ওসমান দোসরদের বাদ দেয়ার আহ্বান ব্যবসায়ীদের
যুগের চিন্তা রিপোর্ট :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:২৩ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার
বাংলাদেশের অর্থকারী ফসল সোনালী আঁশ পাটকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’ হিসেবে পরিচিত ছিল নারায়ণগঞ্জ। কিন্তু সেই প্রাচ্যের ড্যান্ডি এখন গার্মেন্টস শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেই সাথে দেশের অর্থনীতিতে ২০ পার্সেন্ট কর যায় এই জেলা থেকে। সম্প্রতি সময়ে ব্যবসায়ীদের মাদার সংগঠন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছর বেডরুমে বসে কমিটি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। যা চেম্বার অব কমার্সের এজিএমে সেই ক্ষোভ প্রকাশ পায়। তবে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মাদার সংগঠন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স নির্বাচনে ওসমান দোসররা যেন থাকতে না পারে ইতোমধ্যে সেই দাবী উঠেছে। আর সেই সুযোগ এসেছে নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের বয়কটে করে বাদ দিতে হবে। কেননা বিগত সময়ে ওসমান সাম্রাজ্যের ব্যক্তিরা এই সংগঠনকে জিম্মি করে চাদাঁবাজির আখড়া বানিয়েছে। তাছাড়া এখনো ওসমান দোসররা এখানে দাপুটে রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ নীট পোশাক উৎপাদনে ২য় আর সেখানে দেশের নীট পোশাক এর ৭০% যোগান আসে নারায়ণগঞ্জ জেলা হতে। এছাড়াও পৃথিবীর ১ম ও ২য় সর্বশ্রেষ্ঠ ২টি পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা এ জেলাতেই অবস্থিত। নারায়ণগঞ্জের এই ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে ব্যবসায়ী সংগঠনে নেতৃত্ব দেয়া ওসমান দোসররা। তাদের কাছে কোন ব্যবসায়ী সঠিক বিচারতো দূরের কথা নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের গঠনতন্ত্রের বই খুঁজে পান নাই। এমনকি যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা তেমন কোন সহযোগিতাও পান নাই বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ওসমান সম্রাজ্যের দোসরদের চাদাঁর টাকা ঠিকই দিতে হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে চেম্বার অব কমার্স সহ ব্যবসায়ী সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন।
সপ্তাহ কয়েক আগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ব্যবসায়ী সংগঠনের ওসমান দোসরদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিষ্ট সরকার দেশকে অর্থনৈতিক, সামাজিক বিচার, দেশের আইনি শাসন ব্যবস্থা সব ধ্বংস করে দিয়ে এখন পালিয়েছে। ফতুল্লা অঞ্চলটি শিল্পাঞ্চল এলাকা। আপনারা জানেন আমাদের নারায়ণগঞ্জের অনেক ব্যবসায়ী স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার সাথে আতাত করে সুবিধা নিয়েছে। নিরিহ ব্যবসায়ীদের উপর অন্যায় ভাবে অত্যাচার চালিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান দখল নিয়েছে। ভালো ব্যবসায়ীরা নেতৃত্বে আসতে পারে নাই। মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারে নাই। বিগত সময়ে যারা ওসমান পরিবার দোসর হিসেবে চিহ্নিত তাদেরকে ব্যবসায়ী সংগঠন বিকেএমই ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স থেকে বাদ দিতে হবে। যারা ওসমান পরিবারের দোসর তাদেরকে বাদ দিয়ে অবিলম্বে ভালো লোকদের নিয়ে নতুন করে কমিটি করতে হবে। বিকেএমইএতে আজকে কে নেতৃত্ব দিচ্ছে, ওসমান পরিবারের এক নম্বার দোসর হাতেম। এই হাতেম বলেছিল তারা যতদিন আছে ততোদিন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখবো। তার সেই কথা আমরা ভুলে যাই নাই।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র ২০২৫-২০২৭ ইং মেয়াদের নির্বাচন আগামী বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী নির্ধারণ করা হয়। সেই প্রেক্ষীতে বানিজ্য সংগঠন বিধি অনুযায়ী যে সকল প্রতিষ্ঠান ২৩ ডিসেম্বররের মধ্যে ২০২৪ সালের বকেয়া চাঁদা, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স ও আয়কর প্রত্যয়ন পত্র জমা প্রদান করবে শুধু সে সকল প্রতিষ্ঠানই ভোটার তালিকায় অন্তভূক্ত হবে উল্লেখ করে বানিজ্য সংগঠন এর নির্বাচন বিধি অনুযায়ী সম্পূর্ণ নির্বাচন তফসিল প্রণয়ন করা হয়। এর আগে ২৬ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এজিএমে বিগত আওয়ামী লীগের ক্ষমতা থাকা কালিন সময়ে যারা কমিটির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব পালন করেছে তাদের লুটপাট, ওসমান পরিবারের হাতে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রাখা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ পায়। যার দায় ভার বিগত কমিটিতে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরাও এড়িয়ে যেতে পারেন না। তাছাড়া এজিএমে সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রশ্নের মুখোমুখি করা হয় ওসমানদের দোসর নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অবকমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমরা সব কিছুতে বৈষম্যের শিকার ছিলাম। দেখা গেছে অনেকে ব্যবসায়ী না তারাও চেম্বার অব কমার্সের সদস্য বনে গেছে। কিন্তু আমরা যারা ব্যবসা করে আসছি আমাদের কখনো জানানো হয় নাই অমুক দিনে এজিএম হবে। আমরা ব্যবসায়ীরা যদি মনের সুখ দুঃখের কথা বলতে না পারি তাহলে চেম্বার যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। ব্যবসায়ী নেতা যারা হবে তারা যেন ব্যবসায়ীদের ভোটে নির্বাচিত হয়। আরেক ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, ওসমান দোসররা অন্ধকার রুমের ভিতরে বসে কমিটি গঠন করেছে। তাছাড়া চেম্বার অব কমার্সকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যাদের গার্মেনটস নাই তারা সদস্য হয়ে অর্থ লুটপাট করেছে।
বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিতে ব্যবসায়ীদের জিম্মি রেখে যারা এচেটিয়া আধিপত্য তৈরী করেছে তারাই ছিলেন ওসমানদের দোসর। তারা হলেন. দীর্ঘ ১৫ বছর একচেটিয়া ভাবে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সে সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছে ওসমান সম্রাজ্যের উপদেষ্টা তথা তাদের প্রধান দোসর খালেদ হায়দার খান কাজল। তার প্রধান সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ সভাপতি মোশেদ সারোয়ার সোহেল। তাকে দিয়ে খালেদ হায়দার খান কাজল সকল ধরনের চাদাঁবাজি, অপকর্ম বাস্তবায়ন করেছে। এমনকি তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নে প্রধান সহযোগি ছিলেন মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল। তিনি এখনো দাপটের সাথে চেম্বার অব কমার্সে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ওসমানদের দোসরদের অন্যতম ব্যক্তি হলেন, চেম্বার অব কমার্সের সহ সভাপতি সোহান, নাজমুল আলম সজল, তানভীর আহমেদ টিটু, আসিফ হাসান মাহমুদ (মানু), মোঃ এহসানুল হাসান নিপু, পরিতোষ কান্তি সাহা, ফারুক বিন ইউসুফ পাপ্পু, মোঃ সাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, এড. হোসনে আরা বাবলি, শামীম ওসমানের পুত্র ওয়ন ওসমান।
এই পরিষদকে বাতিল করে ভালো ব্যবসায়ীদের নিয়ে নতুন ভাবে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সচতেন মহল। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের ভোটের প্রতিফলনে নতুন নেতৃত্ব করতে চান। যাদের কাছে ব্যবসায়ীরা মন খুলে তাদের মনের কথা বলতে পারবেন।