না.গঞ্জ ক্লাব নির্বাচন
আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০১:০৭ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ রোববার
এমন আনন্দমুখর পরিবেশ বহু দিন পর দেখছে ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সদস্যরা। কোন ভয়-শঙ্কা-হানাহানি কুৎসা রটনা ছাড়াই চলছে জমজমাট প্রচারণা। প্রার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের মন জয় করার জন্য। ক্লাবের নানা উন্নতি আর সদস্যদের নানা সুযোগসুবিধাবৃদ্ধির আশ^াস দিচ্ছেন।আগামী ২১ ডিসেম্বর ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচন। নির্বাচনে ১১টি পদের মধ্যে একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, একজন জুনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আটজন পরিচালক। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে এম সোলায়মানের সাথে মো. মাহবুবুর রশিদ জুয়েল। সব ভোটারদের নজর এই দুইজনের দিকে। এম সোলায়মান হাজী হাসেম স্পিনিং মিলের ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে গত ৩বার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাংলাদেশ রি রোলিং মিলস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রশিদ জুয়েল। এবারের নির্বাচনের বিশেষত্ব কোন ধরণের কুৎসা রটনা ব্যতিত এবং কোন ধরণের চাপ ব্যতিত প্রার্থীরা ভোট চাইছেন। ভোটাররাও এই পরিবেশ পেয়ে অত্যান্ত খুশি।
নির্বাচনে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইকবাল হাবিব ও মারুফ আহমেদ বাবু, জুুনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মো. সাইদুল্লাহ হৃদয়, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুজ্জামান মৃধা, খাজা এবায়দুল হক টিপু, এবং সদস্য পদে পরিচালক পদে এড. ইন্দ্রজিৎ সাহা দীপক, দিলারা মাসুদ ময়না, হারুন-অর-রশিদ, খান আব্দুল কাদির মাহবুব, কাজী আব্দুস সাত্তার, কৌশিক সাহা, মো. জাহিদ হোসেন, মো. তৌহিদুল ইসলাম খান, তাইজুদ্দিন আহমেদ, সেলিম রেজা সিরাজী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লি. নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম সানি, সদস্য আলহাজ্ব সাইফুল আলম, কুতুবউদ্দীন আহমেদ, এডভোকেট মো. রাকিবুল হাসান শিমুল, মোহাম্মদ হোসেন মিঠু এবং নির্বাচন আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান এড. মো. জাকির হোসেন, সদস্য মো. নবী হোসেন, খন্দকার মাহাবুব হোসেন (বাবু) ।
সজ্জন ও নির্ভেজাল লোক হিসেবে এম সোলায়মান নির্বাচনে ভোটারদের কাছে বিগত দিনে তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তুলে ধরছেন। এবং তিনি ঘোষণা দিয়েছে আগামী ৩ মাসের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের কমিউনিটি সেন্টারটি চালু করবেন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাথে আমার আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এখানকার যারা সদস্য তাদের প্রত্যেককেই আমি আমার পরিবারের অংশই মনে করি। আর আমার এই কৃতজ্ঞতা থাকার কারণও আছে। ১৯৯৮ সালে আমি যখন প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সদস্য পদে নির্বাচিত হই, তখন মাত্র ২৫০ জন সদস্য ছিল। ক্লাবের ফান্ডের অবস্থাও তেমন ভালো ছিলনা। কিন্তু আমি সুযোগ পাওয়ার পর সকলের সাথে মিলেমিশে ধারাবাহিকভাবে ক্লাবের উন্নয়নে কাজ করি। ক্লাব সদস্যরা বারবার আস্থা রেখেছেন বলেই আমি তিনবার জুনিয়ার ভাইস প্রেসিন্ডেন্ট, তিনবার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং তিনবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। আমি ক্লাবটির উন্নয়নে সবসময়ই সম্পৃক্ত ছিলাম। ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ক্লাবটির সুইমিং পুল নির্মাণ কনভেনয়ারিং কমিটিতে ছিলাম। পুরনো কমিউনিটি সেন্টারটি যখন হয় তখন আমি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। ৬ জন্য সভাপতির সাথে আমি ক্লাবের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ৫ আগস্টের পর ক্লাবের সংস্কারে যখন আমাকে সদস্যা দায়িত্ব দেন আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি ক্লাবটিকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য। ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব পালন নিয়ে এম সোলায়মান বলেন, ক্লাবের ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে ক্লাব স্টাফদের অবদান সব সদস্যই একবাক্যে স্বীকার করবেন। কেননা ২৭০ জনের বেশি স্টাফ যাদের বেতন আনুমানিক ৪৭ লাখ টাকার মতো, তাদের সাথে যখন শলাপরামর্শ করি, তারা বলেছেন, তারা অর্ধেক বেতন নিয়ে হলেও ক্লাব দ্রুত চালু হওয়া পর্যন্ত তাদের কাজ চালিয়ে যান। তাদের এই ৪ মাসের ত্যাগের কারণেই ক্লাবটি দ্রুত চালু করা গেছে। তিনি বলেন, এর সাথে আরেকটি কথা না বললেই নয়, ৫ আগস্টের পর ক্লাবের সদস্যরা যে যেভাবে পেরেছেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ক্লাবের ফান্ডের বাইরে যে যেভাবে পেরেছেন ব্যক্তিগতভাবে অর্থায়ন করে, বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে ক্লাবটিকে দ্রুত সচল করার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন। এজন্য আমি তাদের সকলের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। ৫ আগস্টের পর এখন অবধি যত হিসাব আছে আসন্ন এজিএমে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সকল হিসেব দিয়ে দিবো।
