বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১   ০৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া ভ্রমণ নিয়ে যুবদল নেতা রনির মিথ্যাচার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:০৮ পিএম, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার

শামীম ওসমান ও তাঁর পুত্র অয়ন ওসমান এবং আজমেরী ওসমানের নিয়ন্ত্রনাধীন বিসিকের ঝুট ব্যবসা, জেডএন কর্পোরেশেেনর ইন্টারনেট লাইনের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মিটিং করতে নভেম্বরে সিঙ্গাপুর হয়ে মালয়েশিয়া যান জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। মালয়শিয়ায় অবস্থানরত রনির দুই ভাই ৫ আগস্ট পতনের পর পালিয়ে যাওয়া মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তোলারাম কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ আর সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক  আশরাফুল ইসমাইল রাফেল প্রধানের সাথে এই সংক্রান্ত মিটিং করতেই মূলত রনি মালয়েশিয়া যান বলে জানিয়েছে সূত্র। মূলত বিকিএমইএ’র শীর্ষ পদে আসীন এক নেতার আশীর্বাদে রনি, তার দুই ছাত্রলীগ ভাই রিয়াদ ও রাফেলের স্থলাভিষিক্ত হন। রাফেল প্রধান বৃহত্তর মাসদাইর এলাকা থেকে বিসিক পর্যন্ত অয়ন ওসমানের নিয়ন্ত্রণাধীন জেডএন কর্পোরেশনের ইন্টারনেট লাইন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

 

 আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাফেল প্রধানের আপন ভাই রাসেল, আত্মীয়তার সম্পর্কে ভাই যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি শেল্টারে বর্তমানে হাতবদলের মাধ্যমে সেটি পরিচালনা করে আসছেন। জেডএনের বেশ কিছু ইন্টারনেট লাইন হাতছাড়া হলেও রনির কল্যানে এগুলো অক্ষত আছে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লাইনে ১৫ লাখ টাকার বেশি এই খাতে আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র। তাছাড়া রিয়াদ ও রাফেলের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঠিকাদারীর পদ্ধতি, অন্যান্য উৎস থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আয়ের পদ্ধতি এবং বিসিক এনায়েনগর ও মাসদাইর এলাকার প্রতিষ্ঠানের ঝুট নিয়ন্ত্রণ ও ভাগাভাগি প্রসঙ্গেই আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এনায়েতনগর ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহজাহান মাতবর এবং ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আতাউর মেম্বারের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কের জের ধরে আওয়ামী লীগ আমলে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল রিয়াদ ও রাফেলের। পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের দোসররা পালালেও রনির শেল্টারে এখনো দুই ওয়ার্ডে আগের মতো দাপুটে এই দুই মেম্বার। সর্বশেষ চলতি বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬নং ওয়ার্ডে শাহজাহান মাতবরকে জেতাতে জালভোট দিতে গিয়ে ও কেন্দ্র দখল করতে গিয়ে ধরা পড়েন ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রিয়াদ। তখন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। র‌্যাবের এক অফিসারের শক্ত অবস্থানের বিপরীতে শামীম ওসমান উপস্থিত হলে রিয়াদ বিচারের সুরে বলেন, ‘কুত্তার মতো পিটাইছে”! এসময় কারণ জিজ্ঞাসা করলে র‌্যাব-১১ এর স্কোয়াড্রন লিডার এ কে এম মনিরুল আলম দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘ওদেরকে মারি নাই স্যার। ওরা দেখেন এসব জিনিসপত্র নিয়ে (ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা দেখানো হয়) আসছে। ওখানে ককটেল আছে। তারা এখানেই ছিল। আপনি সবাইকে জিজ্ঞাসা করেন।’ মূলত ওই ঘটনা ছিল সেই এলাকার ঝুট ও ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই মেম্বারকে জেতানো অত্যাবশকীয় হয়ে পড়েছিল।

১ ডিসেম্বর যুগের চিন্তায় ‘ছাত্রলীগ দুই ভাইয়ের ব্যবসা বুঝে নিতে মালয়েশিয়া যুবদল নেতা রনি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে আবারো রোমাঞ্চর এক ঘটনা বেরিয়ে আসে। সমালোচনার মুখে পড়া জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রনি পরবর্তীতে নভেম্বরে তার বিদেশে অবস্থানের কথা অস্বীকার করেন।  তবে ২ ডিসেম্বর চারিদিকে মালয়েশিয়ায় রনির অবস্থানের বিভিন্ন ছবি ভাইরাল হতে শুরু করে, এবং যুগের চিন্তার অনুসন্ধান সত্য বলে প্রমাণিত হয়।

এদিকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে উঁচুতলা ভবনের পাহাড়ি সৌন্দর্যের ভিউ নিয়ে কয়েকটি ছবি তুলেছেন মশিউর রহমান রনি, আরেকটি ছবির পেছনে লেখা শবষঁধৎ, যা মূলত একটি মালয় ভাষা, এটির অর্থ ইমার্জেন্সি এক্সিট। এখানে রনি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সাথে ছবি তোলেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে মশিউর রহমান রনি বিখ্যাত ঘড়ির ব্র্যান্ড ঐঁনষড়ঃ এর কুয়ালামপুরের শোরুমে গিয়েছেন, সেখান থেকে ঘড়ি কিনেছেন এমনকি সেই শো-রুমে ছবিও তুলেছেন। এছাড়া সফরে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুর শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়া শহরে পিংক মসজিদের (পুত্রাজায়া উইলিয়ার প্রধান মসজিদ) এর সামনেও ছবি তুলেছেন। এছাড়া ৩০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে মশিউর রহমান কুয়ালামপুরের হোটেল প্যাভিলিয়নে গিয়েও তার শুভানুধ্যায়ীদের সাথে স্বাক্ষাৎ করেছেন।



এদিকে গোটা মাসদাইর এলাকা এবং রনির শুভানুধ্যায়ী সবাই গত ১০দিনেরও বেশি সময় ধরে মশিউর রহমান রনির বিদেশ সফরের কথা জানলেও রনি তা অস্বীকার করছেন। তিনি বলছেন, তিনি গত ১০দিন ধরে লালমনিরহাট ছিলেন। তবে কয়েকটি পত্রিকায় ইন্টারভিউতে রনি দাবি করেছেন তিনি কোথাও যাননি, তিনি নারায়ণগঞ্জেই ছিলেন।

তবে ১ ডিসেম্বর দুপুরের পর যুবদল নেতা রনির দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, স্যার দেশের বাইরে থেকে একটু আগে ফিরেছেন, বাসায় ফিরে রেস্ট করছেন।

এছাড়া মশিউর রহমান রনির পরিবারের একজন পরিচিতজনদের সাথে দেখা হলেই বলছেন, তার মামা (মশিউর রহমান রনি) বিদেশ থেকে ফিরেছেন। অনেক চকলেট এনেছেন, পেয়েছেন কিনা?

বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ১ ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকেই যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি গাড়িতে চড়ে ঘুরে ঘুরে পরিচিতজনদের মাঝে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা চকলেট বিতরণ করছেন।

মশিউর রহমান রনির অত্যন্ত ঘনিষ্ট বেশ কয়েকজন জানান, ১ ডিসেম্বর দুপুর ১টার আগে গত ১০দিনের বেশি সময় পর্যন্ত রনি কারো সাথে বাংলাদেশী মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা মেসেঞ্জারে সবার সাথে কথা বলেছেন। ১ ডিসেম্বর যুগের চিন্তায় সংবাদ প্রকাশের পর তড়িৎ গতিতে দেশে ফিরে আসেন মশিউর রহমান রনি। যুগের চিন্তায় যেদিন সংবাদ প্রকাশ হয়েছে সেদিন সকালেই কুয়ালামপুর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা করেন রনি। তারা বলেন,  মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুর থেকে বাংলাদেশের ঢাকা আসতে ননস্টপ ফ্লাইটে সময় লাগে মাত্র ৩ ঘন্টা ৫৫ মিনিট থেকে ৪ ঘন্টার মতো। দেশে ফিরেই রনি এয়ারপোর্ট থেকে সোজা দৈনিক যুগের চিন্তা কার্যালয়ে আসেন দুপুর ৩টার পর। এছাড়া তিনি ফোনে জানান, ‘তিনি মাত্র লালমনিরহাট থেকে ফিরেছেন, গত ১০দিন তিনি লালমনিরহাট অবস্থান করছিলেন।’ এসময় তিনি বের হয়ে যাওয়ার সময় রাগে গজগজ করতে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে দিতে সিড়ি দিয়ে নেমে যান। তবে রাতে আবারো যুগের চিন্তা অফিসে এসে বিদেশে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন রনি।

এদিকে যুগের চিন্তায় সংবাদ প্রকাশের পর রনির মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ছবি ভাইরাল হয়। রনি কখনো লালমনিরহাট ছিলেন, কখনোবা মাসদাইরের বাসায় ছিলেন এসব কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। মালেয়শিয়ায় অবস্থানরত ছবিগুলোর বিষয়ে মশিউর রহমান রনির কাছে জানতে চাইলে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ এই সকল ছবি তো থাইল্যান্ডের ছবি! এগুলো পুরনো ছবি, হঠাৎ করে সামনে আসলো কি করে? তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি দেশের বাইরে যাননি।’

