৩’শ শয্যা হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের রামরাজত্ব
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১১:০৯ এএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ রোববার
খানপুরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ৩০০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল একটি সরকারি হাসপাতাল। এই সরকারি হাসপাতালটিতে থাকা কোনো এক অদৃশ্য শক্তি বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণার মাধ্যমে রোগীদেরকে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। সেই অদৃশ্য হাতের নাড়াচাড়ায় সৃষ্ট বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে দালাল সিন্ডিকেট অন্যতম। কিন্তু একটা ব্যাপার বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এই হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও রোগীদের কপালে জোটে না। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভিড়ে কোনটা সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বুঝা দায়। হাসপাতাল সরকারি হলেও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের দাপটে রোগী নিতে পারে না সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। ফলে রোগীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন-তিনগুন টাকা। এ যেন এক মগের মুল্লুক।
এদিকে সরজমিনে দেখাগেছে এই সরকারি হাসপাতালটি একেবারেই অরক্ষিত হয়ে পরেছে। জরুরী বিভাগের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স একেরপর এক সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে। সিরিয়াল মেন্টেন করে ড্রাইভার টিপ মারছে। কিন্তু রোগীরা জানেনা যে অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া করা হয়েছে সেটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না। এর কারন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভিড়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া মুসকিল।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভাররা সব সময় হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিচরন করে থাকে তাই টিপ মারতে পারেনা সরকারি গাড়ী এমন অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে বেসরকারি অর্থাৎ বহিরাগত গাড়ি যেমন: হাইএস, নোয়া, মাইক্রো কে মডিফাই এর মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্স-এ রুপ দিয়ে সেই গাড়িগুলো দিয়ে রোগী বহন করা হয় এবং রোগীদের থেকে যা ভাড়া তার থেকে দ্বিগুন-তিনগুন বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। এদের মধ্যে আবার প্রকারভেদও রয়েছে এসি এবং নন এসি। অর্থাৎ, অ্যাম্বুলেন্স-এ এসি থাকলে নন এসির তুলনায় বেশি ভাড়া দিতে হবে। নন এসির ভাড়াও সরকারি যে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার তালিকা তার থেকে দ্বিগুন। এছাড়াও দেখা যায় জরুরি বিভাগ এর সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স এর ড্রাইভার, হেল্পারদের সিন্ডিকেট। এরাই উচ্চভাড়া নির্ধারন করেন, কোন ট্রিপে কত ভাড়া আদায় করতে হবে, সিরিয়ালের কোন গাড়িটা কোনটার পরে যাবে, ভাড়া একদাম না দরদাম সকল কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছে কে? এমন প্রশ্নের উত্তর চাইতে গিয়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরের কেউই কথা বলতে চায় নি।
অন্যদিকে দেখা যায়, এই হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে মোট দুইটি। এই দুইটি অ্যাম্বুলেন্স এর মধ্যে দেখাশোনার অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে একটি এবং অন্যটিও পরিত্যক্ত প্রমাণ করার জন্য করোনা ভ্যাক্সিন ইউনিটে ফেলে রেখেছেন উক্ত হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।
আমরা যারা বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সুস্থ হওয়ার লক্ষ্যে হাসপাতালে যাই, গিয়ে প্রায়ই লক্ষ্য করে থাকি যে অবস্থা গুরুতর হলে বা হাসপাতালে চিকিৎসা না থাকলে আমাদের ঢাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়। তখনই অ্যাম্বুলেন্সের টপিক আসে। এই টপিকে বিভিন্ন রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি এবং বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের যে পার্থক্য রয়েছে তা অধিকাংশ রোগীরা জানেনই না।
যারা জানেন তাদের মধ্যে থেকে শফিক মিয়া বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে গলা কাটা ভাড়ায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে হয়েছে। এত বড় সরকারি হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে না তা খুবই কষ্টকর বিষয়। আমাদের বাধ্য করা হয় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স এ রোগী বহনের জন্য। জরুরি বিভাগের সামনে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স খাকবে এটাই কিন্তু স্বাভাবিক। কিন্তু দেখেন ভাই ওই মাথা থেকে এই মাথা পর্যন্ত শুধুই বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। আর সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ফালাইয়া রাখছে চিপায় চাপায়।
জামিল বলেন, তেল থেকে চুন খসলেই জরুরি বিভাগ থেকে তারা ঢাকা পাঠিয়ে দেয়। এগুলো সব জরুরি বিভাগের স্টাফদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চক্র থেকে বাড়তি টাকা খাওয়ার লোভে করা অবৈধ ফন্দি ফিকির। আমরা তো আর বুঝি না কোনটা সরকারি আর কোনটা বেসরকারি। আমরা ভাবি আমাদের রোগী কিভাবে দ্রুত সুস্থ হবে। তদের সাথে দামাদামি কেন করেন না? এমন প্রশ্নে তারা বলেন তাদের সাথে দামাদামি করলে তারা রাগ করেন। আর এই ড্রাইভার সিন্ডিকেট এর একজন রাগ করলে সবাই রাগ করেন। কেউ আর রোগী ধরেন না। বাহির থেকে অ্যাম্বুলেন্স আনতে গেলে তারা ঢুকতে দেন না। ঢুকতে দিলে তাদের রাগ ভ্যালুলেস (মূল্যহীন) হয়ে পরবে। সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালের রোগীরা এইসকল উদ্ভট ঝামেলার জন্য বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স এ যেতে বাধ্য হয়।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে হাসপাতালের ভেতরে অদৃশ্য একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। উচ্চমূল্যে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি এম্বুলেন্স বা অন্যান্য ভাড়া গাড়ির দিকে।
খানপুর সরকারি হাসপাতালে সকাল থেকে রাত অব্দি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স এর সমারহ দেখা যায় এদের বিরুদ্ধে আপনি কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন ? এমন প্রশ্নে খানপুর ৩০০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাসার বলেন, আমি এদের প্রতিনিয়তই বলি যে আপনারা আপনাদের অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের ভিতরে রাখবেন না। তারা আমার কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে হাসপাতালের ভিতরেই বারবার চলে আসে। কয়েকবার অভিয়ান চলেছে এ বিষয়ে। কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা। তারা এখনো আছে। আমি চেষ্টা করছি তাদের সরানোর জন্য, আর ভিতরে গ্যারেজ করছি আমার অ্যাম্বুলেন্সগুলো ভিতরে রাখবো। তারপর সরকারি ভাবে একদম সরিয়ে ফেলবো।
আচ্ছা আপনি থানায় ফোন দিলেই তো হয়, তারা তাৎক্ষণিক বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন, ফোন কি দেওয়া হয়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেই, পুলিশ আসে তাদের সরিয়ে দেয় কিন্তু তারা চলে গেলেই আবারও তারা হাসপাতালের ভিতরে চলে আসে। এবার একটু ভালভাবে করতে হবে। আশা করি তাদেরকে সরকারি ভাবেই সরাতে পারবো।