বুধবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৪ ১৪৩১   ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আজ মহান বিজয় দিবস

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১২:১০ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ সোমবার

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫৩তম বর্ষ। হাজার বছরের গর্বিত বাঙালি জাতির বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন। যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদ্যাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনৈতিকগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্থরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে।


বিজয় দিবসের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 


রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তাবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ- মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে-ইনশাআল্লাহ।’ তিনি বলেন, ‘বিজয়ের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল জাতীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যাঁরা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমি আরো স্মরণ করি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাদেরকে। জাতি তাঁদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।’


প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আজকের এই দিনে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহিদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে।’ আগামীকাল বিজয় দিবসের প্রাক্কালে দেয়া এই বাণীতে তিনি বলেন, দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।’


বিজয় দিবসকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গৌরবময় ও স্মরণীয় দিন হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘লাখ লাখ শহিদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।’ প্রধান উপদেষ্টা ‘বিজয় দিবস ২০২৪’-এর সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।


দিবসটি উপলক্ষে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।


এ ছাড়াও দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।


আজ সোমবার বিকালে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। 


চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর; ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ) ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির বিভিন্ন ঘাট এবং চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বিজয় দিবস উলক্ষে দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। সিনেমা হলে বিনামূল্যে প্রদর্শিত হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র।


সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনে কার্যালয় থেকে জানানো হয়, আজ সূর্যোদয়েরর সাথে সাথে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সেই সাথে চাষাড়া বিজয় স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। প্রশাসন, পুলিশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ বিজয়স্তম্ভে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। এই দিন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, সায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকাল ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউজে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এর পাশাপাশি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১১টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী অডিটরিয়ামে নারায়ণগঞ্জ‘র শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। দুপুর ১টার দিকে স্থানীয় সকল হাসপাতাল, জেলাখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, ডে কেয়ার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সরকারি শিশু পরিবার ও আশ্রয় কেন্দ্রে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। বিকেল ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন বনাম জেলা প্রশাসন প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
 
বিজয় দিবসে দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে থাকছে-চাষাড়ায় শহীদ জিয়া হল প্রাঙ্গনে বিজয় মেলা, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইন্সটিটিউটে শিশুদের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন সিনেমাহল ও উন্মুক্ত স্থানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা টিকেটে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচিত্র প্রদর্শনী ও শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে দিনব্যাপী কর্মসূচী পালন করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন বিএনপি  ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সেই সাথে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিজয় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

সোমবার সকাল ১০টায়  রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটের সামনে থেকে বিজয় র‌্যালি বের করবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। সকাল ৯টায় শহরের মিশনপাড়া হোসিয়ারি সমিতি মিলনায়তনের সামনে থেকে বিজয় র‌্যালি বের করবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। সকাল ৯ টায় ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে সমাবেশ ও বিজয় র‌্যালি বের করবে ফতুল্লা থানা বিএনপি। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের বিজয় র‌্যালি বের হবে। বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ থেকে জেলা যুবদলের বিজয় র‌্যালি বের হবে।