বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১   ০৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিসিকের বড় ১০৮ গার্মেন্টসের ঝুট হাতেমের টোকেনে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১১:১৬ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার

# হাতেমের প্রতি অনাস্থা দিয়ে বিকেএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগের ঘটনায় আবারো আলোচনায়
 

 সরকার পরির্বতনের পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিকের শিল্প-কারখানাগুলোর ঝুট সেক্টরসহ সুতার কোন, কার্টুনসহ বিভিন্ন ওয়েস্টেজ পণ্যের ব্যবসা যেগুলো আওয়ামী লীগের ওসমানদের লোকজনের দখলে ছিলো সে সব শিল্প-কারখানাগুলোর সেগুলো নিয়ন্ত্রণে হাত বদল হলে ও পারমিশন নিতে হচ্ছে বা যিনি কাকে দিলে নিজের সুবিধা হবে সেই হিসেবে যিনি বন্টন করছেন তিনি আর কেউ নয়। ওসমান পরিবারের খুবই ঘনিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী সংগঠন (বিকেএমইএ) এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে তাদের দলীয় সন্ত্রাসীরা শিল্প-কারখানাগুলোতে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সব সেক্টর দখল ও চাঁদাবাজি করত। কিন্তু পট পরিবর্তনের সব পালিয়ে গেলে এখন বিসিকের কর্তা বনে গেছেন এই ওসমানদের পছন্দের মোহাম্মদ হাতেম। সরকার পতনের পর এবার মোহাম্মদ হাতেমের হাত ধরেই বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে নব্য সন্ত্রাসীরা এসব শিল্প-কারখানাগুলো দখল ও চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ এই অঞ্চলের শিল্প-কারখানার মালিকদের। 

এ দিকে ফতুল্লা বিসিকে বড়, মাঝারি ও ছোট মিলিয়ে প্রায় ৫০০ তৈরি পোশাক ও নিটিং কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বড় রয়েছে ১০৮টি সবগুলোর ন্যায় বড়গুলো ও মোহাম্মদ হাতেমের দখলেই। তিনি যখন যাকে গার্মেন্টস থেকৈ মালামাল নামানোর পারমিশন দিচ্ছেন তখনই বিএনপির নব্য কিছু নেতাকর্মীরা হাতেমের জয়জয়কার বলে তার কথায় সেগুলোতে মালামাল নামে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, (বিকেএমইএ) এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সাহেবের বলার পরেই বিএনপির কিছু লোকেরা গার্মেন্টস থেকে ঝুটসহ ঝুটসহ অন্যান্য পণ্য কারখানা থেকে বিনা মূল্যে বা নামমাত্র দামে নিয়ে যাচ্ছে সেই বিগত দিনের মতোই।


সূত্র মতে জানা গেছে, ফতুল্লার বিসিক এলাকায় ঝুট ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে ঘুরেফিরে হাতেমের নামটিই ব্যবহার করেন নানাজন। সরকার পতনের পরও গোটা ফতুল্লায় ঝুট ব্যবসার প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন হাতেম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, বিসিক এলাকায় ঝুট ব্যবসা করতে গেলে প্রথম অনুমোদন নিতে হয় হাতেমের। বিসিক এলাকায় ঝুট নিয়ে যেসকল অসন্তোষ শোনা যায় এরপেছনে হাতেমকেই দায়ী করেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে ওসমানদের ছায়া হিসেবে কাজ করেছেন মোহাম্মদ হাতেম। স্বৈরশাসক ও ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু ওসমানদের ছায়ামুক্ত হতে পারেনি বিকেএমইএ। বর্তমানে এই হাতেম নিজের অবস্থান আগামী দিনে ও ওসমানদের সময়ের মতো ভালো জায়গায় রাখতে নেমে গেছেন গার্মেন্টস এর ঝুট সেক্টর বন্টনে। জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীদের নামে মোহাম্মদ হাতেমের কথায় ঝুট নামানো হয়। এদিকে জানা গেছে, হাতেম যাকে পছন্দ করেছেন তাদেরই নাম বিভিন্ন গার্মেন্টস মালিকদের ফোন দিয়ে বলে দিয়েছেন। আর গার্মেন্টস মালিকরা ও মোহাম্মদ হাতেমে জিম্মি থাকায় তাকে ছাড়া কিছুই বুঝছে না। খোঁজ নিয়ে বের হয়ে এসেছে গত ৫ আগষ্টের পর হাতেমের প্রেসক্রিপশনে কারা ঝুটসহ প্রত্যকটি সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন সেখান থেকে কিছু সংখ্যাক তালিকা প্রকাশ করা হলো।


বিকেএমই এর সভাপতি হাতেম বিসিকে এককগুচ্ছ কায়েম করতে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদকে ছোট-বড় মোট ২২টি গার্মেন্টস এর ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেন। সেগুলো হলো, নীট গার্ডেন গার্মেন্টস, লারিব-২, জেমসের গল্লির ২টি গার্মেন্টস, লতিব গার্মেন্টস, তায়েবের গলির সকল, ওইনটেক্সে গার্মেন্টস, বিসিক ডার্চ বাংলা ব্যাংক গলি সবগুলো, রাজিয়া, ফ্্রীডমসহ আরো বেশি কয়েকটি। বর্তমানে এই রাসেল হত্যা মামলায় কারাগারে খাকায় এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন তারই লোক-বাচ্চু, আকাশ, রুহুল, আলতাবসহ আরো বেশ কয়েকজন।  

 

এনায়েতনগর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলামের নামে দেওয়া হয়েছে ৭টি গার্মেন্টসের ঝুটসহ সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করার পারমিশন দিয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম। সেগুলো হলো- এবি এফ গার্মেন্টস, খাতুনসহ আরো কয়েকটি।  এ দিকে ইয়াং ফোর এভার গার্মেন্টসও স্টার লেট গার্মেন্টসের দুইটি শাখার নিয়ন্ত্রণ হাতেম দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের বিশেষ পেশার কিছু লোকদের। সেখান থেকে তারা ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন।  তা ছাড়া হাতেমের ফোনে মহসিন গার্মেন্টস, প্যান্টেক্স, স্কারলেটের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করেন জাকির খানের বড় ভাই কবির খান। জিকু খান পেয়েছেন লারিং এবং জাকির খানের চাচা মনির খানকে দিয়েছেন প্রাউড। তা ছাড়া হাতেম ফোর ডিজাইন গার্মেন্টস দিয়েছেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রনির ভাগিনা ছাত্রদল নেতা রিফাতকে। কথিত এই হাতেম ফকির এপ্যারেলসের সকল মালামাল নামানোর দায়িত্ব দিয়েছেন একটি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের। একই সাথে আওয়ামী লীগের আমলে ও বর্তমানে ও এই হাতেমের মধ্যস্ততায় এনায়েতনগরের একজন নেতার ভাগিনার দখলে রয়েছে ২৯টি নিটিং। এ ছাড়া ও এই হাতেম তার অফিসসহ বিসিকের তার ব্যবসা বানিজ্যে পাহাড়ায় রাখতে যুবলীগ নেতা পরিচয় থাকা রুপম ও ফতুল্লা থানা যুবদল নেতা তাইজুল ইসলাম আলামিনের নামে দিয়েছেন আর-এস-৪ এর প্রতিটি শাখার ঝুটসক সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন এরা। এদিকে ফতুল্লা থানা বিএনপি সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মোহাম্মদ হাতেমের গার্মেন্টস এবি এর থেকে ঝুট নামায়। আর জেবন গার্মেন্টস দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদৎকে। এদিকে বিসিকে আজমেরী ওসমানের ঝুট সন্ত্রাসী রুবেল দেওয়ানের লোক যুবলীগ নেতা প্লাবনকে দিয়ে এখনো বিসিকের বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে বিকেএমই এর সভাপতি হাতেম ফাস্ট ও সেকেন্ড পার্টি হয়ে ঝুট নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ও গত বুধবার মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজা রিপন হাতেমের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে। এদিকে বর্তমানে আরো বেশ কয়েকটি ছোট-বড় গার্মেন্টসের ঝুটসহ সকল প্রকারের মামলামাল নামানো বন্ধ রয়েছে। সেগুলো বর্তমানে হাতেমের দখলেই রয়েছে। সেগুলো দেওয়ার জন্য ও হেভিয়েট নেতা খুঁজছেন (বিকেএমইএ) এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগেও দাপটের সাথে বিসিকের সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন হাতেম জানিয়েছেন  বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। শাসনগাঁও বিসিক মালিকরা তার কথার বাইরে যেতে পারে না বলে অভিযোগ আছে। দীর্ঘ ১৫ বছর বিসিক ঝুটসেক্টরে আওয়ামী লীগের গডফাদার খ্যাত এমপি শামীম ওসমান, তার গুনধরপুত্র ওয়ন ওসমান, প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমান একচেটিয়া ভাবে আধিপত্য ধরে রেখেছে। বিসিক থেকে ঝুট নিতে হলে সবার আগে আজমেরী ওসমান থেকে অনুমতি নিতে হয়। তাদের তিনজনের যে কারো রিকমান্ড নিয়ে বিসিক মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে দেখাতে হয়। হাতেম ফ্যাক্টরী মালিকদের বলে দিলে তখন ঝুট পাওয়া যেত। তিনি সিগ্যনাল না দিলে বিসিক মালিকরা ঝুট দিতে চাইতেন না।


সূত্র জানিয়েছে, হাতেমের উত্থান আশির দশকে তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান নেভি হোসিয়ারি মাধ্যমে। এর আগে তিনি কারও থান কাপড় লাগবে, কার ঝুট লাগবে সেসবের মধ্যস্থতা করে বেড়াতেন । আওয়ামী সরকারের পুরোটা সময়, ব্যবসায়ী নেতা হওয়ার সুবাধে ব্যবসায়ী মালিকদের বিচার শালিস খানা হয়ে উঠে মোহাম্মদ হাতেমের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এমবি নিট ফ্যাশন। প্রতিনিয়ত তার অফিসে বিভিন্ন বিচার শালিস থাকতোই। তিনি গার্মেন্ট ব্যবসায়ী হলেও ঝুট সেক্টরে তার বিশাল প্রভাব তৈরি হয় । বর্তমান তার ইশারায় বিসিকের জ্টু সেক্টর চলে। বিএনপি কিংবা যে কোন ব্যবসায়ী কে জুট পাবে আর কে জুট পাবে না তা নিধারণ করে দেন তিনি। কেননা গত ৫ আগষ্টের পরে ওসমানরা পালিয়ে যাওয়ার পর বিএনপি থেকে শুরু করে ছিঁচকে মাস্তানরা পর্যন্ত বিসিক মালিকদের কাছে গিয়ে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বলে আসে তাকে ঝুট দিতে হবে। আর এনিয়ে বিএনপির দুটি গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ বাধে। যা নিয়ে অস্থিরতা তৈরী হয়। আর মালিকরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এজন্য ঝুট সেক্টরে আধিপত্য বিস্তার করা মোহম্মদ হাতেম মালিকদের কাছে যাকে ঝুট দিতে বলে মালিকরা তাকে ঝুট দিবে। অভিযোগ আছে,  বিগত সময়ে বিসিক ব্যবসায়ীরা হাতেমের কথা না শুনলে বিগত সময়ে আজমেরীর গুন্ডাবাহিনী দিয়ে ওই ফ্যক্টরীর মালিকের প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরী করেন। যার জন্য মালিকদের বাধ্য হয়ে তার কাছে যেতে হয়। তার কথা শুনতে হয়। কিন্তু তিনি নিজেকে সাধু হিসেবে বুঝান।  


