চাষাঢ়ায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি
লতিফ রানা :
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:৩৭ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার
একটা সময় এই নারায়ণগঞ্জকে কেন্দ্র করেই সমৃদ্ধতা লাভ করে বাংলাদেশ। শত শত বছর আগে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীকে কেন্দ্র করেই এই দেশের শিল্প-বাণিজ্য গড়ে উঠে। নারায়ণগঞ্জের পাট, বস্ত্র ও হস্তশিল্পের সুনাম রয়েছে বিশ্ব জুড়ে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এখনও বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের নেতৃত্ব দিচ্ছে এই জেলা। তাই ছোট্ট এই জেলা শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারণে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ। যার ফলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মসংস্থানের আশায় এই জেলায় এসে ভর করছে লোকজন। তাই শহর জুড়ে বেড়েছে মানুষজনের চলাচলের চাপ।
অথচ ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধ এমন একটি জেলার মূল শহরটি মূলত একটি সড়কের উপর দাঁড়িয়ে আছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত যানজট নিরসনে হিমসিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত সদস্যদের। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। ব্যস্ততম সেই বঙ্গবন্ধু সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চাষাঢ়া, গলাচিপা ব্যাংকের মোড়, ২নং রেলগেট এবং ১নং রেলগেটের কোন অংশেই নেই কোন ফুটওভার ব্রিজ। অথচ এইসব এলাকাগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত কয়েক লাখ লোকের চলাচল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ধনী জেলার তালিকার প্রথম সারিতেই অবস্থান করছে নারায়ণগঞ্জ জেলার নাম। এমন ধনী জেলা শহরের এমন ব্যস্ততম এলাকায় এবং এমন যানজটের শহরে রাস্তা পারাপারের জন্য নেই কোন ফুটওভার ব্রিজ।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যের এক সময়ের কেন্দ্র বিন্দু ছিল টানবাজার ও নিতাইগঞ্জ এলাকা। যার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে উঠা নদী বন্দর এবং দেশের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের জন্য ছিল এখান থেকে একাধিক রেল লাইন। তবে সড়ক পথের এই বঙ্গবন্ধু সড়কই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বর্তমানে মালবাহী রেল গাড়ি চালু না থাকায় এবং সড়ক পথের ব্যাপক উন্নতিসহ দ্রুত মাল সরবরাহের জন্য নদী পথের চেয়ে সড়ক পথের গুরুত্বও বেড়ে যায় বহুগুণ। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটার কারণে শহর সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও বেশিরভাগ পণ্যবাহী যানবাহনসহ শহরের সিংহভাগ মানুষের চলাচলই এই সড়ককে কেন্দ্র করে।
শহরের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে দেওভোগবাসী দবিরউদ্দিন বলেন, এখন মিল-কারখানাগুলো ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে তৈরি হলেও বড় বড় আড়ৎগুলো এখনও রয়েছে টানবাজার ও নিতাইগঞ্জ এলাকায়। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কটি শহরের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ায় বেশিরভাগ অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল, কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন ও শপিংমলগুলোর পুরো চাপ এই সড়ককে কেন্দ্র করেই হয়। তাই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নিতাইগঞ্জ থেকে শুরু করে এদিকে ১ নং রেলগেট, ২ নং রেলগেট হয়ে চাষাঢ়া পর্যন্ত প্রতিদিন না হলেও দশ লাখ লোকের চলাচল। সমস্ত চাপ একটি মাত্র সড়কে উপর পড়ায় এখানে প্রতিনিয়তই যানজট লেগে থাকে। আর এত ব্যস্ততার মাঝেও নারায়ণগঞ্জ শহরের কোথাও নেই কোন ফুটওভার ব্রিজ। বিভিন্ন সময় এলাকার সচেতন মানুষ দাবি করে আসলেও বিভিন্ন অজুহাতে তা এখনও হয়ে উঠছে না।
আমলাপাড়া নিবাসী সাদেকুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের সমস্ত গাড়ি এই একটি সড়ক দিয়েই প্রবেশ করছে আবার সেই একই সড়ক দিয়ে বের হচ্ছে। চাষাঢ়ার গোল চত্বরটি নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য একমাত্র রাস্তা। আপনি আদমজী কিংবা চিটাগাং রোডের যেকোন এলাকা যান এই সড়কই ব্যবহার করতে হবে। আপনি সাইনবোর্ড হয়ে ঢাকা অন্য এলাকায় যান তাও এই সড়কই ব্যবহার করতে হবে আবার আপনি ফতুল্লা-পাগলা হয়ে যেকোন জায়গায় যাবেন তাও সেই একই সড়ক ব্যবহার করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে কর্মজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণের যাতায়াত। রাস্তাটিতে কোন ফুটওভার ব্রীজ না থাকায় একদিকে জনসাধারণকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে সড়ক পারাপার হতে হয়। তেমনি সড়ক পারাপার করতে থাকা মানুষের তীব্র ভীড়ে গাড়িচালকদের এক্সালোটর থেকে ব্রেক কষতে বেশি মনোযোগ দিতে হয়। যার ফলে যানবাহনের ধীরগতির পাশাপাশি নগরজুড়ে সারাদিনই যানজট লেগে থাকে।
খানপুরবাসী আবেদ আলী বলেন, হাসপাতাল, কাঁচাবাজার, পাইকারি মার্কেটসহ যে কোন প্রয়োজন মেটানোর জন্য বেশিরভাগ নগরবাসীকে এই বঙ্গবন্ধু সড়কই ব্যবহার করতে হয়। একটি সড়ককে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠায় সবসময় এখানে যানবাহন ও জনসাধারণের জটলা লেগে থাকে। নারায়ণগঞ্জের সরকারী তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও মহিলা কলেজও এই সড়ককে কেন্দ্র করে যাতায়াত করতে হয়। যার জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ যানজট থেকে মুক্তি ও জনসাধারণের নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য চাষাঢ়া মোড় বা চৌরাস্তাকে কেন্দ্র করে একটি ফুট ওভার ব্রীজ এখন সময়ের দাবী।