরাশয়ী হন। পরবর্তীতে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও কয়েক বছর আগে আন্দোলনের সময়ে পদ ছেড়ে দেন। মাঝে খবর নেয়নি কারো। বিএনপির সঙ্গে ছিল না কোন ধরনের হৃদ্যতা। এখন দলের সুসময় তাই তিনি ফের উদয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। এদিকে বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি শাহ আলমের কোন অংশগ্রহণ ছিল না। রাজপথে নেয়া দলীয় কোন কর্মসূচিতেই তার অংশগ্রহণ থাকতো না। মাঝে মধ্যে ঘরোয়া কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে থাকলেও সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য না। এমনকি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতেও শাহ আলমের সক্রিয় কোন ভূমিকা ছিল না। তার অবস্থা অনেকটা ‘কিতাবে আছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতো।
তা ছাড়া গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লার সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের জেলার সাবেক সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। তিনি কোনও আন্দোলন সংগ্রামেও তাকে রাজপথে না থেকে ও সে সময় বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ক্যাডার শাহ নিজামের কাছ থেকে নির্যাতনের শিকার হয়েই উধাও হয়ে পরেন এই মনির হোসেন কাসেমী। পরবর্তীতে গত বছরের অক্টোবর আন্দোলন ও জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কোন প্রকারের সম্পৃক্তা ছিলো না এই কাসেমীর। কিন্তু বিগত দিনে নির্বাচনের মনোনয়ন পাওয়ার সেই স্বাদ এখনো ভূলতে পারেনি তিনি। যার কারণে রাজপথে নিস্কিয় হয়ে ও আবারো মনোনয়নের গন্ধে উঠে পরে লেগেছেন এই নেতা।
এদিকে আন্দোলন সংগ্রাম থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি চাঙা রাখতে যার ভূমিকা সর্বশিক্ষরে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা বিএনপির সুযোগ্য সভাপতি আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। যিনি ওসমানদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করেই রাজপথে ব্যাপক হারে সক্রিয় ছিলেন। দলের দুঃসময়ের কান্ডারী গিয়াসউদ্দিনকে ঠেকাতে উঠে পরে লেগেছে এই চক্রটি। কিন্তু দলের এই মননীত প্রান হিসেবে থাকা গিয়াস উদ্দিন তার বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চলছে সব কিছু উপেক্ষা করে রাজপথের কার্যক্রম অব্যহৃত রেখেছেন তিনি। এছাড়া ও এমপি হওয়ার প্রত্যাশায় যারা মনোনয়ন চান তাদের স্বাগত জানিয়েছেন এই গিয়াস উদ্দিন।
গতকাল শনিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জে ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দিদারুল আলমের মৃত্যুতে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজনে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, এই সারা এলাকায় এমপি হওয়ার প্রত্যাশা রাখে এবং আমার দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে চায় এমন সবাইকে আমি স্বাগত জানাই। কারণ তারা আন্দোল সংগ্রাম করেছেন, আর এখন তারা নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন। আমি তাদেরকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই। নির্বাচনে যে ই মনোনয়ন পাক আমরা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবো। কিন্তু এর আগে কোন গ্রুপিং করবেন না। উল্টো আর চেষ্টা করবেন আমার দলের ক্যান্ডিডেটের সংখ্যা বেড়ে যাক, হোক সেটা কাউন্সিলর মেয়র বা পার্লামেন্টের মেম্বার। এভাবেই দল এগিয়ে গেলেই আপনি আমি গর্ব করতে পারবো আমাদের নিয়ে। নারায়ণগঞ্জের প্রত্যেকটি এলাকায় মনোনয়নের জন্য বিভাজন শুরু হয়েছে। আমরা চাই আপনারা এগুলো পরিহার করুন। আল্লাহ না চাইলে আপনি কখনো জিততে পারবেন না।
তিনি বলেন, আমরা দিদারুল আলমের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। সে জীবনের শেষ সময়ও রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন। বিএনপির জন্য সে অনেক অবদান রেখেছেন। আগামীতে কাউন্সিলার নির্বাচন, মেয়র নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচন হবে। এখনো অনেকে মনের মধ্যে স্থির করে রেখেছেন আগামীতে নির্বাচন হলে আপনি কোন পদে দাঁড়াবেন কারণ এখন আর কোন আটক হবার বা অন্যকিছুর ভয় নেই। দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচন করার আশা পোষন করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি কাউন্সিলারে পদে দাঁড়ালাম, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ যখনই দাঁড়াবে তখন থেকে তার বিরুদ্ধে কথা বলবো, তার বিরুদ্ধে কাজ করবো এটা ঠিক নয়। আমি বাদে যদি কেউ মনোনয়ন চায় তাহলে আমি তাকে দুশমন ভেবে নিবো এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এটা নির্বাচনে কাউন্সিলর মেয়র বা সংসদ সদস্য পদে যত বেশি প্রার্থী হবে ততই আমার দল শক্তিশালী হবে। মনোনয়ন চাওয়া একটা কর্মীর অধিকার। একটা অধিকার যদি কেউ প্রয়োগ করার জন্য চায়, তাহলে কেন তার বিরুদ্ধে আমরা কাজ করবো। আমাদের চিন্তা করতে হবে যে আমাদের দল এতই বড় মাপকাঠির যে অনেক কর্মীরা কাউন্সিলর হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এটা আমাদের দলের গৌরব আমাদের গৌরব। আমাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে কিন্তু অনেকে যখন কাজ করেন তখন আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখেন না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন আমার যা প্রতিদ্বন্দী আছে তারা যদি মেরে বা সরিয়ে ফেলতে না পারি বা সাইজ করতে না পারি তাহলে তো আমি জিততে পারবো না এই চিন্তা থাকে অনেকের। আজ আপনি যার বিরুদ্ধে এ চিন্তা করছেন, নির্বাচন পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন তার কি গ্যারান্টি আছে। তাহলে আপনি কোন আশায় এ ধরনের কাজগুলো করেন। মনোনয়ন আসলে এমপি হবো কিন্তু মনোনয়ন আসার আগে যদি বেঁচে না থাকি? নির্বাচনের দিন আমি বেছে নাও থাকতে পারি। বিজয় দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাই আসেন আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখি। দলের কোনো নেতার বা কর্মীর বিরুদ্ধে আমরা কোন ধরনের কাজ করবো না, কারো বিরুদ্ধে কিছু বলবোও না। আমাকে আল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করেছেন, একপর্যায়ে পার্লামেন্টের মেম্বার ও করেছেন। আমি সিদ্ধিরগঞ্জের একটি ছোট পরিবারের সন্তান। কিন্তু আমাকে এতদূর নিয়ে গেছেন একমাত্র আল্লাহ। আর সাথে সহযোগিতা করেছে আমার বিশাল কর্মী বাহিনী। তারাই এগিয়ে এসে আমার জন্য সাহায্য সহযোগিতা করেছে। আল্লাহ যদি না চাইতেন তাহলে আমি এতদূর আসতে পারতাম না।