এম সোলায়মান বলেন, যদি ক্লাবের সম্মানিত সদস্যরা আমার উপর আস্থা রাখেন, আমি সুযোগ পাই সেক্ষেত্রে প্রথম কাজটি হবে আগামী তিনমাসের মধ্যে ক্লাবের কমিউনিটি সেন্টারটি চালু করে ফেলা। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাব সবসময়ই স্নুকার, টেনিস এবং সুইমিংয়ে বিভিন্ন ক্লাবের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম সারির পুরস্কার জেতে। আমি চাইবো, এই ধারাটি যাতে সবসময় অব্যাহত রাখতে পারি। এই খেলাগুলোতে যাতে সবসময়ই আমরা জেতার রেকর্ডটা ধরে রাখতে পারি। যদি নির্বাচিত হয়ে সুযোগ পাই তবে, ক্লাবের সদস্যদের জন্য খাবারের মানটা উন্নত করার চেষ্টা করবো, ক্লাবের ডিসিপ্লিনটা ঠিক করার ব্যাপারে কাজ করবো। ক্লাব মেম্বারদের সুযোগ-সুবিধার দিকটা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও কাজ করবো। ক্লাবের ফান্ডে নয়, মেম্বারদের ব্যক্তিগত ফান্ডে আমেরিকা, সিঙ্গাপুরসহ দেশে ও বিদেশে নানা বিনোদন প্রোগ্রামের আয়োজন করবো। এম সোলায়মান বলেন, যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটি হচ্ছে আমাদের ক্লাবের লাইব্রেরিটা পুড়ে গেছে। আমি এই নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্লাব সদস্যদের বলতে চাই, আগামী ৩ মাসের মধ্যেই আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নের আমি ক্লাবের লাইব্রেরিটা আগের রূপে ফিরিয়ে এনে চালু করবো। ক্লাবের সদস্যরা যদি প্রয়োজন মনে করেন, ক্লাবের উন্নয়নের স্বার্থে আমাকে প্রয়োজন; আমি অবশ্যই আমার অভিজ্ঞতা এবং স্পৃহা দিয়ে ক্লাব সদস্যদের এই ভরসার মূল্যায়ন দেয়ার চেষ্টা করবো। বিগত দিনেও আমি সেই কাজটিই করেছি।
অপরদিকে আরেক সভাপতি প্রার্থী বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রশিদ জুয়েল বলেছেন, আমি ২০১২ সনে এই ক্লাবের নির্বাচনে ডিরেক্টর পদে নির্বাচন করে নারী-পুরুষ সকল ভোটারদের আস্থা অর্জন করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দক্ষতা এবং স্ব্চ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করি। তখন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ক্লাব সদস্যদের ভোটে আমি নির্বাচিত হই। দীর্ঘ দিন পরে ক্লাবের সকল সদস্যরা নিজেদের ভোট প্রয়োগ করতে পারবে। সেই সাথে তাদের মতপ্রকাশের জায়গাটা ফিওে পেতে যাচ্ছে। আর এজন্য তারা তাদের পছন্দের মানুষকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবে। সেই হিসেবে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নারী-পুরুষ সহ নবীন প্রবীনের পছন্দের জায়গায় আমি আছি বলে বিশ্বাস করি। তাছাড়া স্বাধীন ভাবে কাজ করার এখন পরিবেশ তৈরী হয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় সম্মানিত মেম্বারদের অটুট রাখতে চাই। সেই সাথে এই নির্বাচনে ক্লাবের সদস্যরা স্বাধীন ভাবে ভোট প্রয়োগ করে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তি নির্বাচিত করতে পারবে। তবে আমাকে সুযোগ করে দেয়া হলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনবো। পিছনের কোন অন্যায় থাকবে না। আমি চাই আমাদের সম্মানিত ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটুক। নতুন ভবনের কাজ দ্রুততার সাথে শেষ করাই হবে আমার প্রধান কাজ। এছাড়া কমিউনিটি সেন্টারকে দেড় মাসের মাঝে কার্যক্রম চালানোর উপযোগী করে গড়ে তোলা, ক্লাবের সেবার মান, খাদ্যের মান বৃদ্ধি করার দিকে মনোযোগি হবো আমি।
ক্লাবের পুনর্গঠন নিয়ে জুয়েল বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে, সুইমিংপুল তার নিজস্ব অর্থায়নে হয়েছে, জীম পুনর্গঠন হয়েছে যারা জীম করে তাদের নিজস্ব অর্থায়নে। এখানে ক্লাব কোন প্রোভাইড করে নাই। এছাড়া ক্লাবের নামাজের স্থান পুর্নগঠন হয়েছে ক্লাবের সদস্যদের অনুদানের টাকায়। প্রতিটি জায়গায় আমি বিশাল এমাউন্টের একটা অর্থ দিয়েছি। অর্থাৎ ক্লাবকে পুনর্গঠন করতে গিয়ে ক্লাবের সকল মেম্বাররা বিভিন্ন ভাবে এগিয়ে এসে সহযোগিতা করেছে। এখানে কারো একক প্রচেষ্টায় পুনর্গঠন হয় নাই। আমাকে যদি এখানকার দায়িত্বে আনা হয় পিছনের সকল অনিয়মকে জবাব দিহিতার আওতায় আনা হবে। সেই সাথে অসম্পূর্ণ কাজ গুলো শেষ করার জন্য আমি কমিটেড। প্রিয় ক্লাবকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো এটা আমার প্রত্যয় ছিল। আগামীতেও ক্লাবের প্রয়োজনে অনুদান করবো তাতে কোন পিছপা হবো না।