ওসমানদের কালো থাবা থেকে মুক্ত হচ্ছে না.গঞ্জ ক্লাব
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০২:৫৮ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার
বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা কালিন সময়ে ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে একচেটিয়া ভাবে ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। শুধু এলিট শ্রেণির এই ক্লাব নয়, নারায়ণগঞ্জের সর্বত্রে ওসমান পরিবার মাফিয়াদের মত করে সকল সেক্টর দখল করে সেখানে নিজেদের রাজত্ব চালিয়েছে। যেখানে তারা নিজেরা বসতে পারে নাই সেখানে ওসমান সম্রাজ্যের একান্ত অনুগত সদস্যকে বসিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়ে করেছে। ওসমান পরিবারের অবৈধ আয়ের অন্যতম সেক্টর ছিল ঐতিহ্যবাহিী নারায়ণগঞ্জ ক্লাব। ক্ষমতাচ্যুত সরকার আওয়ামী লীগের আমলে এই ক্লাবের সভাপতি পদ দখল করে রেখে ছিলেন শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটু। টিট্রু বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মাদককারবাড়ি থেকে শুরু করে সকল ধরণের অপরাধ জগত এখানে বসিয়ে চালিয়েছে। ওসমানীয় সাম্রাজের্য বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান নাই। তবে গত ৫ আগষ্টের পরে পুরো ওসমান পরিবার কিংবা ওসমান সম্রাজ্যের সন্ত্রাসী খ্যাত অপরাধীরা পালিয়ে গেলেও নানা জায়গায় তাদের প্রেতাত্মা এখনো রয়ে গেছে। তাদের মাধ্যমে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান সহ তাদের সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সেক্টর ধরে রাখার জন্য তারা আড়ালে থেকে এখনো বিভিন্ন সংগঠনে খবরদারি চালাচ্ছেন। সেই সাথে তাদের লোক বসিয়ে নিজেদের ভাগের টাকা পর্যন্ত নিতে চাচ্ছেন। তাদের অন্যতম অপকর্মের মাধ্যমে আয়ের সেক্টর ছিল নারায়ণগঞ্জ ক্লাব। ইতোমধ্যে এই ক্লাবের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ওসমানরা আড়ালে থেকে কোন চক্রান্ত করছে কিনা বিষয়টি নজরদারী রাখার দাবি ক্লাবের সদস্যদের।
এদিকে দীর্ঘ দিন যাবত এই ক্লাবটি ওসমান সম্রাজ্যের অন্যতম মাফিয়া শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর নিয়ন্ত্রণে থাকায় এই ক্লাবে সরাসরি ভোটের মাধ্যে সবকটি পদে নির্বাচন হয় নাই। ক্লাবের সদস্যদের অভিযোগ বিগত সময়ে ওসমানদের হাতে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবটি জিম্মি থাকায় এখানে কোন নেতৃত্ব কিংবা ভোটারা তাদের পছন্দের মানুষকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারেন নাই। দীর্ঘ ১৫ বছর পরে ভোট দিয়ে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার সুযোগ পেয়েছে ক্লাবের ভোটাররা। তবে ক্লাবের সদস্যদের মাঝে বলাবলি হচ্ছে সাবেক এমপি সেলিম ওসমান কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষ হয়ে ফোন দিয়ে অনেককে ভোট দেয়ার জন্য বলছেন। কিন্তু ক্লাবের সদস্যরা ওসমান পরিবারের দাসত্ব করার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন।
অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, আগামী ২১ ডিসেম্বর সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব নির্বাচনে সভাপতি পদে ১ নং ব্যালট নাম্বার নিয়ে ভোটারদের আস্থায় রয়েছে জুলফিকার স্টীল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড এর চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রশিদ জুয়েল। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ রি রোলিং মিলস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়া ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসি এর সাধারণ সদস্য। তার বিপক্ষে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি এম সোলায়মান । ৫ আগস্টের পর যদিও তিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তাছাড়া এর আগেও তিনি সভাপতি হিসেবে ছিলেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মারুফ আহম্মেদ ও ইকবাল হাবিব। সহ সভাপতি পদে রয়েছেন আমিরুজ্জামান মৃধা, সাইদুল্ল হৃদয়,খাজা এবাদুল হক প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া সদস্য পদে দিলারা মাসুদ ময়না,হারুনুর রশিদ, জাহিদ হোসেন,আব্দুল কাদির মাহবুব, কাজী আব্দুস সাত্তার, কৌশিক সাহা, তাইজুদ্দিন আহম্মেদ, সেলিম রেজা সিরাজি, ইন্দ্রজিৎ সাহা প্রার্থী হিসেবে রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রাচরনায় নেমে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়ে প্রচারনায় চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই ২১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ ক্লাব নতুন নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছেন। তবে দীর্ঘ দিন এলিট শ্রেণির এই ক্লাবের সদস্যরা জিম্মি ছিলেন। কিন্তু এবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরী হতে যাচ্ছে। কিন্তু তারা এখন আগের মত ওসমানদের দাসত্য মেনে নিতে চান না। তাছাড়া ওসমান পরিবার আড়ালে থেকে এখনো ক্লাব নির্বাচন নিয়ে কলকাঠি নাড়বে তাও দেখতে চান না। ক্লাবের সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে ওসমান পরিবারের হাতে থাকা জিম্মি হতে এলিট শ্রেনীর এই ক্লাবটি মুক্ত করতে চান। সেই সাথে দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ করে স্বচ্ছতার জায়গায় ক্লাবকে জবাবদিহিতার আওতায় ফিরিয়ে আনতে চান।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি তানভীর আহম্মেদ টিটু নিয়মিত কাবিখা প্রকল্পের মত ক্লাবকে ব্যবহার করেছে। যেখান থেকে প্রতি নিয়ত বিভিন্ন নামে বেনামে টাকা সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।তাছাড়া বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতির পদ দখল রেখে প্রতারনা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তানভীর আহম্মেদ টিটু। তাছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঠেকাতে ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে বের হয়ে অস্ত্র নিয়ে গুলি বর্ষণ করেন আন্দোলন কারীদের উপর। যার ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না শর্তে জানান, গত ১৫ বছরে জনপ্রতি ১৮ লক্ষ করে টাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ৪শ সদস্য করেছে তানভীর আহম্মেদ টিটু। যা প্রায় ৭০ কোটি টাকা হিসেবে দাঁড়ায়। কিন্তু শামীম ওসমানের শ্যালক এখানকার চেয়ারে বসে তাদের কার্যালয়ের মত করে ব্যবহার করায় ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এই ক্লাবেও হামলা, লুটপাট চালান দুর্বৃত্তরা। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ডিজিটাল ভবন নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদারের সাথে ৪৬ কোটি টাকা কন্ট্রাক্ট করলেও পরে তাকে ৭১ কোটি টাকা দেয়ার নাম করে এখান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই ভদ্রলেবাসধারী টিটু। তাই এবার নির্বাচনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে চান ক্লাবের সকল সদস্যরা।