এছাড়া মোহাম্মদ হাতেমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সনের ৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীতে এফ কে নিটেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শিপমেন্ট আটকে তা নিজের হেফাজতে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নিট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদ করায় এফ কে নিটেক্সের মালিক ফারুক খান ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মারধর করার অভিযোগও তখন উঠে। তখন অস্ট্রিয়ায় রপ্তানির জন্য এফ কে নিটেক্সের প্রায় ৩ হাজার পিস তৈরি পোশাক বিসিকের ১ নম্বর গেট দিয়ে বের করার সময় হাতেমের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দেন। বিসিক থেকে মালপত্র বের করতে হাতেমের অনুমতি লাগবে বলে জানান তারা। ফারুক খান বিষয়টি ফতুল্লা থানা ও জেলা সমবায় কর্মকর্তাদের জানান। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে গার্ডরা বিষয়টি হাতেমকে জানান। এরপর ১ নম্বর গেটে হাতেম ও তার লোকজনের হাতে মারধরের শিকার হন ফারুক খান ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। তখন ব্যবসায়ী নেতার আড়ালে হাতেমের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রকার্শ্যে আসে। বিসিক শিল্প সমবায় মালিক সমিতির সদস্য পদ না নেওয়ায় পণ্য আটকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ফারুক খানের। তখন এক বছর আগেও তার প্রতিষ্ঠানের একটি শিপমেন্ট আটকে দেওয়া হয়েছিল।
ওই সময়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তখন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ও বিসিক শিল্প মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত রোববার এফ কে নিটেক্সের মালপত্র গেটে আটকে দেওয়ার ঘটনা সত্যি। সমিতির নিবন্ধিত নয়, এমন প্রতিষ্ঠানের মালপত্র আনা-নেওয়া করা যাবে না বলে তিনি দাবি করেন।


বিসিকের ১ নম্বর গলিতে থাকা এফ কে নিটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক খান তখন অভিযোগ করে জানান, মোহাম্মদ হাতেম বেশ কয়েক বছর আগে বিসিক শিল্প সমবায় মালিক সমিতি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ওই সমিতির মাধ্যমে গার্মেন্ট মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছেন। গত বছর এই সংগঠনের সদস্য পদের জন্য ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে একটি ফরম পাঠান। ফারুক খান চাঁদা দিতে না চাইলে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর এফ কে নিটেক্সের দুবাইগামী ৩০ লাখ টাকার শিপমেন্ট হাতেমের লোকজন আটকে দেয়। মূলত গার্মেন্ট মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির জন্যই এ সমিতি করা হয়েছে। এই ভাবে ঝুট সেক্টর থেকে শুরু করে বিসিক মালিক মহলে চাঁদাবাজি করেছেন মোহাম্মদ হতেম।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোহাম্মদ হাতেম ওসমানদের কাছের হওয়ায় তার বিরুদ্ধে তেমন কেউ মুখ খুলার সাহসও পেতেন না। ওসমানদের দোসর হিসেবে বিসিকে তিনি হয়ে যান ব্যবসায়ী মহলের মাফিয়া। আর মাফিয়াতান্ত্রিক ভাবে বর্তমানে তিনি একক ভাবে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন। মালিক মহল থেকে শুরু করে সর্ব মহলের তার আধিপত্য চলছে। অথচ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ব্যবসায়ী মহলে ক্ষোভ প্রকাশ হচ্ছে।


এদিকে গত ২৫ আগস্ট এই পর্ষদ গঠনের তিন মাসের মাথায় সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনসুর আহমেদ এবং ডিরেক্টর খুরশিদ আহমেদ তুনিম। তারা দুইজন ২৮ নভেম্বর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট বরাবর তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। সূত্র জানিয়েছে বর্তমান পর্ষদের আরো বেশ কয়েকজন হাতেমের প্রতি অনাস্থা এনে পদত্রাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পদত্যাগ করা পরিচালনা পর্ষদের দুজন উল্লেখ করেন, ‘একটি ভারী হৃদয় এবং গভীর হতাশার সাথে যে আমরা বিকেএমইএর পরিচালনা পর্ষদের পদ থেকে অবিলম্বে কার্যকরী পদ থেকে পদত্যাগ করছি। এই সিদ্ধান্তটি এতো সহজে নেয়া হয়নি মোহাম্মদ হাতেমের সভাপতিত্বে বর্তমান নেতৃত্বের বিষয়ে আমাদের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের ফলাফল এই পদত্যাগ। আমরা এমন আচরণ লক্ষ্য করেছি, যা আমাদের দৃষ্টিতে স্বৈরাচারী প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে এবং ন্যায্যতা, অখণ্ডতা এবং গণতন্ত্রের নীতিগুলিকে দুর্বল করে, যা আমাদের সংস্থার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপগুলি আমাদের মূল্যবোধ এবং নৈতিক মানগুলির বিরোধিতা করে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের বরাতে তারা উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট মাহাম্মদ হাতেম এবং আরও কিছু সিনিয়র বোর্ড অফ ডিরেক্টর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (আওয়ামী লীগের) ফ্যাসিবাদকে সহযোগিতা করেছিলেন এবং জুলাই-আগস্টের গণহত্যাকে সমর্থন করেছিলেন এবং বিশেষ করে যারা নিরীহ ছাত্র ও সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছিল। 

