সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বহিষ্কার
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০২:৫৩ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার
# সাংবাদিক মিনহাজ আমানকে শারীরিকভাবে আঘাত এবং লাঞ্ছিত করে বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়
# সেন্ট্রাল থেকে খবর নিলাম ও প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর সত্যতা জানতে পেরেছি : মাজেদুল ইসলাম
সাংবাদিক মিনহাজ আমানকে মারধর করার ঘটনায় বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ইকবাল হোসেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। গতকাল (১৩ ডিসেম্বর) শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ইকবাল হোসেন দলবল নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক মিনহাজ আমানকে শারীরিকভাবে আঘাত এবং লাঞ্ছিত করেছেন। যা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ইকবালকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনকে নিয়ে বিএনপির এই বহিষ্কারাদেশের অনুলিপি বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদুল আলম বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু, নজরুল ইসলাম আজাদ, জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বরাবর পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় অনুসারীদের নিয়ে বাস ভাঙচুরের পর চালককে মারধর করেন ইকবাল। এ সময় ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হন বাসযাত্রী সাংবাদিক মিনহাজ। মারধরের শিকার ওই বাস চালকের নাম মো. নয়ন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকার গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয় আসিয়ান পরিবহনের একটি বাস। সায়েদাবাদ এলাকায় যানজটে গাড়ির সামনে হঠাৎ একটি মোটরসাইকেল এসে থামলে দ্রুত ব্রেক করেন চালক। এতে গাড়িতে থাকা যাত্রীদের ঝাঁকুনি লাগে। এ নিয়ে ওই বিএনপি নেতা চালককে ধমক দেন। তখন চালক পাল্টা তর্ক জুড়লে বিএনপি নেতা চালককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে গাড়িটি সানারপাড় এলাকায় এলে আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষমাণ ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক গাড়িটির গতিরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে তারা চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে এনে মারধর করেন। ওই গাড়িতেই ফিরছিলেন ফতুল্লার বাসিন্দা মিনহাজ আমান। বাস ভাঙচুর ও চালককে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ জানালে তাকেও চর-থাপ্পর দেয় ওই বিএনপি নেতার লোকজন।
এ সময় লোকজন জড়ো হলে ইকবাল তার একটা ভিজিটিং কার্ড চালককে দিয়ে বলেন, তোর বাপেগরে জানাইস কে পিটাইছে।’ এরপর কর্মী বাহিনী নিয়ে স্থান ত্যাগ করেন ইকবাল। পরে ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়নি। চালক বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছিলেন। প্রতিবাদ করায় চালক আমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। তখন তাকে ভদ্র ভাষায় কথা বলতে বলেছি।
ঘটনার সময় একজন সাংবাদিককে হেনস্তার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিষয়টির জন্য তিনি ওই যাত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সাংবাদিককে হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম)’। বিবৃতিতে মিনহাজ আমানকে একজন ফ্যাক্টচেকিং সাংবাদিক উল্লেখ করে বিজেআইএমের আহ্বায়ক স্যাম জাহান ও সদস্যসচিব ফয়সাল মাহমুদ এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে মিনহাজ আমান নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল আমাকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছে। বাসায় আসতে চাচ্ছে, আমি না করে দিয়েছি। তিনি বলতে চাচ্ছেন, আমার ‘পরিচয়’ দেওয়ার দরকার ছিল। তাকে বলেছি আপনার লোক আপনারই সামনে একজন সাধারণ নাগরিকের গায়ে হাত দিয়েছে যে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। কোনো পরিচয়ের ইস্যু এটা না এবং দল হিসেবে বিএনপির কী ক্ষতি হচ্ছে সেটাও তার বোঝা উচিত। তিনি আরও বলেন, আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু সেই রক্তাক্ত ড্রাইভারের বা সেই ভাঙা বাস মালিকের কী হবে; সে ব্যাপারে আমার জানা নাই। পুরো বিষয়টা থেকে শিক্ষনীয় হচ্ছে, বেইনসাফি হলে আওয়াজ করুন। নিরব থাইকেন না। আপনি একা না।
সাধারণ সম্পাদকের বহিস্কারের বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে বলেন, ঘটনা কি হয়েছিলো এখনো আমি সে বিষয়ে অবগত নয়। কিন্তু সেন্ট্রাল থেকে খবর নিলাম ও প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম ইকবালকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির বহিষ্কারাদেশের পর সর্বশেষ ফেসবুক স্ট্যাটাসে মিনহাজ আমান লিখেন, ‘যদিও আমি সাংবাদিক নই, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লিখি, গবেষক বললে খুশি হতাম।’
পুরো ঘটনার বিষয়ে জানতে বহিষ্কার হওয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।