সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে টানা-হেঁচড়া

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:০২ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ রোববার

প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলে ও হচ্ছে না নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি। যা নিয়ে জেলা-মহানগর জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এর বাহিরে ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সেইসঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতেও ছাত্রদলের ভাটা লক্ষ্য করা গেছে। ইতিমধ্যে সকলের একটাই প্রশ্ন কমিটি গঠনে বাধা কে? কিসের এতো নয়-ছয়। এদিকে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক কমিটিতে থাকা বিতর্কিত নেতাকর্মীরা কেউ কেউ বিএনপির নিবার্হী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের মাধ্যেমে কেন্দ্রে লবিং করে যাচ্ছেন। আবার অনেকে বিতর্কিত বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের মাধ্যমে অন্য অন্য পক্ষ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান ও মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু এবং জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি এরা নিজের ব্লকের নেতাকর্মীদের ছাত্রদলের কমিটিতে আনতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। 

 

 

বর্তমানে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইস্তিয়াক সিকদার ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ এই দুই জনের মাধ্যমে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নয়া কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আনতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচেছন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। একই সাথে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়াকে আবারো কমিটিতে আনতে মরিহা হয়ে উঠেছে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ।

 

এছাড়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমানকে জিকুকে সভাপতির দায়িত্বে আনতে উঠে পরে লেগেছে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন ও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। এরা বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আবারো সাবেক বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান দিতে মরিহা হয়েছে। তা ছাড়া গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পেতে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের এক নেতাকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত অফার করেছেন একজন ছাত্রদল নেতা যা নিয়ে সমালোচনা চলছে ছাত্রদল মহলে। অনেকেই বলছে জেলা ছাত্রদলের রেট ১ কোটি ছাড়িয়েছে তাহলে মহানগর ছাত্রদলের কত উঠবে।

 


এদিকে ছাত্রদলের নয়া কমিটিতে স্থান পেতে ইতিমধ্যে ডজনখানিক নেতা প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডে কমিটি নিয়ে চলছে দেনদরবার এমনকি নারায়ণগঞ্জের বহু প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বিগত দিনে মাথা বেশি না ঘামালেও এখন ঘামাচ্ছে। যার কারণে হচ্ছে না কমিটি চলছে টানা হেচড়া।

 


এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা ও মহানগর ছাত্রদলসহ প্রত্যেকটি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, খুব শিগগিরই নতুন কমিটির ঘোষণা করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এর ফলে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। সাবেক ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের ভাষ্য, কমিটি থাকা না থাকা এটা কেন্দ্রের বিষয়। কেন্দ্র থেকে যাদের যোগ্য মনে করবে দল তাদের হাতেই ছাত্রদলের দায়িত্ব দিবে। এখানে আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু কোন বাধায় এখনো কমিটি আসছে না তা অনেকটাই রহস্যকর।

 


এদিকে কমিটি না থাকায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলকে সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ আগামীতে বিএনপিকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এ কারণে ছাত্রদলের কমিটি অনতিবিলম্বে গঠনের বিকল্প নেই। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর পরই বিভিন্ন অভিযোগে ভেঙে দেওয়া হয় ছাত্রদলের কমিটি। তা ছাড়া বিগত দিনের জেলা ছাত্রদলের কমিটি লোভীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিলো যাকে ঘিরে ইফতার পার্টিসহ নেতাকর্মীদের মাথা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পকেট ভারী করেছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকু। 

 

 

তা ছাড়া ইউনিট ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে লঙ্কাকাণ্ডসহ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এমন ডজন ডজন অভিযোগে কোনঠাসা জেলা ছাত্রদলের কমিটি। তা ছাড়া মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক রাহিদ ইস্তিয়াক সিকদারের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। তার বাবা-চাচা জাতীয় পার্টির হওয়ায় গত ১৫ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে হয়নি ১টি ও নাশকতা মামলাা আসামী। তা ছাড়া সর্বক্ষেত্রেই তিনি সময় দিতেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে যার কারণে বিপদে পরেত হয়নি তাকে। তা ছাড়া ও ছাত্রদলের কোন পোগ্রামে তিনি সময় দিতেন না বললেই চলে। সর্বশেষ গত ৫ আগষ্টের পর বন্দর থানা এলাকা জুড়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে এই রাহিদের বিরুদ্ধে।

 


এর আগে গত ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নাহিদ হাসান ভূঁইয়াকে সভাপতি এবং জুবায়ের রহমান জিকুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নতুন আংশিক কমিটির অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। একই দিনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের ৬ সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছিল রাকিবুর রহমান সাগরকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল রাহিদ ইসতিয়াক সিকদারকে। এদিকে ধার্য সময় সাপেক্ষে মহানগর ছাত্রদল সকল ইউনিট কমিটি ও নিজেদের কমিটি পূর্নাঙ্গ করতে পারলে ও জেলা ছাত্রদল ছিলেন পুরো রূপে ব্যর্থ।

 

কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে গত ৫ আগষ্টের আগমুহুর্ত্ব পর্যন্ত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়া ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকু। আর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ রাহিদ ইস্তিয়াক সিকদারকে এদেরকে ১ সেকেন্ডের জন্য রাজপথে দেখা যায়নি। কিন্তু বর্তমানে এরাই ছাত্রদলের গুরুদায়িত্ব নিতে মরিহা হয়ে উঠেছে।