এদিকে রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, মাত্র দুইদিন আগের বিষয় যেহুতু ইমিগ্রেশন থেকে রনির দেশের বাইরে যাওয়ার তথ্য জানাটা দূরুহ কোন বিষয় নয়। বিদেশে ভ্রমণ কিংবা জরুরি প্রয়োজনে যে কেউ যেতেই পারেন, তাহলে রনি কেন বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা করছেন? আত্মীয়তার সুবাদে ৫ আগস্ট পতনের পর পালিয়ে যাওয়া মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তোলারাম কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ আর সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক  আশরাফুল ইসমাইল রাফেল প্রধানের সাথে যোগাযোগও হতে পারে। তবে এটি নিয়ে কেন লুকোচুরি করছেন তিনি? জানতে চাইলে যুবদল নেতা রনি যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘তারা আমার ভাই না, তারা শামীম ওসমানের কর্মী। এরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল।’

এছাড়া তিনি বলেন, ‘আমি দেশের বাইরে নভেম্বর মাসে যাইনি। তবে ডিসেম্বরে যাবে ভ্রমণে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং চায়না ভ্রমণের জন্য আমার পাসপোর্ট জমা দিয়েছি। আশা করছি ডিসেম্বরের শেষে এই তিনটি দেশ ঘুরতে যেতে পারবো।’  

কী ছিল ১ ডিসেম্বর যুগের চিন্তায় প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে

সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাসদাইর ও শাসনগাঁও বিসিক এলাকার সকল প্রকারের শিল্প-কারখানাগুলোর ঝুট সেক্টরসহ সুতার কোন, কার্টুনসহ বিভিন্ন ওয়েস্টেজ পণ্যের ব্যবসা যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমান। এ মধ্যে অয়ন ওসমানের অংশটি নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল। এরা প্রকাশ্যে না থেকে তাদের ঘরের আত্মীয় স্বজন চাচাতো ভাই-খালাতো ভাইদের দিয়েই সব নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি এই ঝুটের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানের দুই গ্রুপের মধ্যে মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো কিন্তু পটপরিবর্তনের পর কিছুদিন এলাকায় আত্মগোপনে থেকে পরে পালিয়ে মালেয়শিয়া চলে যান কুখ্যাত এই রিয়াদ-রাফেল।

 

৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল প্রধান। সেপ্টেম্বরের ২৯, ৩০ এবং অক্টোবরের ১ তারিখে তাদের দুজনকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরের হাংতুয়া এলাকার কবহধহমধ চড়রহঃ ঈড়হফড়সরহরঁস এর ৪র্থ তলার রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, রিয়াদ সেখানে প্রায়ই খেতে আসেন।  তবে যাওয়ার আগে বিগত দিনে মাসদাইর-বিসিকে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেলের খালাতো ভাই জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। এ ছাড়া এই যুবদল নেতা রনির মায়ের খালাতো বোনের ছেলে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কুখ্যাত হাবিবুর রহমান রিয়াদ। রিয়াদ ছিলেন নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত ডাকাত পরিবারের আশা ডাকাতের ভাতিজা। বর্তমানে তিনি প্রকাশ্যে না আসলে ও এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের মাধ্যমেই সব নিয়ন্ত্রণ করতেন রনি। এদিকে বিসিকের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রথমে আজমেরী ওসমানের ক্যাডার ঝুট সন্ত্রাস শ্রমিকলীগ নেতা কাইল্লা রকমতের কাছে দ্বারস্ত হন রনি। পরবর্তীতে  দুই ছাত্রলীগের ভাইয়ের মাধ্যমে (বিকেএমইএ) এর এক নেতার দ্বারাস্ত হন আর তাঁর টোকেনে স্থানীয় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ঝুট সেক্টর দখলে নিয়ে তাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে এই যুবদল নেতা রনি। কাউকে ফাস্ট পার্টি আবার কাউকে সেকেন্ড পার্টি বানিয়ে গোটা বিসিক, মাসদাইরের সিংহভাগ ঝুটের টাকাই যায় রনির পকেটে।  

 

