ঝুট সেক্টর থেকে সব বাণিজ্যিক জায়গায় এখনো ওসমান দোসররা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১১:২৫ এএম, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ সোমবার
# সিটি কর্পোরেশনে বিভিন্ন কর্মকর্তারা আযান দিয়ে লুটপাট করছেন
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব রফিউর রাব্বী বলেন, শেখ হাসিনা এবং তার প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে ওসমানদের পুরষ্কৃত করেছে আর ওসমান পরিবার কি করেছে তারা বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ক্লাব-সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এইগুলো যেমনি দখল করেছে, দখল করেছে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গাগুলো। এই ফুটপাত থেকে শুরু করে বাজার,হাঁট, ঘাট সমস্ত কিছু দখল করেছে। সমস্ত জায়গায় যে চাঁদাবাজি হয় সবকিছু দখল করেছে। ঝুট সেক্টর থেকে শুরু করে সমস্ত বাণিজ্যিক জায়গাগুলোতে তারা তাদের লোকজন বসিয়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছে। হাজার হাজার লক্ষ্য কোটি টাকা লুটপাট করে তারা বিদেশে পাঠিয়েছে। আজকে চিহ্নিত এই ওসমান পরিবারের কয়েকজন দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও এই ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় যে চেলাচামুন্ডা ছিল এই নারায়ণগঞ্জে সেই দুর্বৃত্তরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে।
গতকাল রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪১ মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দেশে বিচার-ব্যবস্থাকে যে ভাবে ধ্বংস করে রেখেছে তার উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন এখনো হয় নাই। দেশে সকল ধর্মের, সকল মত ও পথের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এখনো বাধা রয়েছে। দেশে অর্ধ-শতাধিক মাজার ও খানকা ভাঙ্গা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় লালন অনুসারিদের মেলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এ বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। দেড়-দুই হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণদান, পাঁচ শতাধিক চিরতরে অন্ধ হয়ে যাওয়া, সতের হাজার আহত হওয়ার বাংলাদেশ বিচার হীনতার বাংলাদেশ হতে পারো না। শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার নির্দেশে সাড়ে এগার বছর ত্বকী হত্যার বিচারটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করতে চাই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই এই যে ১৫ বছরের লুটপাট আমরা সবাই দেখেছি আপনারাও দেখেছেন আপনারা তাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে ১৯শে আগস্ট শামীম ওসামান গং তাদের আত্নীয় স্বজন নিয়ে, তাদের বাহিনী নিয়ে খুনিদের নিয়ে এই যে অস্ত্রসহ গুলি করতে করতে যে মিছিল করল সেটা তো দেখেছেন? এর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই এবং এই খুনের মিছিলের মধ্যে যারা ছিলো আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই তাদের মধ্যে থেকে কাকে, কোন ব্যক্তিটিকে এখন অব্দি গ্রেপ্তার করেছেন? শুধু তা নয় শামীম ওসমান গং-এর, শামীম ওসমানের সহযোগী কোন ব্যক্তিটিকে আইনের আওতায় এনেছেন? ওসমান পরিবারের লুটপাটের অংশীদার কাকে আইনের আওতায় এনেছেন? আনেন নাই। আমরা কিভাবে আপনাদের উপর বিশ^াস রাখতে পারি। আজকে আমরা অরাজকতা পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য মাঠে ছিলাম। আজকে নারায়ণগঞ্জের অরাজক পরিস্থিতি কি পরিবর্তন হয়েছে ? এই ফুটপাথ দখল করে হকাররা যেমনি ছিল এখন রাস্তার মাঝখানে পর্যন্ত তারা এসে গেছে। রাস্তায় হাঁটা পর্যন্ত যায় না। বিষয়টা কি এই? এইটি অনিয়ন্ত্রিত, এটি সমাধান অযোগ্য, এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়না? আমরা তো দূর্গা পূজার সময় দেখেছি এই যে ষষ্ঠী থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত এই পাঁচ-ছয়দিন তো আপনারা ঠিকই এই জায়গাটাকে যানজট মুক্ত রেখেছেন এখন কেন রাখছেন না? সমস্ত জায়গায় আমরা সেই হরিলুট, লুটপাট এখনো পর্যন্ত দেখতে পারছি।
তিনি বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনে হরিলুট চলছে। নারায়াণগঞ্জের এই সিটি কর্পোরেশনের সিও খেকে শুরু করে সেই জায়গার ইঞ্জিনিয়ার, বিভিন্ন কর্মকর্তারা আযান দিয়ে লুটপাট করছেন। এই পরিবর্তনের জন্য মানুষ রক্ত দিয়েছে? আপনারা কি মনে করেছেন? এই যে দুই হাজার ছাত্র-যুবক রক্ত দিলো, পাঁচ শতাধিক ছাত্র-যুবক চিরতরে অন্ধ হলো, চিরতরে পঙ্গু হয়েছে ১৭হাজার আপনাদের এই লুটপাট করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য? যে ওসমান বাহিনী চলে যাবে আপনারা আবার নতুন করে গজিয়ে উঠবেন? কি পরিবর্তন হয়েছে? আমরা তাই বলতে চাই এইযে শুধু বুলি আউলিয়ে লাভ নাই এর পরিবর্তন চাই এবং এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা ত্বকী শুধু নয় তক্বীসহ আমাদের আশিক, চঞ্চল, মনু, সাগর, রুনি, তনুর সকল হত্যার বিচার চাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, গণসংহতি আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সিপিবি শহর সাধারণ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী বিকু, বাসদ জেলা সংগঠক এসএম কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।