মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাঙচুর, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০১:৩১ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার
বন্দরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি থাকায় সেখানে ভাঙচুর চালিয়েছে যুবদলের একদল কর্মী। বুধবার দুপুরে বন্দর থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন কবিরের নেতৃত্বে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই সময় কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে উচ্চবাচ্য করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমাণ্ডার কাজী নাছিরউদ্দিন বলেন, “যুবদলের নেতা-কর্মীরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে উচ্চবাচ্য করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর কিছু ঐতিহাসিক ছবি দেওয়ালে ছিল, সেগুলো নামিয়ে ভাঙচুর করে। আগেই দেওয়াল থেকে নামিয়ে রাখা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিগুলো ভেঙে বাইরে ফেলে দেয়। ভেতরে কিছু চেয়ারও ভাঙচুর চালায় তারা।”
এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এক দফায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। কমপ্লেক্সের এলইডি টিভিও লুট করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনও’র সামনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন বলে জানান নাছিরউদ্দিন।
সভাশেষে বন্দর ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান ও বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শনও করেন। তারা থাকাবস্থায়ই যুবদলের নেতা-কর্মীরা সেখানে জড়ো হয়। ইউএনও এবং ওসি চলে যাবার পরপরই ভাঙচুর শুরু হয় বলে অভিযোগ ওই মুক্তিযোদ্ধার।
তবে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘ইউএনও এবং ওসি উপস্থিত থাকার সময়ই কমপ্লেক্স ভবনের ভেতর ঢুকে যান হামলাকারীরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে সরকারি অফিসাররা সেখান থেকে বেরিয়ে গেলে তারা ভাঙচুর শুরু করে। কমপ্লেক্সের ভেতরে শেখ মুজিবুর রহমানের কংক্রিটের প্রতিকৃতিও বড় হাতুড়ি দিয়ে ভাঙে।’
এই ঘটনার একটি ভিডিওতে যুবদল নেতা হুমায়ূন কবির তার অনুসারী কর্মীদের নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবিগুলো ভাঙচুর করতে দেখা যায়। ভবনের ভেতরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে উচ্চবাচ্যও করছিলেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
পরে যুবদল নেতা হুমায়ূন কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুপুরে ইউএনও এবং ওসিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে প্রবেশ করতে দেখি। ওই সময় আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে প্রবেশ করতে চাইলে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। তখন আমরা ভেবেছি এখানে কোন গোপন সভা হচ্ছে। পরে ভেতরে ঢুকে দেখি মুক্তিযোদ্ধা সংসদে এখনও ফ্যাসিষ্ট হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানো। যাদের হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত তাদের ছবি এখনও কেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদে টানানো থাকবে? আমরা ছবিগুলো নামিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছি। এর বেশি কিছু হয়নি।’
এদিকে, মুক্তিযোদ্ধা নাছিরউদ্দিন বলেন, ‘শেখ হাসিনার ছবি আগেই নামিয়ে আমরা গোডাউনে রেখেছিলাম। তারা সেখান থেকে বের করে ভাঙচুর করেছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানোর কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই নামানো হয়নি।’
জানতে চাইলে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কমপ্লেক্সের ভেতরে ভাঙচুর করা হয়েছে, ব্যাপারটি এমন না। আসলে ভাঙচুর করার মতো তেমন কিছুই নেই। কেননা ৫ আগস্ট সেখানে একবার হামলা হয়েছিল। সেখানে কিছু ছবি ছিল, আচ ওই ছবিগুলো বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিকৃতিটিও আগে ভাঙা হয়েছিল। আজ তার উপরেই কয়েকটা বাড়ি দিয়েছে বলে শুনেছি।’
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ছবিগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এই বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ না করলেও কমপ্লেক্সের চাবিটি পুলিশের কাছে রয়েছে। পরে দায়িত্বরতদের কাছে দেওয়া হবে।’ এন. হুসেইন রনী /জেসি