এদিকে গণঅভ্যুত্থানের তিন মাস যেতে না যেতে না যেতেই রনির খালোতো ভাই রাফেল ও রিয়াদের সাথে সাক্ষাৎ করতে গত সপ্তাহে টুরিস্ট ভিসায় সিঙ্গাপুর থেকে মালেশিয়ায় যান জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। যা নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে যুবদল তথা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে। সূত্র জানিয়েছে, কুয়ালালামপুর শহরের হাংতুয়া এলাকায় তাদের তিন ভাইয়ের স্বাক্ষাৎ হয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, ঝুট ব্যবসা, ঠিকাদারী ব্যবসাসহ শামীম ওসমানের ক্ষমতায় রিয়াদ-রাফেল যেকল ব্যবসা ও কুকীর্তির নিয়ন্ত্রক ছিলেন সেগুলো বুঝে নিতেই মালয়েশিয়া গিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন রনি।
 
সূত্র বলছে, জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ ও রাফেল মাসদাইর-বিসিক ও তোলারাম কলেজের মাধ্যমেই বিভিন্ন পন্থায় উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা। ছাত্র নয় এমন নেতাও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এদিকে গত জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এসব নেতাদের হাতে দেখা গেছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। গত ৫ আগস্টের পর পটপরিবর্তনে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে মালেশিয়ায় পাড়ি জমালে ও সব সমীকরণ মিলিয়ে মাসদাইর ও বিসিকের ব্যবসায় হাত-বদল হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একই পরিবারের হাতে। এদিকে বিগত দিনে রিয়াদ ও রাফেলের নিয়ন্ত্রাধীন মাসদাইরে ছুরি ঘুরাতেন ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদের চাচাতো ভাই অনিক প্রধান, তার ভাই অমিত প্রধান, রিয়াদের আরেক চাচাতো ভাই সুমন প্রধান, ভাই সিয়াম প্রধান, হিমেল প্রধানসহ রিয়াদের চাচা জসিম প্রধান ও রিয়াদের বাবাসহ এলাকায় নানা অত্যাচার করতেন। এদিকে কিছুদিন পূর্বে দানিয়াল হত্যায় এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও রয়েছে। এ ছাড়া বিগত দিনে যুবদল নেতা রনির মৃত্যু দুলা ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধু লীগের মহানগর শাখার সভাপতি এবং তিনি ছিলেন বিসিকের অন্যতম ঝুট সন্ত্রাসদের মধ্যে একজন। বিগত দিনে তারই ছোট ছেলে সিফাত ছাত্রলীগের পদ নিয়ে রাফেল ও রিয়াদের সাথে বিসিকের ৩০টি নিটিংয়ের ঝুট নিয়ন্ত্রণ করতেন। পট পরিবর্তনের পর ছাত্রলীগ মামার পিছু ছেড়ে এসেছেন যুবদল নেতা মামার ছায়াতলে আর নিয়েছেন ২৯টি নিটিং।

 

 এদিকে রনির ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণে অন্যতম বাধা হিসেবে ছিলেন ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদ। যাকে ঘিরে গত (২৯ আগষ্ট) রনির ঘনিষ্ঠ নেতা ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর ও এনায়েতনগর ইউনিয়েনর ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিরাজের নেতৃত্বে দুই শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে বিসিকের সংঘর্ষ চালান। যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বর্তমানে সিরাজ ও জাহাঙ্গীরকে মশিউর রহমান রনি দায়িত্ব দিয়েছেন ব্যাবসায়ী নেতা হাতেমের সাথে থাকতে। যাকে ঘিরে সিরাজের নামে রনি নিয়েছেন ৭টি গার্মেন্টসের ঝুটসহ সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ আর সেটার টোকেন দিয়েছেন সেই বিকেএমইএর শীর্ষ নেতা। সেগুলো হলো- এবি এফ গার্মেন্টস, খাতুনসহ আরো কয়েকটি। তা ছাড়া বর্তমানে মাসদাইর এলাকায় রনির ভাই রুবেল, এনায়েতনগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি জুম্মন ও তার বাবাসহ এনায়েতনগরের ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মাসদাইর রেখেছেন দখল। আর বর্তমানে তিনি সেজেঁছেন দোয়া তুলসিপাতা। তা ছাড়া এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির নামে ফকির এপারেলসের ঝুট নিয়ন্ত্রণ করেন রনি। যা গত বুধবার মাল নামলে ও এখনো হয়নি হিসেবের ভাগ সকলের একটাই কথা রনি বিদেশ থেকে আসলেই, টাকার ভাগ হবে। বর্তমানে মাসদাইর ও বিসিকের নিয়ন্ত্রণে অন্যতম ভয়ঙ্কর রূপে রয়েছে যুবদল নেতা রনি।