 

পদত্যাগপত্রে তারা বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং আমার বিবেকের আঁকড়ে ধরে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে যারা এই ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করে, তাদের পাশে আমরা কাজ করব না। তারা বলেন, সামগ্রিকভাবে, আমরা মনে করি, আগামী ৫ ডিসেম্বর ২০২৪-এর জন্য নির্ধারিত (ইজিএম) এবং ২৪ তম (এজিএম-২০২৪) অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। তারা বলেন, আমরা আমার সহকর্মী বোর্ড সদস্যদের প্রচেষ্টাকে গভীরভাবে সম্মান করি এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের সাফল্য কামনা করি। যাইহোক, আমরা বর্তমান নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা এবং সংগঠনের উত্তরাধিকার এবং মূল মূল্যবোধের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব প্রতিফলিত করার জন্য বোর্ডকে অনুরোধ করছি। আমরা আশাবাদী বিকেএমইএ ভবিষ্যতে তার মৌলিক মানগুলি পুনরুদ্ধার করতে পারবে।’ 

 

এ ছাড়া ও চলতি মাসের ১ নভেম্বর বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এলাকায় এম ডব্লিউ স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনে মাদক-চাঁদাবাজী-সন্ত্রাস রোধে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘অনেকেই জোহা পরিবারের চামচামি করে রাজনীতি করেছেন, আপনারা কি আদৌ স্বপ্ন দেখছেন যে সেই পরিবারকে নিয়ে আবারো রাজনীতি আসবে, কখনোই না। এই পরিবারের দুইটা সন্তান ছিল আজমিরী এবং অয়ন ওসমান। তারা কিন্তু কোন দলে নাম লেখায় নি। তাদের রাখা হয়েছিল সন্ত্রাসী এবং অর্থ লুটপাটের জন্য । গিয়াসউদ্দিন ব্যবসায়ী সংগঠন প্রসঙ্গে বলেন, ওয়ান ইলেভেনের আহ্বান যে ব্যবসায়ী সংগঠন করেছিল, সেই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এদের (আজমেরী-অয়ন) সাহায্য করেছে। ওসমান পরিবারের সাথে সমস্ত মিটিং মিছিলে ছিল। আজ তারা ভিন্ন বেশে সমাজে আসতে চায়, এতটা সহজ নয়। অনেকদিন খেলাধুলা করেছেন কিন্তু এখন বিপ্লব হয়েছে, এখন খেলাধুলা করতে এসে লাফ দিলে আপনার হাড়গোড় ভেঙ্গে যাবে। এখানে যে বিকেএমইএ সংগঠন আছে, সেখানকার সাবেক সভাপতি (সেলিম ওসমান) পালিয়ে গেছে। কিন্তু সহ সভাপতি মো. হাতেম এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। 

 

এই হাতেম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রধান দোসর। তার বক্তব্য, বিবৃতি সব আছে। আপনারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যবসা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছেন, মনে রাখবেন বিএনপির সবাইকে একসাথে করে ফেললেও গিয়াস উদ্দিনের মাথা গিলতে পারবেন না। আপনাদের ছাড় দেওয়া হবে না, অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে যারা ভালো নিরীহ তাদের দ্বারা কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি থাকলে বিএনপি বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমার আহ্বান থাকবে এই সমস্ত দালালদের বিতাড়িত করে আপনারা নতুন কমিটি গঠন করেন।'