
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কের ফুটপাত দখল করে থাকায় জনভোগান্তি
বাংলাদেশের যেকোন শহরেই হকার সমস্যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি মাথ্যা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য এই সমস্যা শহরের সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা। স্থানীয় সচেতনমহলের মতে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে যদি হকারদের সরিয়ে নেওয়া যায় তাহলে শহরকে অচল করে দেওয়ার মতো যে সমস্যা অর্থাৎ যানজটও প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। যদিও অনেকেই হকারদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন যুক্তি তর্ক দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে পড়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তাদের অনেকেই মানবতার চেয়েও আর্থিক লব্দিকে পুজি করে এধরণের অবস্থান নিয়ে থাকেন।
ফুটপাত থেকে হকারকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র আইভী ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটে। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলার নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা এই হকার সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের ফুটপাতকে হকারদের দখলমুক্ত করার বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহলের দীর্ঘদিনের দাবী। মানববন্ধন, মতবিনিময় সভা, গোল টেবিল বৈঠক এবং জেলার বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে নিরসনের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। হকার শুধু বাংলাদেশেই নয় বিভিন্ন দেশের রাস্তায়ই হকার দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু অন্যান্য দেশে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে হকারদের এই ব্যবসা চলে। তাদের দেশে হকারদেরও দায়িত্ব নিয়ে বসতে দেখা যায় যে তাদের বসার কারণে সাধারণ মানুষের চলাচলে কোনো প্রকার সমস্যাসহ হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার হতে হয় কি না। তবে আমাদের দেশের হকারদের বসার মধ্যে নিয়মের কোন বালাই নেই। তারা মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ ক্রেতাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। নারী ক্রেতাদের সাথে আপত্তিকর ব্যবহার করে বলেও বিভিন্ন সময় অভিযোগ আছে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উৎকোচ দিয়ে বসে বলে তাদের দাপটও থাকে প্রচন্ড। অন্যদিকে হকারদের কাছ থেকে বিশাল আর্থিক লব্দির কারণে এসব রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করে বলেও সচেতন মহলের অভিযোগ।
শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে হকারদের সরিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বিকল্প স্থানে জায়গা করে দেওয়া যেতে পারে। তাদের মতে শিল্প ও বাণিজ্য সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ জেলার এরকম ছোট্ট অথচ জনবহুল একটি জেলা শহর, যেখানে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ঘনত্ব অনেক বেশি। সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা সীমিত। মাত্র একটি সড়কের উপর ভিত্তি করে এই শহরের সকল ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সরকারী বেসরকারী অফিস-আদালতের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয় এবং এটাই এই শহরের মূল সড়ক হিসেবে পরিচিত। অথচ এই সড়কটিতেই কেন হকারদের বসতে হবে!
এর আগে বিভিন্ন সময় বিষয়টি সমাধানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা-লেখিসহ বিভিন্নভাবে দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারিও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে শহরের ফুটপাতে হকার না বসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। যেখানে সবসময় পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থাকা তৎকালীন মেয়র ও সাংসদও শহরের এই সড়কটিকে ফুটপাতমুক্ত রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেছিলেন। একই বছরের ৮ এপ্রিল বিকেএমইএ ভবনে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে মেয়র আইভী হকার সমস্যা সমাধানে আবারও শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এছাড়া যুগের চিন্তার গোলটেবিল বৈঠকেও এই হকার ও যানজট সমস্যা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সাথে এক মতবিনিময় সভায় এই হকার সমস্যার সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়। বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। এমনকি তিনি শুধু কাগজে কলমে নয়, বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করেন। তাই নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তার কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে একটি দৃষ্টান্ত রাখবেন নারায়ণগঞ্জবাসীর অভিভাবক নারায়ণগঞ্জের সদ্য নিযুক্ত জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা।